বেশির ভাগ নেতা ক্যাম্পাস ছেড়েছেন, সম্মেলন দাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিতে সহসভাপতি পদধারী নেতা আছেন ৩৮ জন। তাঁদের ২৮ জনই ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছেন। বাকি ১০ জনের মধ্যে ৫ জন সক্রিয়ভাবে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন, ৪ জন অনিয়মিত, ১ জন পালন করছেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব।

শুধু সহসভাপতিদের ক্ষেত্রে নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চলমান কমিটির সব পদের ক্ষেত্রেই এমন অবস্থা বিরাজ করছে। ২০১৩ সালের ২০ জুলাই সংগঠনটির সর্বশেষ সম্মেলন হয়। সে সময় দুই বছর মেয়াদি কমিটি করা হয়। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এরপর আর সম্মেলন হয়নি, কমিটিও হয়নি।

ক্যাম্পাসে বর্তমানে সক্রিয় নেতারা বলছেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে দলীয় কর্মসূচি করতে গিয়ে পদধারী নেতাদের পাওয়া যায় না। শুধু কর্মী দিয়ে আর কী রাজনীতি হয়। তাই ছাত্রলীগকে শক্তিশালী করতে সম্মেলনের দাবি তাঁদের।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীকে মারধরের ঘটনায় এস এম তৌহিদ আল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান খালিদ হাসান। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সভাপতি মিজানুর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান সহসভাপতি রাশেদুল ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন ১০ জন নেতা। তাঁদের ১ জন পালন করছেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদ। বাকি ৯ জনের ৬ জনই ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছেন, ৩ জন ক্যাম্পাসে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করছেন। ৮ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে ৪ জন আর ক্যাম্পাসে থাকেন না, বাকি ৪ জন ক্যাম্পাসে রাজনীতি করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটির তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কমিটিতে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক সম্পাদক পদে ৬০ জন নেতার নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১১ থেকে ১৩ জন সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করছেন। ১০ জন ক্যাম্পাসে থাকলেও সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করেন না। কেউ কেউ মাঝেমধ্যে আসেন। কেউ কেউ একেবারেই আসেন না। কমিটির প্রায় ১৭ জন সম্পাদক পদধারী নেতা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেছেন। ২০ থেকে ২২ জন নেতার সম্পর্কে খোঁজ পাওয়া যায়নি। বর্তমান কমিটিতে সক্রিয় ৪ জন নেতা ওই ২০ থেকে ২২ জনকে চেনেন না বা কোনো দিন কর্মসূচিতে দেখেননি বলে জানিয়েছেন। কমিটিতে নাম থাকা ২০ জন সহসম্পাদক এবং ৩০ জন সদস্যের মধ্যে প্রায় ১৫ জন বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। বাকি সদস্যদের কর্মসূচিতে দেখা পাওয়া যায় না।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, গত ঈদুল ফিতরের আগে অনুষ্ঠিত সংগঠনের বর্ধিত সভায় মাত্র ৫০ জনের মতো পদধারী নেতা উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন পদধারী নেতা উপস্থিত থাকেন। বাকি সবাই কর্মী। এর আগে গত ২৪ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু পরে আর তা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৩ জন ছাত্রলীগ নেতা বলেন, কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চলে গেছেন। ভারপ্রাপ্ত হয়ে আছেন ২ জন। বেশির ভাগ নেতাও চলে গেছেন। ক্যাম্পাসে পড়াশোনা শেষ হলে নেতারা চলে যাবেন, সেটাই স্বাভাবিক। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সম্মেলন হওয়া প্রয়োজন। না হলে অনেক ত্যাগী কর্মী পদ না পেয়েই ক্যাম্পাস ছেড়ে যান। কেউ আবার শিক্ষাজীবনের শেষ সময়ে এসে পদ পেয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান। নিয়মিত সম্মেলন হলে যেমন নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়, তেমনি সংগঠন থাকে শক্তিশালী।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘জ্যেষ্ঠ নেতারা ক্যাম্পাসে থাকলে অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়। যাঁরা চলে গেছেন তাঁদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। পড়াশোনা শেষ হলে চলে যাবেনই। তবে সংগঠন ভালোভাবেই চলছে। কেন্দ্রীয় নেতারা যদি মনে করেন নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন, তবে সম্মেলন দিতে পারেন। যদি মনে করেন যাঁরা নেতৃত্বে আছেন তাঁদের দিয়ে ভালো চলছে, তবে কমিটি পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া উচিত।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের মুঠোফোনে গতকাল শনিবার একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি হত্যা থামছে না

চলতি বছর বিএসএফের হাতে এ পর্যন্ত নিহত ২৮ জন

সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসে নয়াদিল্লিতে দুই প্রতিবেশী দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে রাজনাথ সিং এই আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন। এরপরও থামছে না সীমান্তে হত্যা। সর্বশেষ গতকাল রোববার ভোরে কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাহারুল ইসলাম নামে ২৫ বছরের এক তরুণ প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে চলতি মাসে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে অন্তত পাঁচজন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন।

সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাবেক প্রধান ও কূটনীতিকদের মতে, সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারত প্রতিশ্রুতি দিলেওতাতে আন্তরিকতায় ঘাটতি আছে। কারণ সর্বোচ্চ পর্যায়ের আশ্বাসের উল্টোটা মাঠপর্যায়ে ঘটতে থাকলে সেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে সংশয় থেকে যায়।

তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধানদের সম্মেলনে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যা বন্ধের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে। গত কয়েক দিনে সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যার প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

সাধারণত সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যার পর প্রথমে বিজিবি মৌখিকভাবে ও পরে লিখিতভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে থাকে। এরপর বিজিবির কাছ থেকে হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে হত্যার প্রতিবাদ ও তদন্তের দাবি জানায়।

গত রাতে কূটনৈতিক একটি সূত্র এই প্রতিবেদককে জানায়, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) সইয়ের পর দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সমন্বিত টহল, তথ্য বিনিময়সহ নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে আস্থা বাড়ানোর
চেষ্টা চলছে। সীমান্ত হত্যা বন্ধে মাঠপর্যায়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের সংবেদনশীল করার চেষ্টাও আছে।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র সীমান্ত, যেখানে দুই দেশের মধ্যে লড়াই হচ্ছে না; অথচ নিরস্ত্র লোকজনকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। ঘনিষ্ঠ দুই নিকট প্রতিবেশী দেশে সীমান্ত হত্যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। দুঃখ লাগে, ভারতের মানবাধিকারকর্মীদের এ নিয়ে সোচ্চার হতে দেখা যায় না।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএসএফের হাতে অন্তত ২৮ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন।

