বিদ্যালয়ের ফটকে রাজাকারের নামফলক!

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর উচ্চবিদ্যালয়ের ফটকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তালিকাভুক্ত রাজাকার জলিল বসুনিয়ার নামফলক অপসারণের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসহ ছয়জন।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হারুন-অর-রশিদ (৫০), সদস্য শফিকুল ইসলাম বসুনিয়া (৫০), দাতা সদস্য আনোয়ারুল হক বসুনিয়া (৫৬), আজীবন দাতা সদস্য সুরেন্দ্র নাথ রায় (৭০), মুক্তিযোদ্ধা মেহের আলী (৬০), মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম (৬২) এবং শহীদ পরিবারের সদস্য ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি মিনহাজুল হক (৪৫) যৌথভাবে আবেদনটি করেছেন।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি সূত্রে জানা যায়, মহেন্দ্রনগর উচ্চবিদ্যালয়ের ফটকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ লালমনিরহাট সদর উপজেলা কমান্ডের তালিকাভুক্ত (১৬ নম্বর) রাজাকার জলিল বসুনিয়ার নাম বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বসুনিয়া দুই মাস আগে বিদ্যালয়ের নামফলকের নিচে টাইলস দিয়ে স্থায়ীভাবে স্থাপন করেন। মোস্তাফিজুর রহমান বসুনিয়া জলিল বসুনিয়ার ছেলে।
আবেদনপত্র সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বসুনিয়া কোনো রকম আলোচনা না করে পিতা জলিল বসুনিয়ার নামফলকটি বিদ্যালয়ের ফটকে স্থাপন করেন। পরিবারটির প্রভাব ও প্রতিপত্তির কারণে এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। এখন রাজাকারদের বিচার ও সাজা হওয়া শুরু হলে বিদ্যালয়টিকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য জলিল বসুনিয়ার নামফলক ফটক থেকে সরানোর দাবি জানানো হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রথীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই বিদ্যালয়ের গেটের নামফলকের নিচে তাঁর পিতা জলিল বসুনিয়ার নামফলকটি স্থাপন করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠার সময় এক একর জমি দিয়ে জলিল বসুনিয়া প্রতিষ্ঠাতা হয়েছেন। অন্য প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের দেওয়া জমিসহ বিদ্যালয়টির নামে মোট তিন একর জমি আছে। ২০১২ সালে তোরণ নির্মাণ করার পর দুই মাস আগে জলিল বসুনিয়ার নামটি সেখানে স্থাপন করা হয়।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘ইউনিয়ন ও পৌরসভার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে পাওয়া রাজাকারের নামের তালিকা যাচাইবাচাই করে ২০১০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তালিকাটি প্রস্তুত করে প্রকাশ করা হয়। তালিকার ১৬ নম্বরে থাকা রাজাকার জলিল বসুনিয়ার নাম বিদ্যালয়ের গেটে স্থাপন করা দুঃখজনক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী।’
এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম ক্ষোভের সঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, জলিল বসুনিয়া একজন পরিচিত রাজাকার। তিনি ১৯৭১ সালে মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও খান সেনাদের দোসর পিস কমিটির ইউনিয়ন সভাপতি ছিলেন। তাঁর নাম বিদ্যালয়ের গেটে স্থাপন করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে মুক্তিযোদ্ধার পরিবর্তে একজন রাজাকারের নামের সঙ্গে পরিচিত হতে বাধ্য করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আবেদনটি পেয়েছি। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে মোস্তাফিজুর রহমান বসুনিয়া বলেন, ‘১৯৬৮ সালে আমার বাবা ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে আমার বাবা রাজাকার ছিলেন না। ১৯৬০ সালে বিদ্যালয়টি আমার বাবা প্রতিষ্ঠা করেন, তাই আমি তাঁর নাম বিদ্যালয়ের গেটে স্থাপন করেছি।’
এ ব্যাপারে কমিটির অপর সদস্যদের সঙ্গে কেন আলোচনা করেননি—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলার দরকার আছে বলে মনে করিনি।