বিকৃত তথ্যের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমই মূল হাতিয়ার

প্রতীকী ছবি

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। মানবাধিকার সুরক্ষা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে এটি জরুরি। বিকৃত তথ্যের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমই হলো মূল হাতিয়ার। অথচ করোনাকালে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এটা এমন একসময়, যখন তথ্যের অবাধ প্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ।

আর্টিকেল নাইনটিন আয়োজিত ‘গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকারের সুরক্ষায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা’ শীর্ষক এক অনলাইন সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। কানাডিয়ান হাই কমিশন ও ব্রিটিশ হাই কমিশনের সহযোগিতায় গতকাল বুধবার সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

মুক্ত গণমাধ্যম নিশ্চিতকরণ, সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও মানবাধিকার নীতিমালা অনুসারে সমতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আরও দৃঢ় অঙ্গীকার প্রয়োজন বলে মত দেন বক্তারা।

আগামী ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় গ্লোবাল কনফারেন্স অন মিডিয়া ফ্রিডম ২০২০-কে সামনে রেখে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা অবসানের আন্তর্জাতিক দিবস-২০২০ উপলক্ষে এ পরামর্শ সভা আয়োজিত হয়। এতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ঝুঁকি মোকাবিলায় করণীয় এবং গণতন্ত্র নিশ্চিতে গণমাধ্যমের ভূমিকাবিষয়ক বিভিন্ন দিক উঠে আসে। সভায় সাংবাদিক, মিডিয়া সংগঠন, আন্তর্জাতিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক মিশন ও দূতাবাস, শিক্ষাবিদ, আইনজ্ঞ, ব্লগার, মানবাধিকার কর্মীসহ গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ, তৃণমূল সাংবাদিক, তরুণ নেতৃত্ব ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো বলেন, করোনার সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং ধর্ষণের মতো অপসংস্কৃতি রোধ করে মানবাধিকার রক্ষায় গণমাধ্যম মূল ভূমিকা পালন করে। গণমাধ্যম এসব কিছুর অবসানে ব্যক্তিগত, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সচেতনতা তৈরি করে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার বলেন, ‘সাংবাদিক ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যম আমাদের সত্য জানতে সহায়তা করে। এটি কখনো কখনো অপ্রীতিকর এবং মেনে নেওয়া কঠিন। স্বাধীন গণমাধ্যম অসহায়ের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে, অবিচার প্রকাশ করে এবং নেতৃত্বের জবাবদিহি নিশ্চিত করে।’

ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির সময় মানুষের জীবন রক্ষায় তথ্য সরবরাহ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে গণমাধ্যম।

সাংবাদিক এবং আর্টিকেল নাইনটিনসহ সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংস্থাগুলোকে সমর্থন ও সহায়তা দিয়ে যাবে ব্রিটিশ সরকার।

অনুষ্ঠানে কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনোয়া প্রোফোঁতেইন বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, ভয় দেখানোসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। তথ্যভিত্তিক সঠিক সিদ্ধান্ত প্রণয়নের জন্য একটি শক্তিশালী ও কার্যকর গণমাধ্যমব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে অপরিহার্য।

বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সাংবাদিকের সুরক্ষা, নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং তথ্যের অধিকার খর্ব হওয়ার প্রবণতার বিষয়টি প্রাধান্য পায় সভায়। বাংলাদেশে একটি মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, গণমাধ্যমের সুরক্ষা ও নাগরিক অধিকারের জন্য স্বীকৃত সাধারণ মান হিসেবে নাগরিক সমাজ, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে ‘ঢাকা ঘোষণাপত্রের’ একটি খসড়া তৈরি করে আর্টিকেল নাইনটিন। পরামর্শ সভার বিভিন্ন বিষয় ও মতামতগুলো খসড়ায় সন্নিবেশিত করা হয়। চূড়ান্ত ঘোষণাপত্রটি ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সুপারিশ হিসেবে অনুষ্ঠিতব্য গ্লোবাল কনফারেন্স অন মিডিয়া ফ্রিডম’-এর দ্বিতীয় আয়োজনে উপস্থাপিত হবে।

আর্টিকেল নাইনটিন বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করছে এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের কার্যকারিতা ও নাগরিক অধিকারের প্রসারে বাধা হিসেবে কাজ করছে।

কানাডিয়ান হাই কমিশনার বেনোয়া প্রোফোঁতেইন ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসনের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। সঞ্চালনা করেন ফারুখ ফয়সল। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জেরেমি ব্রিউয়ার, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, বাংলাদেশে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্দ্রা বারগ ভন লিনডে।

প্রসঙ্গত, আর্টিকেল নাইনটিন যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তা নিশ্চিতে কাজ করে আসছে। সংস্থাটি ২০০৮ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় এর কার্যক্রম শুরু করে।