প্রথম আলোজেলা প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১ সেপ্টেম্বর লালমনিরহাটের বুড়িরহাট সীমান্তে মহিবুর রহমান (৩৮), ১৮ সেপ্টেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের তেলকুপি সীমান্তে মো. আবির (২৩), ২৩ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে দুখু মিয়া (২৫) ও ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে জসিম উদ্দিন (২৭) এবং গতকাল রৌমারিতে বাহারুল ইসলাম বিএসএফের হাতে প্রাণ হারান।

আসকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিএসএফের হাতে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে নিহত বাংলাদেশির সংখ্যা যথাক্রমে ২৬ (গুলিতে ১২), ৩৩ (গুলিতে ১৬) ও ৪৬ (গুলিতে ৩২) জন।

গত ১৬ মে ঢাকায় বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালকদের বৈঠকে সীমান্ত হত্যার প্রতিটি বিষয়ে যৌথ তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। গতকাল এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, অতীতে সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যার পর ভারতের পক্ষ একতরফাভাবে বলা হতো, বিএসএফ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ার কারণে বাংলাদেশের নাগরিক নিহত হয়েছেন। মে মাসের বৈঠকের পর সীমান্তে কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটলে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। কাজেই যৌথ তদন্তের সিদ্ধান্তের পর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আজিজুর রহমান গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সীমান্তে হত্যা বন্ধে ভারতের পক্ষ থেকে বারবার যে আশ্বাস দেওয়া হয়, তা পূরণে তাদের সদিচ্ছার অভাব আছে। এ কারণেই এ ধরনের বিয়োগান্ত হত্যা অব্যাহত আছে।

স্কুলছাত্রকে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি

স্নেহের শীর্ষেন্দু পায়রা নদীতে সেতু হবে

পায়রা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছিল চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস। চিঠির উত্তরে প্রধানমন্ত্রী সেখানে একটি সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন। চিঠির উত্তর পেয়ে যারপরনাই খুশি শীর্ষেন্দু।

পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র শীর্ষেন্দু। মা শীলা রানী পটুয়াখালী সমবায় অধিদপ্তরের কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর। বাবা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। চাকরির সুবাদে পটুয়াখালী শহরে বসবাস করলেও শীর্ষেন্দুদের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের ছয়আনি গ্রামে। সেতু না থাকায় নৌপথে সেখানে যাওয়ার সময় তাঁদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

শীর্ষেন্দু প্রথম আলোকে বলে, গত ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্কুলে গিয়ে সে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠিটি লেখে। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর জন্য চিঠিটি মা শীলা রানীর কাছে দেয়।

শীলা রানী বলেন, ছেলের লেখা চিঠিটি গত আগস্টে ডাকযোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠান তিনি। ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে মুঠোফোনে তাঁকে জানানো হয়, শীর্ষেন্দুর চিঠি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

তিন পাতার চিঠিতে শীর্ষেন্দু লেখে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সালাম ও শুভেচ্ছা নেবেন। আমি একজন সাধারণ নাগরিক।...আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠিতে। আমাদের মির্জাগঞ্জ পায়রা নদী পার হয়ে যেতে হয়। এ নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ। মানুষ ভয় পায়। কখনো নৌকা ডুবে যায়। কখনো কখনো ট্রলার ডুবে যায়। আমার থেকে ছোট ভাই-বোন তাদের মা-বাবাকে হারায়। তাই আমি চাই না কেউর মা-বাবা চলে যায়। আমি আমার মা-বাবাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। তাদের হারাতে চাই না। তাই আপনার কাছে একটাই অনুরোধ যে, আপনি মির্জাগঞ্জ পায়রা নদীর ওপর ব্রিজের ব্যবস্থা করুন।’

এই চিঠির জবাবে ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেখেন, ‘স্নেহের শীর্ষেন্দু, তোমার চিঠি পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।...আমি জানি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীটি অত্যন্ত খরস্রোতা। নিজের পিতা-মাতাসহ অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই নদীকেন্দ্রিক তোমার নিরাপত্তাসচেতনতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।...মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তোমাকে আশ্বস্ত করছি।’

পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটি ২০ সেপ্টেম্বর স্কুলে এসে পৌঁছেছে। আজ সোমবার বেলা ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শীর্ষেন্দুর হাতে তুলে দেওয়া হবে।

জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নজরদারি

বিমানবন্দরে স্ক্যানার নষ্ট, জ্বর মাপা হচ্ছে থার্মোমিটারে

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনটি থার্মাল স্ক্যানার মেশিন (দেহের উত্তাপ মাপন যন্ত্র) বসানোর দুই বছরের মাথায় এগুলোর দুটিই নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট মেশিন না সারিয়ে এখন নতুন করে আরও দুটি মেশিন আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।

থার্মাল স্ক্যানার মেশিনে জ্বর নির্ণয় করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইবোলা সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনটিসহ মোট ছয়টি থার্মাল স্ক্যানার মেশিন কেনা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সে সময় একেকটি মেশিনের দাম পড়েছিল ৩৫ লাখ টাকা। তিন বছরের কম সময়ে দুটি স্ক্যানার নষ্ট হওয়ার পর এখন যে স্ক্যানারটি সচল, সেটি শুধু বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রবেশের পথে বসানো হয়েছে। ফলে বিপুলসংখ্যক যাত্রীর জ্বর মাপতে হচ্ছে সাধারণ থার্মোমিটার দিয়ে।

সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বাংলাদেশি থাকায় ৩ সেপ্টেম্বর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জিকা ভাইরাস শনাক্ত করার কার্যক্রম শুরু হয়। মূলত সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে আসা যাত্রীদের জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষা করার কথা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে প্রতিদিন আসা ১৬টি ফ্লাইটে প্রায় ৫ হাজার যাত্রী ঢাকায় প্রবেশ করেন। গত ৩ জুলাই থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৬ হাজার যাত্রী এই তিনটি দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। এত বিপুলসংখ্যক যাত্রীর জ্বর থার্মোমিটার দিয়ে পরীক্ষা করতে বেগ পেতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। ২৪ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় স্বাস্থ্যকর্মীরা আগমনী সিঁড়ির সামনে যাত্রীদের জ্বর মাপছেন।

মেশিনটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হার্মা অ্যান্ড ফার্ম। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনটি, চট্টগ্রামের হজরত শাহ আমানত বিমানবন্দরে একটি ও সিলেটের এম এ জি ওসমানী বিমানবন্দরে একটি এবং বেনাপোল স্থলবন্দরে একটি—মোট ছয়টি থার্মাল স্ক্যানার স্থাপন করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির প্রকৌশলী ও থার্মাল স্ক্যানারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছেন জহুরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেশিনগুলোর ওয়ারেন্টি পিরিয়ড (বিক্রয়োত্তর সেবার সময়) ছিল এক বছর। সময় শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে আরও দুটি মেশিন আনা হবে। তখন আর সমস্যা হবে না।’

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) উপ-কর্মসূচি ব্যবস্থাপক নাসির আহমেদ মেশিন নষ্ট হলেও জ্বর মাপায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘ দুই বছর মেশিনগুলো কাজ করেছে। দুটি স্ক্যানারের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ। এগুলোর ক্যামেরাও নষ্ট হয়ে গেছে। যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এগুলো কেনা হয়েছে, তাদের মেরামত করতে বলা হয়েছে।’

এখন জিকা ভাইরাস শনাক্ত করতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিমান সংস্থা থেকে পাঠানো তথ্য বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের অন্যতম ভরসা। বিদেশ থেকে আসা কোনো যাত্রীর জ্বর থাকলে তার তথ্য বিমান সংস্থা সংগ্রহ করে। এরপর সেখান থেকে বিমানবন্দরের দোতলায় অবস্থিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জানানো হয়। মূলত তখনই থার্মোমিটার দিয়ে ওই রোগীকে পরীক্ষা করা হয়। সন্দেহের মাত্রা বেশি হলে তাঁর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। প্রয়োজন হলে ওই রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা ছয়টি মেশিনের জন্য মাত্র এক বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হলো, সে প্রশ্ন করা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক আবুল খায়ের মো. শামছুজ্জামানকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তখন এমন চুক্তিই হয়েছিল। এখন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে আরও ১০ বছর সেবা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী চুক্তির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

সংগীতায়োজন

লন্ডনে রুনার গানে গানে ৫০

লন্ডনের শহরতলি রমফোর্ডের বিশাল মিলনায়তন সিটি প্যাভিলিয়ন। দর্শকদের মধ্যে প্রায় সমানভাবেই চোখে পড়ছে বাংলাদেশ, ভারত আর পাকিস্তানের মানুষ। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ওই তিন দেশের মানুষই জড়ো হয়েছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার গান শুনতে। গানের ভাষা যা-ই হোক, প্রতিটি গানের শেষে হলভর্তি দর্শকের জোর করতালি আর হর্ষধ্বনি বারবার জানান দিচ্ছিল রুনা লায়লা কতটাই জনপ্রিয় ।

গত শনিবার সন্ধ্যায় সিটি প্যাভিলিয়নে বসেছিল কণ্ঠ জাদুকর রুনা লায়লার একক সংগীতায়োজন। তাঁর সংগীতজীবনের ৫০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপনের জন্য এবার লন্ডনে হলো এই আয়োজন। আয়োজনটিও অনেকটাই উপমহাদেশীয়। কেননা অনুষ্ঠানের আয়োজক ভারতীয় চিকিৎসক দম্পতি অর্পিতা রায় ও অনির্বাণ মণ্ডলের প্রতিষ্ঠান ইউকে ডক্টর শেফ লিমিটেড। আয়োজন সমন্বয়ের কাজে ছিলেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সংগীতশিল্পী রাজা কাশেফ। আর প্রচারে ছিল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ, ভারত আর পাকিস্তানের গণমাধ্যম।

রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মঞ্চে এলেন শিল্পী। শুরু করলেন ‘শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাব’ দিয়ে। শুনিয়েছেনও মন উজাড় করে। বাংলা, হিন্দি, উর্দু গাইলেন সমানতালে। একের পর এক গেয়ে শোনালেন ‘ইস্টিশনের রেলগাড়িটা’, ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম’, ‘দো দিওয়ানে শেহের মে’ ‘এই বৃষ্টিভেজা রাতে চলে যেও না’, ‘তু মে হো না হো মুচকো তো’, ‘যে জন প্রেমের ভাব জানে না, ‘দে দে পেয়ার দে’, ‘বাড়ির মানুষ কয় আমায় ভূতে ধরেছে’সহ মঞ্চ কাঁপানো অনেক গান। ভুলে যাননি দেশপ্রেম স্মরণ করিয়ে দিতে। বাংলাদেশের শহীদদের স্মরণে গাইলেন, ‘দেশের জন্য যারা দিয়ে গেছ প্রাণ, ভুলিনি আমরা’।

মাঝে মাঝে দর্শকদের উদ্দেশে বাংলা, হিন্দি আর উর্দু বাকপটুতায় বুঝিয়ে দিলেন, কাকে বলে দর্শক জাগানোর মুনশিয়ানা। সুরের তালে স্বভাবসুলভ দেহভঙ্গি বলছিল তিনি এখনো মঞ্চের তরুণী। টানা ঘণ্টা দেড়েক গাওয়ার পর বিরতি চাইলেন। বিরতিতে যাওয়ার আগে দর্শকদের বললেন, ‘রাত ভারী হলেও চলে যাবেন না তো? আমি আবার আসছি।’ গাইলেন রাত ১১টা পর্যন্ত।

রুনা লায়লার ‘গানে গানে ৫০’ উদ্‌যাপনের এই অনুষ্ঠানে দর্শকেরাও ছিলেন বেশ বিচিত্র। গত শতকের সত্তর-আশির দশকে যাঁরা টগবগে তরুণ-তরুণী ছিলেন, তাঁদের উপস্থিতিই ছিল বেশি। কথা হলো বাংলাদেশের মনোয়ার হোসেন, কলকাতার ভুবানা লক্ষ্মী, পাকিস্তানের আয়শা ভাটের সঙ্গে। তাঁদের সবারই বয়স এখন ৬০-এর কাছাকাছি। এই সংগীতপ্রেমীরা বললেন, বর্তমানে সংগীতের অনেক শিল্পী, অনেক আধুনিকায়ন হয়েছে। কিন্তু এসব গান তাঁদের টানে না। সেই যৌবনে শোনা রুনার গানগুলোই এখনো তাঁদের অন্তরে গুনগুন করে বাজে। তাই রুনার টানেই ছুটে আসা।

