বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে হামলাকারীদের বিচারের দাবি রানা দাশগুপ্তের

রানা দাশগুপ্ত

সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সন্ত্রাস দমনের আওতায় এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।

আজ শনিবার দুপুরে আন্দরকিল্লা চত্বরে অনুষ্ঠিত গণ–অনশন ও বিক্ষোভ মিছিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রানা দাশগুপ্ত। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন। পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের ৪ নভেম্বর শ্যামাপূজায় দীপাবলি উৎসব বর্জনের ডাক ও কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে মন্দিরে অবস্থান কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

রানা দাশগুপ্ত শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালীন দেশের বিভিন্ন জেলায় মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় নিহতদের পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি, ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দানসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন। দুর্গাপূজায় মণ্ডপ ও মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর, ঘরবাড়িতে লুটপাট এবং হত্যার প্রতিবাদে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সারা দেশে এ কর্মসূচির ডাক দেয়।

সকাল ছয়টা থেকে আন্দরকিল্লা চত্বরে গণ–অনশন কর্মসূচি পালন করা হয়। খণ্ড খণ্ড মিছিলসহ বিভিন্ন ব্যানার–ফেস্টুন নিয়ে তাঁরা গণ–অনশনে যোগ দেন। এ সময় আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

দাবিনামা উত্থাপন করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, বাড়িঘর পুনর্নির্মাণের পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসা ও নিহতদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যদি গাফিলতি থাকে, তা তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

রানা দাশগুপ্ত আরও বলেন, যারা উসকানি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার সময় যেসব জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তিনি আহ্বান জানান। এ ছাড়া বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি করেন এই নেতা।

সমাবেশ থেকে ফেব্রুয়ারিতে এসব দাবির সমর্থনে চলো চলো ঢাকা চলো শীর্ষক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

পরিষদের নেতা ইন্দু নন্দন দত্ত বলেন, ৭৪ বছরে এই প্রথম সংখ্যালঘুরা রানা দাশগুপ্তের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এই ঐক্য এগিয়ে নিয়ে অধিকার আদায় করতে হবে। নির্যাতনের বিচার করতে হবে।

ইসকনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারী বলেন, গণতন্ত্র ও মানবতা আজ বিপন্ন। বিচারহীনতার কারণে সাম্প্রদায়িক ঘটনা মাথাচাড়া দিয়েছে। অতীতের সহিংসতার বিচার এখনো হয়নি।

রণজিত দে বলেন, দেশের সব উপজেলায় মডেল মসজিদের মতো হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের জন্য উপাসনালয় করতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল পালিত বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়ন চাই আমরা।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, পরিষদ নেতা চন্দন তালুকদার প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বিশাল এক বিক্ষোভ মিছিল নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।