আদালতে যাব, মামলা করব, বললেন সালমা আলী

সালমা আলী
সালমা আলী

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী বলেছেন, ‘জাতীয় সংসদে বিশেষ ধারা বহাল রেখে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাস করা হলে এর বিরুদ্ধে আদালতে যাব, মামলা করব।’
আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনডব্লিউএলএ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা পরিস্থিতি ২০১৫-২০১৬’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৬’-এর যে খসড়া মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে, তাতে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছরই থাকছে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে ‘সর্বোত্তম স্বার্থে’ আদালতের নির্দেশে এবং মা-বাবার সম্মতিতে যেকোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে হতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সালমা আলী বলেন, ‘এত চিৎকার করার পরও বিশেষ ধারা বহাল রাখা হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা এটাকে প্রত্যাখ্যান করলাম। সম্প্রতি জেনেভায় জাতিসংঘের সিডও কমিটিও সমাপনী মন্তব্যে বাংলাদেশ সরকারকে আইনের বিশেষ ধারা বাতিলের কথা বলেছে। বিশেষ ধারা রেখে আইন হলে আইনের অপব্যবহার হবে। তখন অনেকে রেজিস্ট্রি ছাড়াই বিয়ের আয়োজন করে পরে বিয়ে রেজিস্ট্রি করবে।’
সালমা আলী আরও বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। সংসদে আইন পাসের আগে প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে বসবেন বলে আশা করছি। আমরা বিশেষ ধারা বহাল রেখে আইন হলে তা মানব না। দেশের কিশোরীরাও তা মেনে নেবে না।’


সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য পড়ে শোনান এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সালমা আলী। সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজা পারভিন, পরিচালক (লিগ্যাল) তৌহিদা খন্দকার, প্রকল্প ব্যবস্থাপক মিতালী জাহান, কেস ম্যানেজার ফাহমিদা আক্তারসহ অন্য কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মা আনোয়ারা বেগম মুঠোফোনে সালমা আলীর সঙ্গে কথা বলেন। লাউডস্পিকারে তা উপস্থিত সাংবাদিকদের শোনানো হয়। এ সময় আনোয়ারা বেগম তাঁর মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান।

সংবাদ সম্মেলনে সমিতির একটি জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। দেশের সাতটি বিভাগের ৬৬টি থানায় গত বছর দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় ২ হাজার ৩০৭টি মামলায় যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে (পুরুষ), তাঁদের মধ্য থেকে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ১৯৮ জনকে বেছে নিয়ে লিখিত প্রশ্ন-উত্তর ভিত্তিতে এ জরিপ করা হয়। জরিপ অনুযায়ী, তিন-চতুর্থাংশের বেশি অভিযুক্ত ব্যক্তির (৮৬ শতাংশ) বয়স ৩৫ বছর বা এর কম। এক-চতুর্থাংশ (২৪ শতাংশ) ব্যক্তি ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার দায়ে অভিযুক্ত। সর্বোচ্চ ২৮ শতাংশ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ৮১ শতাংশই বিবাহিত।

সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমে প্রকাশিত নারী ও শিশু নির্যাতনসংক্রান্ত খবরের ভিত্তিতে সমিতির করা প্রতিবেদনের তথ্যও উপস্থাপন করা হয়। গত বছরের ১৪টি এবং চলতি বছরে ১৩টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার ভিত্তিতে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৫ হাজার ৫২২ জন এবং চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৪ হাজার ১১৪ জন নারী ও শিশু বিভিন্ন সহিংসতার শিকার হয়। সংবাদপত্রে গত বছর গড়ে প্রতিদিন ১৫ জন এবং চলতি বছর (অক্টোবর পর্যন্ত) ১৪ জন সহিংসতার শিকার নারীর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ ও ২০১৪ সালের তুলনায় গত বছর এবং চলতি বছরে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে ৫ শতাংশ। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। ২০১৪ সালে ২০১৩ সালের তুলনায় ১০ শতাংশ এবং গত বছর এ নির্যাতন বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। ধর্ষণের শিকার ৭৮ শতাংশই ছিল শিশু। চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৮৬৭ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যাদের ৯২ শতাংশই শিশু।

সংবাদ সম্মেলনে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ খাতে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বিভিন্ন আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি ও তার পরিবার যাতে আর চুপ করে না থাকে, সে আহ্বানও জানানো হয়েছে।