বিজেএসে নিয়োগে যে সময় লেগেছে

সহকারী জজ নিয়োগে সময় বেশি লাগছে বিসিএসের চেয়েও

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৯ মাস পর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর নবম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়। এতে ১০০ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। কিন্তু এখনো গেজেট না হওয়ায় তাঁরা সহকারী জজ পদে চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না। অর্থাৎ প্রায় ২৮ মাসেও নবম বিজেএসের নিয়োগ-প্রক্রিয়া শেষ হয়নি।

আইন মন্ত্রণালয় এবং জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন বলছে, সবকিছু শেষ হলেও দুটি সংস্থার যাচাই প্রতিবেদনের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় গেজেট প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দুই দফায় চিঠি দিয়ে তাগাদাও দেওয়া হয়েছে।

২০০৮ সালে তৃতীয় বিজেএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের মাত্র দুই মাসের মধ্যে ৩৯০ জন প্রার্থীর গোয়েন্দা যাচাই প্রক্রিয়া শেষ হয়েছিল। ২০০৯ সালে চতুর্থ বিজেএসে উত্তীর্ণ ২১২ জনের যাচাই প্রতিবেদন চার মাসে শেষ হয়েছিল। এই দুবারে নিয়োগ-প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লেগেছিল কম। কিন্তু এরপর থেকে প্রতিটি বিজেএসের নিয়োগ শেষ করতে ক্রমশ সময় বাড়ছে।

এই দীর্ঘসূত্রতায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ প্রার্থীরা। তাঁরা বলছেন, বিসিএস পরীক্ষায় দুই লাখেরও বেশি প্রার্থী অংশ নেন। এই নিয়োগ-প্রক্রিয়া শেষ করতে দুই বছর লাগে। ৩১ ও ৩২তম বিসিএসের নিয়োগ-প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে দুই বছরেরও কম সময়ে। কিন্তু বিজেএসে আড়াই বছরও লেগে যাচ্ছে। অথচ এখানে প্রার্থীসংখ্যা কয়েক হাজার। চূড়ান্ত ফলে উত্তীর্ণ প্রার্থী সংখ্যাও বিসিএসের চূড়ান্ত ফলে উত্তীর্ণদের চেয়ে অনেক কম।

জানতে চাইলে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সচিব (জেলা জজ) পরেশ চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘নবম বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তালিকা এ বছরের শুরুতেই আমরা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে যাচাইয়ের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই প্রতিবেদন না আসায় গেজেট প্রকাশ করা যাচ্ছে না। প্রতিবারই এ কারণে নিয়োগে বিলম্ব হচ্ছে।’

কমিশন সূত্র বলেছে, ২০১৪ সালের ২৯ মে নবম বিজেএসের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক বাছাই (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষায় অংশ নেন ৩ হাজার ১৯৪ জন। উত্তীর্ণ ১ হাজার ৪৯৬ জনের লিখিত পরীক্ষা হয় গত
বছরের ১০ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৪১৩ জনের ১ থেকে ১৮ ডিসেম্বর মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৩১ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়।

প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদে নিয়োগ হয় সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে। তবে সহকারী জজ নিয়োগের সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন (জেএসসি)। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর ২০০৭ সালে এই কমিশন গঠিত হয়।

এরপর জেএসসির সভায় ২২তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী জজ পদে নিয়োগ পাওয়াদের প্রথম বিজেএস ব্যাচ এবং ২৪তম বিসিএস পরীক্ষায় ওই পদে উত্তীর্ণদের দ্বিতীয় বিজেএস হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জেএসসি প্রথমবারের মতো সহকারী জজ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ২০০৭ সালের আগস্টে। সব পরীক্ষা শেষে ছয় মাসের মধ্যে ২০০৮ সালের ১৭ মার্চ চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। উত্তীর্ণ ৩৯০ জন ২২ মে চাকরিতে যোগ দেন। এটি তৃতীয় বিজেএস ব্যাচ।

২০০৯ সালের ৩ জানুয়ারি চতুর্থ বিজেএসের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয় এর প্রায় ১৬ মাস পর। ২১২ জনের যাচাইয়ে লাগে চার মাস। এই নিয়োগ-প্রক্রিয়া শেষ হয় ২০ মাসে। ২০১০ সালের ২৪ জুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা পঞ্চম বিজেএসে নিয়োগ পান ১২০ জন। এই নিয়োগে ২৬ মাস লেগেছে, এর মধ্যে যাচাইয়ে লাগে ১১ মাস।

ষষ্ঠ বিজেএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০১১ সালের জুনে। ১২৫ জনের এই ব্যাচের নিয়োগে লাগে ২৮ মাস। এর মধ্যে যাচাইয়ে যায় ১৪ মাস। সপ্তম বিজেএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের ২৬ জুলাই। এই ব্যাচে ৬৭ জনকে নিয়োগেও ২৮ মাস লাগে। এর মধ্যে যাচাই প্রতিবেদনে যায় ১০ মাস। এ নিয়ে তখন প্রথম আলোয়‘আড়াই বছরেও শেষ হয়নি সহকারী জজ নিয়োগ-প্রক্রিয়া’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

অষ্টম বিজেএসে ৫৩ জনের নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় লাগে ২৯ মাস। এর মধ্যে যাচাইয়ে লাগে প্রায় ১১ মাস।

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ২৮ মাস পরও নবম বিজেএসের নিয়োগ-প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। আর দশম বিজেএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত ৯ আগস্ট। চলতি বছরের শেষেই ১১তম বিজেএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

ক্ষুব্ধ প্রার্থীরা: নবম বিজেএসে উত্তীর্ণ ১৫ জন এবং দশম বিজিএসে অংশ নেওয়া ১০ জনের সঙ্গে প্রথম আলোরকথা হয়েছে। বিজেএসের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে বিচারক হিসেবে কর্মরত ১৫ জনের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা হয়েছে। তাঁরা নিয়োগ-প্রক্রিয়ার এই দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষোভ জানিয়েছেন।

