বিল ভরাট করে আশ্রয়ণ প্রকল্প

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার খরকা বিলের একটি অংশ ভরাট করে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে। এভাবে ভরাট শুরু হওয়ায় ধীরে ধীরে পুরো বিলটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে দেখা যায়, মাদারগঞ্জ পৌরসভার গাবের গ্রাম এলাকার খরকা বিলের উত্তর অংশে বিলের প্রায় দুই একর জমিতে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বালু ফেলা হচ্ছে। বালু ফেলতে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ছয়টি যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বড় বড় গর্ত করে বালু তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া তারতাপাড়া এলাকায় বিলের দুই একর জমিতে আরও একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে।
গাবের গ্রাম এলাকার জুসেপ আলী বলেন, আশপাশের অনেক লোক বিলে গোসল ও গৃহস্থালির কাজ করে। কিন্তু বিলের জমি ভরাট করে আশ্রয়ণ প্রকল্প করায় এ সুযোগ থেকে সাধারণ মানুষ হয়তো বঞ্চিত হবে। ভরাট করায় বিলের নানা প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণীর ক্ষতি হচ্ছে। বিলের পানি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারের উচিত বিলটি রক্ষা করা। কিন্তু তা না করে সরকারি টাকায় ভরাট করা হচ্ছে বিলটি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৪০০ মেট্রিক টন গমের বিপরীতে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে গাবের গ্রাম ও বালিজুড়ী ইউনিয়নের তারতাপাড়া এলাকায় দুই একর করে চার একর জমিতে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়। দুটি জায়গাতেই আশ্রয়ণ প্রকল্প হওয়ার কথা রয়েছে। গাবের গ্রাম অংশে মাদারগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈকত আলী ও বালিজুড়ী ইউনিয়নের তারতাপাড়া ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ারা বেগম আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে রয়েছেন।
গাবের গ্রাম এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি সৈকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, গাবের গ্রাম এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজটি করছেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের ছোট ভাই মির্জা সোহেল। প্রকল্পের সভাপতি আপনি হলে তিনি (মির্জা সোহেল) কীভাবে কাজ করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনুমোদন নিতে একজন জনপ্রতিনিধি লাগে। সেই হিসেবে আমাকে প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছে মাত্র। ওই প্রকল্পের সবকিছুই মির্জা সোহেল।’
মির্জা সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই প্রকল্পের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে কাজটিতে কিছুটা সহযোগিতা করছি।’ জমিটি বিলের কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিল শ্রেণির জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প হয় না। পাঁচ-সাত বছর আগে সেখানে বিল শ্রেণি পরিবর্তন করে নামা শ্রেণি করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলাল উদ্দিন বলেন, গাবের গ্রাম ও তারতাপাড়া এলাকায় একই প্রকল্পের আওতায় দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য মাটি ভরাটের কাজ চলছে। যেহেতু জমিটি বিলের নয়; তাই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়নি। মাটি ভরাটের কাজটি মির্জা সোহেল করছেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রকল্পের সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা ছামিউল হক বলেন, ১৯৯৩ সালে খরকা বিলের সাত একর ৪০ শতাংশ জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে ওই জমিটি গাবের গ্রাম এলাকার নামা জমি হিসেবে রয়েছে। ওই জমিতেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ চলছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে বলা হয়েছে, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এ ধরনের জায়গা ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাবে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের টাঙ্গাইল কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনে আছে, জনস্বার্থে সরকার চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই যেকোনো জায়গায় স্থাপনা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নাই।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘জলাধার বন্ধ করে আশ্রয়ণ প্রকল্প হচ্ছে—এটাও যেমন সঠিক নয়; আবার জলাধার আংশিক বন্ধ হচ্ছে—এটাও সঠিক। বিলের জমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে হস্তান্তর ও প্রকল্প হচ্ছে। পরিবেশ আইনের পক্ষে আমাদের অবস্থান অটল। সেই জমির শ্রেণি পরিবর্তনের কারণে সেখানে আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।’