বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৬০ শতাংশ অব্যবহৃত: সিপিডি

প্রতীকী ছবি

বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার অধিকাংশ অলস পড়ে থাকছে। বিদ্যুৎ না নিলেও চুক্তি অনুযায়ী কেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রেখে টাকা দিতে হচ্ছে। এটি ‘ক্যাপাসিটি পেমেন্ট’ হিসেবে পরিচিত, যা বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে লোকসানের চক্র থেকে বের হতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

বিদ্যুৎ খাত নিয়ে তুলে ধরা গবেষণা নিবন্ধে এমনটাই জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। আজ রোববার অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে গত ১৬ মে উৎপাদিত বিদ্যুতের হিসাব উল্লেখ করে সিপিডি বলেছে, উৎপাদন সক্ষমতার ৬০ শতাংশ অব্যবহৃত। অধিকাংশ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়নি ওই দিন। ক্যাপাসিটি পেমেন্টের জন্য কোনো কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার ইউনিটপ্রতি ব্যয় হয়ে যায় দেড় হাজার টাকা। তাই ২০৩০ সাল সামনে রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পরিবর্তন করা দরকার।

ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন তুলে ধরেন সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র আরও আগেই অবসরে যাওয়ার কথা ছিল, সেগুলো কেন এখনো চালু আছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অব্যবহৃত থাকার জন্য বিতরণব্যবস্থার দায় কতটুকু, তা খুঁজে দেখা দরকার।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ম তামিম বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা নিয়ে শুভংকরের ফাঁকি আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব বেশি বাড়তি সক্ষমতা নেই। তবে সামনে চলে আসতে পারে। তাই চাহিদা উৎপাদনের প্রক্ষেপণ ভালো করে করা উচিত। বিদ্যুৎ খাতে জার্মানি, কোরিয়া, চীন বা ইউরোপের কোনো মডেল নয়, দেশের জন্য নিজস্ব মডেল তৈরি করতে হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ক্যাপটিভ পাওয়ার (শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ) জাতীয় গ্রিডে আনা হলে সক্ষমতা ও সরবরাহের মধ্যে পার্থক্য কমে আসবে। এটি নিয়ে কাজ হচ্ছে। আর সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনে সমস্যা আছে, এটা ঠিক। যৌক্তিক কারণেই শুরুতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে দুই বছর ধরে সঞ্চালন ও বিতরণে জোর দেওয়া হচ্ছে।

বিদ্যুৎ খাতে দক্ষ বিনিয়োগ হলে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে এবং ভোক্তারাও সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ পাবে।
মোস্তাফিজুর রহমান, সিপিডির ফেলো

ওয়েবিনারে শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ খাতে দক্ষ বিনিয়োগ হলে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে এবং ভোক্তারাও সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ পাবে।

বিদ্যুৎ খাতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে কিছু সুপারিশ করা হয় সিপিডির নিবন্ধে। এতে বলা হয়, কয়লাভিত্তিক ৯টি কেন্দ্রে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রকল্পের কোনো বরাদ্দ পাওয়ার কথা নয়। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত। একক প্রকল্প হিসেবে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে রূপপুরে। ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। এতে প্রকল্পের ৫৩ শতাংশ কাজ শেষ হবে। অতিরিক্ত সক্ষমতার মধ্যেও দ্রুত বাস্তবায়নের এ প্রকল্প ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হলে অতিরিক্ত সক্ষমতা বাড়বে। এ প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে তা নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।

জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ সালের বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বরাদ্দ ধরে বিভিন্ন বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয় সিপিডির নিবন্ধে। এতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) এডিপি বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ। এটি এডিপির গড় অগ্রগতির চেয়ে বেশি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের অধীনে ১০২টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ হবে আগামী বাজেটে। এর মধ্যে ৪০টি প্রকল্প আগের অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। নতুন করে সময় বাড়িয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৩৫টি প্রকল্প এ মেয়াদে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আর ২৬টি প্রকল্প চলমান। নতুন প্রকল্প যুক্ত হয়েছে একটি।

বিদ্যুৎ খাতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে কিছু সুপারিশ করা হয় সিপিডির নিবন্ধে। এতে বলা হয়, কয়লাভিত্তিক ৯টি কেন্দ্রে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রকল্পের কোনো বরাদ্দ পাওয়ার কথা নয়। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত।

সিপিডির নিবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ২০২৫ সালের মধ্যে এটি ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা আছে সরকারের। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাত গুরুত্ব পায়নি। নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) আওতায় নতুন কোনো বিনিয়োগ নেই। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে আসার কথা শোনা গেছে কিন্তু বাজেটে তা প্রতিফলিত হয়নি। চলতি বাজেটের মতো আগামী বাজেটেও বিদ্যুৎ বিভাগের নগদ সহায়তা লাগবে ৯ হাজার কোটি টাকা। নগদ ঋণ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পিডিবি হচ্ছে সবচেয়ে বড়। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতেই এর বড় অংশ ব্যয় হবে।

আজ সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয় পৌনে দুইটা পর্যন্ত ওয়েবিনারে আলোচনা করেন বক্তারা। এতে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, বাড়তি উৎপাদন ক্ষমতা সরকারের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। উৎপাদন বাড়লেও আনুপাতিক হারে সঞ্চালন ও বিতরণে সক্ষমতা বাড়ছে না।

ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এতে আরও বক্তব্য দেন স্রেডার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, ইডকলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ মালিক, ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান করিম প্রমুখ।