নবম বিজেএস উত্তীর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী বলেন, ১০০ জনের যাচাই প্রতিবেদন দিতে এক মাসের বেশি কোনোভাবেই লাগার কথা হয়। অথচ নয় মাসেও তা হচ্ছে না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পাস করা এক ছাত্র বলেন, ‘স্নাতক (সম্মান) শেষ করেই পরীক্ষা দিয়েছি। চাকরি পেয়েছি শুনে বাবা-মা খুব খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু নিয়োগ পেতে দেরি হওয়ায় তাঁরাও এখন হতাশ।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র বলেন, ‘পিএসসির আবেদন-প্রক্রিয়া হয় অনলাইনে। কিন্তু বিজেএসের সবকিছু এখনো পুরোনো পদ্ধতিতে হয়। ফলে সময় বেশি লাগে। বিজেএসে ১০টা বিষয়ের কঠিন সিলেবাসের লিখিত পরীক্ষা হয়। যেহেতু নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় বেশি সময় লাগে তাই দুই বিষয়ের পরীক্ষার মধ্যে সময়ের ব্যবধান বাড়ানো হোক। এতে প্রার্থীদের দুর্ভোগ কমবে।’

তিনজন যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আলোকে বলেন, উত্তীর্ণ প্রার্থীরা যত দ্রুত চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন, ততই মামলাজট কমবে। কিন্তু নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতায় সেটি হচ্ছে না।

আইন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, গত এপ্রিলে গোয়েন্দা সংস্থার যাচাইয়ের জন্য উত্তীর্ণ ১০০ জনের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু এখনো প্রতিবেদন না আসায় আইন মন্ত্রণালয় দুবার তাগাদা দিয়ে চিঠিও দিয়েছে।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা শাখার যুগ্ম সচিব সাহেদ আলী গত সোমবার প্রথম আলোকেবলেন, ‘একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন এলেও আরেকটির আসেনি। সেটি এলেই ছাড়পত্র দেওয়া হবে।’

আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) বিকাশ কুমার সাহা বলেন, ‘দ্রুত যাচাই প্রতিবেদন দিতে আমরাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছি। কারণ, উত্তীর্ণরা দ্রুত যোগ দিতে পারলে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ দ্রুত কমবে।’

রাজশাহীতে গৃহবধূ হত্যার দায়ে স্বামীসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

রাজশাহীতে গৃহবধূ সাথী ইয়াসমিন হত্যা মামলায় তাঁর স্বামী আরিফ হোসেনসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মো. মনসুর আলম আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত বাকি আসামিরা হলেন হানিফা হাসান ইভা ও মাহফুজা জান্নাত লাইভা। তাঁরা সাথী ইয়াসমিনের স্বামীর ভাইয়ের বউ। রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের আদালত পরিদর্শক আবুল হাশেম বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার অপর আসামি আরিফের মা মর্জিনা বেগমকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী নগরের সাধুর মোড় এলাকায় স্বামীর বাড়িতে ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল বিকেলে সাথীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন আসামিরা। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিনই মৃত্যু হয় সাথীর। মারা যাওয়ার আগে হাসপাতালে তিনি পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়ে যান। এ ঘটনায় তাঁর বড় ভাই সুজন পরদিন ৪ এপ্রিল বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন। এতে চারজনকে আসামি করা হয়। তদন্ত শেষে ওই চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১১ সালে নগরের বোয়ালিয়া রানীনগরের রহমান আলীর ছেলে আরিফ হোসেনের সঙ্গে হেতম খাঁ এলাকার সাহাজিপাড়ার সাজ্জাদ হোসেনের মেয়ে সাথী ইয়াসমিনের বিয়ে হয়।

বিচিত্র

৩০টি ফুটবল মাঠের সমান টেলিস্কোপ

মহাবিশ্বে আর কোনো গ্রহে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণী তথা এলিয়েন আছে কি না, তা বহু বছর ধরেই ভাবিয়ে আসছে মানুষকে। পৃথিবীর আকাশে বিভিন্ন সময়ে ইউএফও বা অজানা উড়ন্ত বস্তুর উপস্থিতির গুজব এ ভাবনাকে করেছে আরও চাঙা। এসব প্রশ্নের উত্তরসহ অচেনা মহাবিশ্বের খুঁটিনাটি জানতে দিনরাত খাটছেন বিজ্ঞানীরা। এবার তারই অংশ হিসেবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ টেলিস্কোপ নির্মাণ করল চীন। এটির আকার প্রায় ৩০টি ফুটবল মাঠের সমান।

আধা কিলোমিটার ব্যাসের (১ হাজার ৬৪০ ফুট) এই রেডিও টেলিস্কোপটি স্থাপন করা হয়েছে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় চিজুহাও প্রদেশে। গতকাল রোববার টেলিস্কোপটি উদ্বোধন করা হয়েছে। শুরু হয়ে গেছে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমও। এরই
মধ্যে এটি প্রথম সংকেতও ধরতে পেরেছে বলে দাবি করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা।

চীনের জাতীয় মহাকাশ পর্যবেক্ষণ সংস্থার একটি প্রকল্প এই টেলিস্কোপ। পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হলেও পুরোদমে কাজ শুরু করতে আরও তিন বছর সময় লেগে যেতে পারে বলে ধারণা দেশটির বিজ্ঞানীদের। পাঁচ বছর সময় লেগেছে এটি নির্মাণে। ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি ডলার। এর ডিশে বসানো হয়েছে হাজার হাজার ত্রিভুজাকৃতির প্যানেল। এর আগে পুয়ের্তো রিকোর আরেসিবো মানমন্দিরের টেলিস্কোপটি ছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ। এর ব্যাস ৩০৫ মিটার।

চীনের ফাইভ হানড্রেড মিটার অ্যাপারচার স্ফেরিক্যাল টেলিস্কোপ (ফাস্ট) প্রকল্পটির উপব্যবস্থাপক অধ্যাপক খাঙ বোও বলেন, ‘অনেক বছর ধরে মহাকাশ পর্যবেক্ষণে আমাদের চীনের বাইরে যেতে হয়েছে। এখন আমাদের এমন একটি টেলিস্কোপ আছে, যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ।’

ভাঙন ঠেকাতে কুয়াকাটা সৈকতে ‘কেরালা মডেল’

অব্যাহত ভাঙনের কারণে সৌন্দর্য হারাতে বসেছে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। এই অবস্থায় ভাঙন থেকে সৌন্দর্যের এ লীলাভূমি রক্ষায় পরিকল্পনা নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ‘কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন’ নামের এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতের কেরালা সমুদ্রসৈকতের আদলে এখানে স্থাপন করা হবে ‘গ্রিন সি ওয়াল’ ও ‘জিওটিউব’।

