বিমানবন্দরে করোনার পরীক্ষা ২৮ সেপ্টেম্বর শুরুর প্রত্যাশা

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
ফাইল ছবি

রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৮ সেপ্টেম্বর করোনার পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান। যদিও এর আগে গতকাল শনিবার করোনা পরীক্ষা শুরুর কথা বলেছিল কর্তৃপক্ষ।

বিমানবন্দরের আজ রোববার দুপুরে করোনার পরীক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখানে কোনো সমস্যা নেই। সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ফ্লাইট পরিচালনার ব্যাপারেও আর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ নেই। তবে আরও ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগবে।

মাহবুব আলী বলেন, এই সময়ে যাত্রীদের পিসিআর পরীক্ষা করা লাগবে। এ ছাড়া এয়ারলাইনগুলোরও টিকিট বিক্রি করা লাগবে।

বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিমানবন্দরে ল্যাব স্থাপন করা হয়ে গেছে। এর নির্মাণকাজ শেষ। আজ বিমানবন্দরের ৯৬ জন কর্মকর্তার নমুনার টেস্ট রান চলছে। যদি সাকসেসফুল টেস্ট রান হয়ে যায়, তাহলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বেবিচককে জানিয়ে দেওয়া হবে।’

বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিকেলে একটা সংখ্যা জানিয়ে দেবে, কতজন যাত্রী এখানে পরীক্ষা করতে পারবেন। সে অনুপাতেই এয়ারলাইনসগুলোকে অবহিত করা হবে টিকিট বিক্রি শুরু করার জন্য।

তবে করোনা পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে আরও সময়ের প্রয়োজন জানিয়ে মফিদুর রহমান বলেন, এর জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতগামীদের দুটো পরীক্ষা করা দরকার। একটি ৪৮ ঘণ্টা আগে, আরেকটি হলো যাত্রার ছয় ঘণ্টা আগে। যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার কাজ করছে, তাঁদের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) যাচাই করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠানো হয়েছে।

বেবিচকের চেয়ারম্যানের দেওয়া তথ্যমতে, সেটির সম্মতিপত্র আজ রাতের মধ্যে চলে আসার কথা রয়েছে।

বেবিচকের চেয়ারম্যান জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর টেস্ট রানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিলে এর মধ্যে আরব আমিরাতের সম্মতি চলে এলে এয়ারলাইনগুলোকে টিকিট বিক্রি শুরু করতে জানিয়ে দেওয়া হবে। ২৮ সেপ্টেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতগামীদের জন্য পরীক্ষা শুরু হবে বলে আশা আছে।

অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে পিসিআর পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতার কারণে, তাঁদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ চেষ্টা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ও বেসামরিক বিমানমন্ত্রী, তিন মন্ত্রণালয়ের সচিবেরা বিমানবন্দরে এসেছেন। আমরা সবাই মিলে এখানে চেষ্টা করেছি পিসিআর ল্যাব তৈরি করার জন্য। কিন্তু এটা আমাদের হাতের বাইরে ছিল। এসওপিগুলো অনুমোদন করার এখতিয়ার আমাদের নেই। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্মতি এখনো আসেনি। তারা দেখছে, এখানকার পরীক্ষার পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা আছে কি না। সেটা আসার পর আমরা অনুমোদন দিতে পারব।’

৬ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা শনাক্তে পিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
১৫ সেপ্টেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর যন্ত্র বসাতে সাতটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) জমা দেয়। এসব এসওপি যাচাই করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠানো হয়।

গত আগস্টে সংযুক্ত আরব আমিরাত সে দেশে যেতে যাত্রার ছয় ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে করোনার আরটি-পিসিআর পরীক্ষার শর্ত আরোপ করে। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো বিমানবন্দরে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী ব্যক্তিরা সে দেশে যেতে পারছেন না। এর মধ্যে প্রবাসী কর্মীদের কারও কারও ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে।

কবে নাগাদ পরীক্ষা শুরু হবে, তা জানতে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রবাসী কর্মীরা খোঁজ নিতে প্রায় প্রতিদিনই বিমানবন্দরে আসছেন। আজও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তেমনই একজন আমির হামজা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে তাঁর কর্মস্থলে ফেরার কথা ছিল মে মাসে। কিন্তু প্রথমে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় এবং পরবর্তী ফ্লাইট চালু হলেও দেশের বিমানবন্দরে করোনার পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় তিনি যেতে পারেননি। আমির প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষা করতে এত দেরি কেন হলো, বুঝলাম না। আমি তো কাজ হারিয়ে ফেলব।’

বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার ফি কত হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাহরিয়ার সাজ্জাদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনা পরীক্ষার প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা। তবে সেটি চূড়ান্ত হয়নি।