বিস্ফোরণে দোষীদের শাস্তির দাবি হিউম্যান রাইটস ফোরামের

ডিপোর ভেতরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে রাসায়নিকের ছোট ছোট কনটেইনারের ধ্বংসাবশেষ। পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা
ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও আগুনে হতাহতের ঘটনা শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তার প্রতি মালিকপক্ষের চরম অবজ্ঞা বলে উল্লেখ করেছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। এ ঘটনার দ্রুত  তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি করেছে সংগঠনটি।

আজ সোমবার এক বিবৃতিতে এসব দাবি জানিয়েছে এইচআরএফবি। বিবৃতিতে মোট ২৩ জন মানবাধিকারকর্মী ও বিশিষ্টজন সই করেছেন। তাঁরা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করারও দাবি জানান।

দাহ্য পদার্থের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতির ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে এইচআরএফবি বিবৃতিতে বলেছে, বিদ্যমান দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণে পূর্ববর্তী ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে এসব ভয়াবহ মানবসৃষ্ট দুর্যোগ একের পর এক ঘটে চলেছে। এ ঘটনা প্রকৃতপক্ষে মালিকপক্ষের শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তার প্রতি চরম অবজ্ঞা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকি ও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার পরিচয়।

গণমাধ্যম সূত্রে সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ঘটনায় ডিপোর মালিকপক্ষের অসহযোগিতা ও দায়িত্বহীনতার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, অগ্নিনির্বাপণকর্মী, যাঁরা আগুন নেভাতে গিয়ে নিহত হয়েছেন, তাঁরা কেন অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণ ঘটেছে, সে বিষয়ে অবগত ছিলেন না। দীর্ঘ সময় পার হলেও এ বিষয়ে তথ্য প্রদানের জন্য মালিকপক্ষকে পাওয়া যাচ্ছিল না। কনটেইনার ডিপোতে বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেন পার–অক্সাইড নামক রাসায়নিক থাকলেও চট্টগ্রামের বিস্ফোরক পরিদপ্তরের বক্তব্য অনুযায়ী, তাদের এই বিষয়ে জানানো হয়নি। একটি জনবসতিসংলগ্ন এলাকায় কোনো অনুমোদন ছাড়াই এ কনটেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার–অক্সাইড মজুত করা হয়েছিল।

এ ছাড়া বিবৃতিতে এ ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা, নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেক পরিবারকে আজীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা, দাহ্য পদার্থ ব্যবস্থাপনায় যথোপযুক্ত কাঠামো তৈরি ও নিরবচ্ছিন্নভাবে তদারকি নিশ্চিত করা, এ পর্যন্ত সংঘটিত সব অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনার দ্রুত বিচার করার দাবি জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে সই করেন হামিদা হোসেন, সুলতানা কামাল, রাজা দেবাশীষ রায়, গোলাম মনোয়ার কামাল, শাহীন আনাম, ইফতেখারুজ্জামান, জাকির হোসেন, সারা হোসেন, ফওজিয়া মোসলেম, শামসুল হুদা, খুশী কবির, রঞ্জন কর্মকার, সালেহ আহমেদ, সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন, মনি রানী দাস, সঞ্জীব দ্রং, নজরুল ইসলাম খান, দেওয়ান জামান, পল্লব চাকমা, রোকেয়া রফিক, তাসনীম আজীম, আবদুস সাত্তার ও আশরাফুন্নেসা।

গত শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন ৪১ জন। তাঁদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য রয়েছেন নয়জন। আহত হন প্রায় ২৫০ জন।

আগুন লাগার পরপরই তা নেভাতে কাজ শুরু করেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। একপর্যায়ে আগুন ছড়িয়ে রাসায়নিক থাকা কনটেইনারে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ডিপো এলাকা। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।

আরও পড়ুন