গ্রিন সি ওয়াল হলো সৈকতের ভাঙন রুখতে মাটিভর্তি বড় বড় বস্তা ফেলে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করা। সেখানে ঘাস জন্মে সবুজ রং ধারণ করবে। পরিবেশবান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন এই বেষ্টনীর ওপর দিয়ে হাঁটা যাবে এবং ওপরে বসে সাগরে অপরূপ সৌন্দর্য অবগাহন করা যাবে। আর জিওটিউব হলো বালুবোঝাই প্লাস্টিকের টিউব। সৈকতের বালু ক্ষয় রোধে আধা মিটার ও এক মিটার চওড়া জিওটিউব তৈরি করে তা সৈকত থেকে ১৫-২০ মিটার দূরে সাগরের পানিতে ফেলা হবে। এতে ঢেউ বাধাগ্রস্ত হবে এবং বালু ক্ষয় বন্ধ হবে। তখন নতুন করে চর পড়ে সৈকত সাগরের দিকে বর্ধিত হবে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অব্যাহত ভাঙন থেকে সৈকত ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে বলে মনে করছে পাউবো।

পাউবোর কলাপাড়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে ভাঙন থেকে রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী (নকশা) মো. জাহাঙ্গীর কবিরসহ শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার একটি প্রতিনিধিদল গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) মাদ্রাজে একটি সেমিনারে অংশ নেয়। তখন প্রতিনিধিদলটি কেরালায় আরব সাগরের তীরে গ্রিন সি ওয়াল পরিদর্শন করে। এরপর ওই সৈকতের আদলে কুয়াকাটায় প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

পরে গত বছরের নভেম্বরের শুরুতে আইআইটি মাদ্রাজের সাগর প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ভি সুন্দর কুয়াকাটা পরিদর্শনে আসেন। তাঁর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পাউবো কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত রক্ষা ও উন্নয়নের নকশা প্রণয়ন করে। এ নকশায় কুয়াকাটায় গ্রিন সি ওয়াল নির্মাণের পাশাপাশি ও জিওটিউব বসানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

পাউবো বলছে, সবুজ বেষ্টনী ও জিওটিউবের মাধ্যমে কুয়াকাটা সৈকতকে ছোট ও সরু হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে। তাদের মতে, ভাঙনকবলিত স্থানে গ্রিন সি ওয়াল স্থাপন করা হলে ভাঙন রোধ করা যাবে। পাশাপাশি সমুদ্রের স্বাভাবিক জোয়ারের লোনা পানি প্রবেশ রোধ করা যাবে। আর ভাটার টানের সময় সৈকতের ওপরের স্তরের মিহি বালু গভীর সমুদ্রের দিকে চলে যায়। এ কারণে সৈকত ক্রমেই ছোট ও সরু হয়ে যাচ্ছে। জিওটিউব বসানো হলে সেটা রোধ হবে। এর মাধ্যমে কুয়াকাটা সৈকতকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

এদিকে ১ সেপ্টেম্বর পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙনকবলিত জিরো পয়েন্টসহ কয়েকটি এলাকা এলাকা পরিদর্শন করেন। আনিসুল ইসলাম কুয়াকাটা সৈকত নতুন করে যাতে না ভাঙে, সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা বলেন, ভাঙনের ফলে সাগরকন্যা কুয়াকাটা সৈকত সৌন্দর্য হারাচ্ছে। এর ফলে পর্যটকদের আগমন কমে যাবে, বিনিয়োগকারীরা কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। সরকার কুয়াকাটা নিয়ে ব্যাপক উন্নয়নের পরিকল্পনা নিলেও সবার আগে প্রয়োজন ভাঙন প্রতিরোধ। তা না হলে উন্নয়ন টেকসই হবে না। তাই পাউবোর ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

প্রকল্পের বিষয়ে পাউবোর কলাপাড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের প্রথম আলোকে বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের বালু ক্ষয় এবং মূল ভূখণ্ডের ভাঙন রোধে টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহারের অংশ হিসেবে ওই পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা। এর আওতায় কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব দিকে সাড়ে তিন কিলোমিটার ও পশ্চিমে দেড় কিলোমিটার এলাকা সুরক্ষিত করা হবে। ইতিমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশার কাজ শেষ হয়েছে। এখন এ-সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। সেটি অনুমোদিত হলে দুই বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।

সৈকতের কোল ঘেঁষে পানিতে জিওটিউব ফেলা হলে পর্যটকদের কোনো সমস্যা হবে কি না? নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলছেন, এই জিওটিউব পানির নিচে এমনভাবে থাকবে, যা দৃশ্যমান হবে না। ফলে জোয়ারের সময় জিওটিউবের কারণে সাগরে পর্যটকদের গোসলে কোনো সমস্যা হবে না। এ ছাড়া জিওটিউবের কারণে জেলেদের নৌকা চলাচলে যাতে সমস্যা সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়টিও প্রস্তাবিত নকশায় বিবেচনায় আনা হয়েছে।

আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ

মামলা দায়ের, আসামি শতাধিক, গ্রেপ্তার ৭

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পুলিশ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের মাজপাড়া গ্রামে গত শনিবার সকালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বখতিয়ার হোসেন এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কেরামত আলীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ইমান আলী ও শাহাবুদ্দিন নিহত হন। তাঁরা দুজনই কেরামত আলীর পক্ষের লোক। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদীন গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ইমান আলীর চাচাতো ভাই কামরুল হাসান বাদী হয়ে ৭৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ৩০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। আসামিরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। সাতজনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁরা হলেন রাহেন আলী, মোবারক হোসেন, আবদুল আজিজ, কুতুব উদ্দিন, আজিম উদ্দিন, শামীম ও মাওলা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মামলায় ঝাউদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বখতিয়ার হোসেনকে প্রধান ও মাজপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য ও একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মজিদকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। অধিকাংশ আসামিই বখতিয়ার হোসেনের সমর্থক।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধ, সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সদর উপজেলার সবগুলো ইউনিয়নের নেতা ও দলীয় চেয়ারম্যানদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। দুপুরে শহরে বঙ্গবন্ধু মার্কেটে দলীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম আখতারুজ্জামান মাসুম বলেন, প্রত্যেক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং দলীয় চেয়ারম্যানদের ডাকা হয়েছিল। এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ বিরোধে জড়ালে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানানো হয়েছে।

