বিয়ের অনুষ্ঠান কম, কমিউনিটি সেন্টারগুলো লোকসানে
নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাস বিয়ের মৌসুম হিসেবে পরিচিত। তবে এবার এই মৌসুমে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা অনেকটাই কম। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কমিউনিটি সেন্টারের বুকিং একের পর এক বাতিল হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কাছে হার মেনেছে বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক আনুষ্ঠানিকতা।
নগরের একাধিক কমিউনিটি সেন্টারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিবাহ, জন্মদিনসহ অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য আগে থেকে যেগুলো বুকিং করা ছিল, তার প্রায় ৯০ শতাংশই বাতিল করা হচ্ছে।
বিয়ের অনুষ্ঠান অল্প কিছু হলেও আগে যে অনুষ্ঠানে ৭০০ বা ৮০০ জনের উপস্থিত থাকার কথা ছিল, তাতে ১০০ বা ২০০ জন উপস্থিত হচ্ছেন।
কমিউনিটি সেন্টারের হল ভাড়ার ১৫ শতাংশ এবং খাবারের ১৫ শতাংশ ভ্যাট সরকারের কোষাগারে জমা হয়। এতে সরকারেরও আয় কমছে।
কমিউনিটি সেন্টারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চেয়ার-টেবিল ভাড়া দেওয়া প্রতিষ্ঠান, ফুলের ব্যবসায়ী, ডেকোরেটরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন-ভাতা, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিল দিতেই হিমশিম খাচ্ছে। কিছু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের ছাঁটাই করা শুরু করেছে।
রাজধানীর পুরানা পল্টনের আনন্দ ভুবন কমিউনিটি সেন্টার অন্যদের তুলনায় একটু বেশি সমস্যার মধ্যে আছে। এই এলাকায় কয়েক মাস ধরেই যখন-তখন গন্ডগোল হচ্ছে।
এই সেন্টারের ব্যবস্থাপক শামছুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবরোধ-হরতাল শুরু হওয়ার পর থেকেই ব্যবসার বারোটা বাজা শুরু হয়েছে।’
শামছুর রহিম আরও বলেন, ‘শুক্রবার একটু ভরসা। কিন্তু শনিবার থেকে আবার অবরোধ শুরু হলে শুক্রবার রাতের অনুষ্ঠানও বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ব্যবসার পুরোটাই লোকসান।’
বারিধারার সামার প্যালেসের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক তারিক হোসেন বলেন, ‘আমরা সারা বছর বসে থাকি বছরের এই “বেস্ট” সময়টার জন্য। কিন্তু এবার প্রচণ্ড হোঁচট খেতে হচ্ছে। বিয়ে ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো একের পর এক বাতিল হয়ে যাচ্ছে।’
বাংলামোটরের সোহাগ কমিউনিটি সেন্টারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানালেন, যেখানে মাসে ৩০টির বেশি বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা, সেখানে হচ্ছে ছয়টি বা তারও কম। অনুষ্ঠান না হলেও প্রতিষ্ঠানের গ্যাস বিলসহ যেসব খরচ, তা করতেই হচ্ছে।
শ্যামলীর হিল টাউন কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপক মকবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রিসিটে লেখা থাকে, বুকিংয়ের জন্য যে অ্যাডভান্স নেওয়া হয়, সেই টাকা আর ফেরত দেওয়া হবে না। তবে অনেকে থানার ওসি বা প্রভাবশালী কাউকে দিয়ে এই টাকা ফেরত দিতে বলছে। ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য অ্যাডভান্সের টাকাও ফেরত দিতে হচ্ছে। নভেম্বর মাসে মাত্র দুটি বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের ১০ দিন পার হয়ে গেলেও এখনো একটি বিয়ে বা অন্য অনুষ্ঠান হয়নি। বুঝতেই পারছেন আমাদের অবস্থা।’
শান্তিনগরের হোয়াইট হাউসের মহাব্যবস্থাপক আলমগীর মোল্লা বলেন, ‘বছরের এই সময়টিতে আমাদের ব্যবসা রমরমা থাকে। অথচ এখন আমাদের অবস্থা বলার মতো না।’
আলমগীর মোল্লা বলেন, ‘ভালো ভালো কর্মীকে ছাঁটাই করতে হচ্ছে। যেসব কর্মী আছেন, তাঁদের বেতনও নিয়মিত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
ছেলে বা মেয়ে বিদেশে থাকে, বিয়ের পরই চলে যাবে অথবা বিয়ে উপলক্ষে বিদেশ থেকে মেহমান এসেছেন, সেসব পরিবার সব থেকে বেশি বিপাকে আছে। তারা অনেকটা বাধ্য হয়েই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা পালন করছে। কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া বাতিল করে অনেকে বাড়ির ছাদ বা ছোট পরিসরে বাড়ির ভেতরেই এসব আনুষ্ঠানিকতা পালন করছে।
একটি বিয়েকে উপলক্ষ করে পরিবারগুলোতে চলতে থাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কাছে পারিবারিক এই অনুষ্ঠানটির আমেজও ম্লান হয়ে যাচ্ছে।