বিজিবিতে নিয়োগ পেলেন ৯৭ জন নারী সৈনিক

বিজিবিতে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পাওয়া নারী সৈনিকদের কুচকাওয়াজ। গতকাল সকালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বাইতুল ইজ্জতের বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড স্কুলের প্যারেড মাঠ থেকে তোলা ছবি l জুয়েল শীল
বিজিবিতে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পাওয়া নারী সৈনিকদের কুচকাওয়াজ। গতকাল সকালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বাইতুল ইজ্জতের বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড স্কুলের প্যারেড মাঠ থেকে তোলা ছবি l জুয়েল শীল

সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) প্রথমবারের মতো যোগ দিয়েছেন নারীরা। গতকাল রোববার সকালে বিজিবির ৮৮তম ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশ নেন ৯৭ জন নারী সদস্য। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাইতুল ইজ্জতের বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড স্কুলের প্যারেড মাঠে এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চলা এ কুচকাওয়াজে নারীদের পাশাপাশি ১ হাজার ৪৭ জন পুরুষ সৈনিকও অংশ নেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সৈনিকদের অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ ও বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড স্কুলের কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আনোয়ার শফিক।
কুচকাওয়াজ শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৮৮তম ব্যাচের সদস্যদের সফলভাবে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার জন্য অভিনন্দন জানান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিজিবির ইতিহাসে আজ একটি স্মরণীয় দিন। কর্মক্ষেত্রে নানা পেশায় পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণ ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করার লক্ষ্য বিজিবিতে প্রথমবারের মতো নারী সৈনিকদের যাত্রা শুরু হলো। এই নারী সৈনিকেরা বিজিবির কর্মকাণ্ডে একটি নতুন অধ্যায় সূচিত করবে।

নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিজিবির চারটি মূলনীতি মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতায় উদ্বুব্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব সুন্দর ও সুচারুভাবে পালন করতে হবে। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিজিবির প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সীমান্ত প্রহরার মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষা করা। প্রত্যেক সৈনিককে প্রতিকূলতার মাঝেও থাকতে হবে সুদৃঢ়, নির্লোভ ও নির্ভীক।

৮৮তম ব্যাচের নবীন সৈনিকদের মধ্য থেকে কুচকাওয়াজ, শারীরিক উৎকর্ষ, ফায়ারিং ও সব বিষয়ে সেরাদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সেরা পুরুষ সৈনিক হয়েছেন মো. ফজলুল করিম ও সেরা নারী সৈনিক জাহানারা আক্তার। গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সৈনিকদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে নতুন সৈনিকেরা শারীরিক কসরতের মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজ, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন পর্ব দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করেন।

কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে এয়ার উইংয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু দুর্গম এলাকা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সেখানে নতুন নতুন বিওপি (সীমান্তচৌকি) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সীমান্তরক্ষীরা সেখানে কাজ করছেন। এসব বিওপিতে হেলিকপ্টারে করে যেতে হয়। দ্রুত সেখানে যাওয়ার জন্য এই এয়ার উইংয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হচ্ছে। এ ছাড়া দুর্গম এলাকাগুলোতে চলাচলের রাস্তা তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সাংসদ আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী ও চন্দনাইশের সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এ ছাড়া সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও বেসামরিক প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।