কর্ণফুলীপারের মেরিনার্স সড়কে যান চলাচল শুরু

চট্টগ্রামের যানজট কমবে

যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম নগরের মেরিনার্স সড়কের দ্বিতীয় অংশ। কর্ণফুলী নদীপারের এই সড়কের দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। সড়কটি ৩০ ফুট চওড়া। ফিরিঙ্গিবাজার থেকে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়কের বশিরুজ্জামান চত্বর পর্যন্ত নতুন এই সড়ক চালু হওয়ায় নগরের বহদ্দারহাট অংশের যানজট অনেকটাই কমে আসবে বলে আশা করছেন সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা।

গত শনিবার দুপুর থেকে মেরিনার্স সড়কে গাড়ি চলাচল করতে দেয় সিটি করপোরেশন। ২০১২ সালের শুরুর দিকে মেরিনার্স সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ২৫ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ার হোছাইন প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজার ও বান্দরবান থেকে আসা ঢাকাগামী গাড়িগুলো এখন থেকে শাহ আমানত সেতু পার হওয়ার পর আর বহদ্দারহাটে যেতে হবে না। এর পরিবর্তে মেরিনার্স সড়ক ব্যবহার করে গাড়িগুলো কোতোয়ালি মোড়, নিউমার্কেট ও কদমতলী সড়ক হয়ে ডিটি রোড দিয়ে ঢাকায় যেতে পারবে। এতে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার দূরত্ব যেমন কমবে, তেমনি সময়ও বাঁচবে। তিনি বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে সড়কে কার্পেটিংয়ের (পিচ) কাজ শুরু হবে। ফুটপাতও নির্মাণ করা হবে। এক মাসের মধ্যে সড়কটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, মেরিনার্স সড়কের পাশেই আশরাফ আলী সড়ক। এ সড়কের রাজাখালী সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার এই সেতুর ওপর দিয়ে ট্রাক, বাস ও অন্য ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। এ কারণে বিকল্প সড়ক হিসেবে মেরিনার্স সড়ক উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এ সড়কে যান চলাচলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য গত শনিবার নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে চিঠি দিয়েছে সিটি করপোরেশন।

গতকাল রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, মেরিনার্স সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, টেম্পো, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে। তবে সড়কের চামড়ার গুদাম থেকে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়কের বশিরুজ্জামান চত্বর পর্যন্ত পিচ নেই। রাস্তায় ধুলাবালু উড়ছে। এতে অস্বস্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। এ ছাড়া সড়কের ভেড়া মার্কেট অংশের একপাশে ফুটপাত নেই। মেরিনার্স সড়ক চালু হওয়ায় পাশের আশরাফ আলী সড়কে গতকাল গাড়ির তেমন চাপ ছিল না।

বাসচালক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন ও অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মেরিনার্স সড়ক চালু হওয়ায় এখন আর আশরাফ আলী সড়কের রাজাখালী ব্রিজ এলাকায় যানজটে পড়তে হবে না। অল্প সময়ের মধ্যেই শাহ আমানত সেতু থেকে কোতোয়ালি মোড়ে যাওয়া যাবে।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, যান চলাচলের জন্য মেরিনার্স সড়ক উন্মুক্ত করে দেওয়ায় পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, আনোয়ারা ও বাঁশখালীর মানুষ খুব সহজেই চট্টগ্রাম নগরে আসতে পারবে। এ ছাড়া নগরের বহদ্দারহাটের যানজট কিছুটা কমবে। এই সড়ক ফিরিঙ্গিবাজারের ব্রিজঘাটা থেকে সদরঘাট পর্যন্ত বর্ধিত করার পরামর্শ দেন তিনি।

সেই ইউএনও এবার সাংবাদিক পিটিয়ে এলাকাছাড়া করলেন

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আসিফ বিন ইকরামের বিরুদ্ধে সাংবাদিক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। আহত সাংবাদিককে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত সাংবাদিক হলেন সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রকাশিত দৈনিক হিজল-করচ-এর শাল্লা উপজেলা প্রতিনিধি বকুল আহমেদ তালুকদার (৪৭)। তিনি একই সঙ্গে সিলেট থেকে প্রকাশিত দৈনিক শ্যামল সিলেট-এর উপজেলা প্রতিনিধি।

আসিফ বিন ইকরাম সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় থাকতে পরিবেশবিধ্বংসী বোমামেশিন চালানোর সুযোগ দিতে আবদুল আলী নামের এক পাথর ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দুই দফায় ৩০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে রেখে দেন। এ নিয়ে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ঘটনার তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় ইউএনওর দুটি ইনক্রিমেন্ট বন্ধ রেখেছে। এ নিয়ে ‘৩০ লাখ টাকা ঘুষের সাজা দুটি ইনক্রিমেন্ট বন্ধ’ শিরোনামে গত ১ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় আরেকটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।

আহত বকুল বলেন, শাল্লা উপজেলা সদরের ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজারে তাঁর একটি মুদি দোকান আছে। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে তিনি ওই দোকানটি খোলেন। এরপর ইউএনও পুলিশ নিয়ে সেখানে যান। ইউএনও বকুলকে সামনে পেয়েই গালাগাল শুরু করে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। পরে ইউএনও পুলিশকে নির্দেশ দেন তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য। একপর্যায়ে বকুল দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে রক্ষা পান। বকুল অভিযোগ করেন, এরপর ইউএনও নিজে দোকানের জিনিসপত্র বাইরে ছুড়ে ফেলে দেন এবং সঙ্গে থাকা লোকজনকে নির্দেশ দেন পেট্রল নিয়ে এসে দোকানে আগুন দিতে। এরপর দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

বকুল তালুকদারকে গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন তাঁর সহকর্মীরা। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। তিনি জানান, এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড়ে ডান কানে কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না। একইভাবে ডান চোখে সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইউএনওর হুমকি-ধমকিতে উপজেলার সাংবাদিকেরা আতঙ্কে আছেন। ইউএনও আমাকে গুলি করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।’

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আসিফ বিন ইকরাম বলেন, ‘ওই ছেলে সাংবাদিক নয়, দোকানদার। উপজেলা পরিষদের গেটের কাছে সরকারি জায়গায় তাঁর একটি টং-দোকান আছে। তাঁকে সেটি সরিয়ে নিতে বললেও সে নেয়নি। সকালে মোবাইল কোর্ট করে সেটি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তার ধস্তাধস্তি হয়েছে।’ নিজে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও বলেন, ‘আমি হাত তুলিনি, পুলিশ তাকে কয়েকটি চড়-থাপ্পড় দিয়েছে।’

