রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেঞ্চের অভাবে শ্রেণিকক্ষে দাঁড়িয়ে ক্লাস করে। এতে পড়াশোনায় ঠিকমতো মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৪৯ সালে ৩ একর ১৭ শতক জমির ওপর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ১৯ জন। ৮৮১ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১০টি শ্রেণিকক্ষ ও ১৩৫টি বেঞ্চ আছে। প্রতি বেঞ্চে তিনজন করে বসা যায়। প্রয়োজনের তুলনায় বেঞ্চ কম হওয়ায় এখন একেকটি বেঞ্চে ছয়জন ঠাসাঠাসি করে বসছে। তারপরও অনেকে বেঞ্চে বসার সুযোগই পায় না। এসব শিক্ষার্থীকে দাঁড়িয়েই ক্লাস করতে হয়।
শিক্ষকেরা জানান, তিন বছর ধরে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের এই দুর্দশা চলছে। অনেক আবেদন-নিবেদনের পরও শিক্ষার্থীদের দুর্দশা দূর করতে কেউ এগিয়ে আসছে না। অসহায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ অবস্থার মধে৵ই পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে গত ২৭ মে বেলা সাড়ে ১১টায় দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে বেঞ্চের অভাবে একাধিক শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শিক্ষকের কথা শুনছে। আর প্রতিটি বেঞ্চে তিনজন শিক্ষার্থীর জায়গায় পাঁচ থেকে ছয়জন করে বসা। শিক্ষকদের অফিস কক্ষটি যেন ভাঙা মালামালের গুদাম। বেশ কিছু ভাঙা বেঞ্চ, ভাঙা চেয়ার-টেবিল রাখা সেখানে।
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী লিতুন জেরা বলে, ‘আগে আসলে বেঞ্চ পাওয়া যায়। পরে আসলে সবার শেষে দেয়ালের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হয়। স্যারক বেঞ্চের কথা কইলে কয় ধৈর্য ধর।’
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রিয়াদুল কবির বলে, ‘অন্য স্কুলে সব ছাত্রের জন্য বেঞ্চ আছে। কিন্তু আমাদের স্কুলে নেই। তাই খুব খারাপ লাগে। গরমে ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতেও পায়ে ব্যথা হয়।’
অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তাসলিমা খাতুন বলে, ‘আমাদের বেঞ্চ নাই, রুম নাই, প্রত্যেক বেঞ্চে ছয়জন করে বসতে হয়। যার জায়গা বেঞ্চে হয় না তাকে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হয়। সরকার আমাদের স্কুলের সমস্যাগুলো যেন তাড়াতাড়ি দূর করি দেয়।’
সহকারী শিক্ষক আরিফন হাবিব বলেন, ‘১০টি শ্রেণিকক্ষের মধ্যে তিনটিতে টিনের চালা। বৃষ্টি এলে এই তিন শ্রেণিকক্ষে টিনের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে শিক্ষার্থীদের বই-খাতা নষ্ট হয়। রোদ উঠলে টিন থেকে যেন আগুন বেরোয়। রুমে থাকা যায় না। বেঞ্চসংকটে শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে ঠাসাঠাসি করে ক্লাস করতে হয়। আগে ১৮০টি বেঞ্চ ছিল, সেগুলোও বেশির ভাগ ভেঙে গেছে। এখন ৮৮১ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য মাত্র ১৩৫টি বেঞ্চ আছে। শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে দেখে নিজেরই খুব কষ্ট লাগে।’
প্রধান শিক্ষক কাশেম আলী বলেন, ‘বিদ্যালয়টির এই অবস্থার কারণে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখায় খুবই ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা পরিষেদের চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে জানানো হয়েছে। তাঁরা সরেজমিনে এসে শিক্ষার্থীদের দুর্দশা দেখে গেছেন, কিন্তু বেঞ্চ আর পাই নাই। বর্তমান গরমে শিক্ষার্থীদের অবস্থা করুণ। তারা ক্লাসের সময় অমনোযোগী থাকে।’
সয়ার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আজম বলেন, ‘বিদ্যালয়ে বেঞ্চের সমস্যার কথা উপজেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় আলোচনা করেছি। আশা করছি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
ইউএনও জিলুফা সুলতানা বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে ওই স্কুলের সমস্যা সমাধনের চেষ্টা করব।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি আনিছুর রহমান বলেন, ‘স্কুলটির সমস্যার কথা আমার জানা আছে। খুব শিগগির এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’