
১৯৮৫ সালে পেশায় যোগদানের এক মাসের মধ্যে চিকিৎসক জাকির হোসেনের মা স্ট্রোক করে মারা যান। তাঁর মা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। মায়ের এই মৃত্যু তাঁকে ব্যথিত করে। তাঁর বাবা একজন চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও এভাবে মায়ের মৃত্যু তিনি মেনে নিতে পারেননি। সিদ্ধান্ত নেন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতামূলক কাজ করবেন। সেই থেকে আজ অবধি বিনা মূল্যে এই সেবা দিয়ে চলেছেন এই চিকিৎসক।
জাকির হোসেন বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি কলেজের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানও।
সরকারি চাকরির সুবাদে জাকির হোসেন একসময় ঢাকায় এস জি এম চৌধুরী মেমোরিয়াল হাইপারটেনশন সেন্টারে যুক্ত হন। সেখানে দীর্ঘ ১০ বছর কাজ করেন।
২০০২ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন জাকির হোসেন। ২০০৮ সালের ১৪ নভেম্বর ‘হাইপারটেনশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’ গড়ে তোলেন।
জাকির হোসেন তাঁর প্রয়াত মা-বাবার স্মরণে ওয়াসিম-ওয়ালেদা বহুমুখী কল্যাণ ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন। ওই ফাউন্ডেশনের অন্তর্ভুক্ত এই সেন্টারটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই সেন্টারে কোনো চিকিৎসা ফি নেওয়া হয় না। মাত্র ৪০ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। সঙ্গে দেওয়া হয় একটি বই। ওই বইয়ে রোগীর করণীয় নিয়ে নানা পরামর্শ দেওয়া রয়েছে। এ ছাড়া মুঠোফোনেও সেন্টারের পক্ষ থেকে সেবা দেওয়া হয়। একবার নিবন্ধনের বিনিময়ে তিন মাস বিনা মূল্যে সেবা দেওয়া হয়। পরে আবার ৪০ টাকায় নিবন্ধন করতে হয়। এভাবে বছরের পর বছর ধরে অনেকেই এই সেন্টারে সেবা পেয়ে আসছেন।
২০০৮ সালের নভেম্বরে মাত্র নয়জন রোগী নিয়ে এই সেন্টারের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখন এই সেন্টারে নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা ১৭ হাজার ২৩৫ জন। তাঁরা রংপুর ছাড়াও কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ থেকে আসেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সেন্টারে নতুন-পুরোনো অনেক রোগী। রংপুর শহরের সিও বাজারের অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী আবদুল মান্নান ২০১১ সাল থেকে এই সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি একবার স্ট্রোক করেছিলেন। সেই থেকে এখানে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন সুস্থ আছেন।
শহরের মুন্সিপাড়ার রেহানা সুলতানা তিন বছর ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন এখানে। তিনি জানান, এই সেন্টারে উচ্চ রক্তচাপ ছাড়াও অন্যান্য রোগেরও পরামর্শ দেওয়া হয়।
চিকিৎসাসেবা ছাড়াও হাইপারটেনশন সেন্টারের উদ্যোগে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে সেমিনার করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৮১টি সেমিনার করেছে এই সেন্টার। এ ছাড়া বিনা মূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প, সেমিনার ও সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয় নিয়মিত।
অধ্যক্ষ জাকির হোসেন বলেন, নীরব ঘাতক ব্যাধি উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাই তাঁর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে আরও বড় কিছু করার চিন্তা রয়েছে তাঁর।