বিশ্বকে জলবায়ুঝুঁকি থেকে বাঁচাতে সম্মিলিত লড়াইয়ের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য টেকসই ও প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানে কমনওয়েলথ অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে। তিনি পৃথিবীকে জলবায়ুঝুঁকির হাত থেকে বাঁচাতে সম্মিলিত লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে কমনওয়েলথ সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য টেকসই ও প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী সোমবার প্রিন্স অব ওয়েলস চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ আহূত ‘এশিয়া রিজিওনাল কমনওয়েলথ হেডস অব গভর্নমেন্ট’-এর গোলটেবিল আলোচনায় গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করে এ কথা বলেন।

গোলটেবিল আলোচনায় শেখ হাসিনা তিন দফা প্রস্তাব রেখেছেন। যার মধ্যে বিশ্বব্যাপী টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কার্বন নিরপেক্ষ প্রযুক্তিবিদ্যার ওপর জোর দেওয়া এবং জলবায়ু অভিযোজন ব্যবস্থার জন্য জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

কমনওয়েলথের সদস্য এবং সিভিএফের (জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত ফোরাম) চেয়ারম্যান হিসেবে শেখ হাসিনা ঝুঁকির বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করার জন্য সিওপি ২৬–এর আগে কয়েকটি পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রথম পরামর্শে বিশ্বব্যাপী সবুজ ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিকাশের পক্ষে তাঁর মতামত তুলে ধরেন এবং সুদিনের প্রত্যাশায় বৃত্তাকার অর্থনীতিতে বিনিয়োগের কথা বলেন। দ্বিতীয় পরামর্শে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমনওয়েলথের সদস্যদেশগুলোর মধ্যে জ্ঞান ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের বিধানসহ কার্বন নিরপেক্ষ প্রযুক্তির ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানান।

তৃতীয় পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে প্রশমন কার্যক্রম গ্রহণের ক্ষেত্রে জলবায়ু তহবিল থেকে সহায়তা প্রদানের কথা বলেন।

গৃহহীন মানুষের আশ্রয় প্রদানকে এসব পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দরিদ্রতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি হ্রাসের সর্বোত্তম কৌশল হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী সবার প্রতি গৃহহীনদের আশ্রয় প্রদানের আহ্বান জানান।

সিভিএফের চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কোভিড-১৯ পরবর্তী প্রজন্ম এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীগুলোর জন্য সমতাভিত্তিক, সহনশীল ও সবুজ প্রাকৃতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে ব্যবহার না করা পর্যন্ত বাস্তবিক অর্থে প্রকৃতির বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আমরা হেরেই যাব।’ তিনি আরও বলেন, বিশ্ব আজ এক নজিরবিহীন মহামারি পরিস্থিতি অতিবাহিত করছে এবং এই বৈশ্বিক মহামারি পরিস্থিতি এখনো অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে—বাংলাদেশও এর বাইরে নয়।

এই বৈশ্বিক মহামারি স্বাস্থ্যের চেয়েও বেশি সংকট ডেকে এনেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর এ জন্যই আমার সরকার জীবন ও জীবিকার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে নীতিমালা গ্রহণ করেছে।’

‘মাদার নেচার’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনার আহ্বান করায় প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স অব ওয়েলসকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের টেরা কার্টা সাসটেইনেবল মার্কেটস উদ্যোগ; একতা, লক্ষ্য, টেকসই ও স্থায়িত্ব এবং সমন্বিত কার্যক্রমে আপনাদের নেতৃত্ব এবং কোপ ২৬ ও অন্যান্য সংগঠনে আমাদের কমনওয়েলথের বিভিন্ন সমন্বিত পদক্ষেপের প্রতি বাংলাদেশ আন্তরিকভাবে সংহতি প্রকাশ করছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিবছর অভিযোজন ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় টেকসই জলবায়ু সহনশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করি।’