তবে শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতিকুল ইসলাম পুলিশের মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘পুলিশ কাউকে মারধর করেনি। ইউএনও সাহেব মোবাইল কোর্ট করে একটি টং-দোকান তুলে দিয়েছেন।’

এ বিষয়ে দৈনিক হিজল-করচ-এর নির্বাহী সম্পাদক এমরানুল হক চৌধুরী বলেন, ২২ সেপ্টেম্বর ইউএনও উপজেলায় ১০ টাকা কেজি ধরে সরকারিভাবে চাল বিক্রি উদ্বোধন করেন। শাল্লা সদর বাজারে চালের ডিলার মহাদেব সাহার দোকানে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু ঘরের বারান্দায় ওঠার স্থানটি কিছুটা উঁচু থাকায় সেখানে চালভর্তি বস্তা ফেলে সিঁড়ি উচু করা হয়। তখন স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ নিয়ে দৈনিক হিজল-করচ পত্রিকায় পরদিন সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় ইউএনও ক্ষুব্ধ হন। এমরানুল আরও বলেন, ‘আমি ওই সংবাদের বিষয়ে কথা বলতে ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ইউএনওকে ফোন দিলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই অশালীন ভাষায় আমাকে গালমন্দ শুরু করেন। পরে আমার কথা না শুনেই সংযোগ কেটে দেন।’

সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লতিফুর রহমান বলেন, ‘শাল্লার সাংবাদিকেরা রীতিমতো আতঙ্কে আছেন। আমরা বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি।’

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিককে মারধরের বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। আমি শুনিনি, তবে খোঁজ নিয়ে দেখব।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ

বেশির ভাগ নেতা ক্যাম্পাস ছেড়েছেন, সম্মেলন দাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিতে সহসভাপতি পদধারী নেতা আছেন ৩৮ জন। তাঁদের ২৮ জনই ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছেন। বাকি ১০ জনের মধ্যে ৫ জন সক্রিয়ভাবে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন, ৪ জন অনিয়মিত, ১ জন পালন করছেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব।

শুধু সহসভাপতিদের ক্ষেত্রে নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চলমান কমিটির সব পদের ক্ষেত্রেই এমন অবস্থা বিরাজ করছে। ২০১৩ সালের ২০ জুলাই সংগঠনটির সর্বশেষ সম্মেলন হয়। সে সময় দুই বছর মেয়াদি কমিটি করা হয়। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এরপর আর সম্মেলন হয়নি, কমিটিও হয়নি।

ক্যাম্পাসে বর্তমানে সক্রিয় নেতারা বলছেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে দলীয় কর্মসূচি করতে গিয়ে পদধারী নেতাদের পাওয়া যায় না। শুধু কর্মী দিয়ে আর কী রাজনীতি হয়। তাই ছাত্রলীগকে শক্তিশালী করতে সম্মেলনের দাবি তাঁদের।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীকে মারধরের ঘটনায় এস এম তৌহিদ আল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান খালিদ হাসান। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সভাপতি মিজানুর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান সহসভাপতি রাশেদুল ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন ১০ জন নেতা। তাঁদের ১ জন পালন করছেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদ। বাকি ৯ জনের ৬ জনই ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছেন, ৩ জন ক্যাম্পাসে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করছেন। ৮ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে ৪ জন আর ক্যাম্পাসে থাকেন না, বাকি ৪ জন ক্যাম্পাসে রাজনীতি করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটির তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কমিটিতে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক সম্পাদক পদে ৬০ জন নেতার নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে১১ থেকে ১৩ জন সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করছেন। ১০ জন ক্যাম্পাসে থাকলেও সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করেন না। কেউ কেউ মাঝেমধ্যে আসেন। কেউ কেউ একেবারেই আসেন না। কমিটির প্রায় ১৭ জন সম্পাদক পদধারী নেতা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেছেন। ২০ থেকে ২২ জন নেতার সম্পর্কে খোঁজ পাওয়া যায়নি। বর্তমান কমিটিতে সক্রিয় ৪ জন নেতা ওই ২০ থেকে ২২ জনকে চেনেন না বা কোনো দিন কর্মসূচিতে দেখেননি বলে জানিয়েছেন। কমিটিতে নাম থাকা ২০ জন সহসম্পাদক এবং ৩০ জন সদস্যের মধ্যে প্রায় ১৫ জন বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। বাকি সদস্যদের কর্মসূচিতে দেখা পাওয়া যায় না।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, গত ঈদুল ফিতরের আগে অনুষ্ঠিত সংগঠনের বর্ধিত সভায় মাত্র ৫০ জনের মতো পদধারী নেতা উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন পদধারী নেতা উপস্থিত থাকেন। বাকি সবাই কর্মী। এর আগে গত ২৪ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু পরে আর তা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৩ জন ছাত্রলীগ নেতা বলেন, কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চলে গেছেন। ভারপ্রাপ্ত হয়ে আছেন ২ জন। বেশির ভাগ নেতাও চলে গেছেন। ক্যাম্পাসে পড়াশোনা শেষ হলে নেতারা চলে যাবেন, সেটাই স্বাভাবিক। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সম্মেলন হওয়া প্রয়োজন। না হলে অনেক ত্যাগী কর্মী পদ না পেয়েই ক্যাম্পাস ছেড়ে যান। কেউ আবার শিক্ষাজীবনের শেষ সময়ে এসে পদ পেয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান। নিয়মিত সম্মেলন হলে যেমন নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়, তেমনি সংগঠন থাকে শক্তিশালী।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘জ্যেষ্ঠ নেতারা ক্যাম্পাসে থাকলে অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়। যাঁরা চলে গেছেন তাঁদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। পড়াশোনা শেষ হলে চলে যাবেনই। তবে সংগঠন ভালোভাবেই চলছে। কেন্দ্রীয় নেতারা যদি মনে করেন নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন, তবে সম্মেলন দিতে পারেন। যদি মনে করেন যাঁরা নেতৃত্বে আছেন তাঁদের দিয়ে ভালো চলছে, তবে কমিটি পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া উচিত।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের মুঠোফোনে গতকাল শনিবার একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।