ব্যাংক ও আর্থিক খাতের দুর্নীতি 'সাগর চুরি': অর্থমন্ত্রী

আবুল মাল আবদুল মুহিত । ফাইল ছবি
আবুল মাল আবদুল মুহিত । ফাইল ছবি

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রকল্প ব্যয় প্রাক্কলিত ব্যয় থেকে বেশি হয়ে যাওয়ায় মঞ্জুরি দাবি এসেছে। দুর্নীতি প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজীর সঙ্গে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে লুটপাট হয়েছে, সেটা শুধু পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি।
আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় সংসদে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের মঞ্জুরি দাবির ওপর আলোচনায় স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সংসদে ২০১৫-১৬ সালের সম্পূরক বাজেটের ওপর দেওয়া বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যদের দেওয়া ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অর্থমন্ত্রী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৩৮ কোটি ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা মঞ্জুরি বরাদ্দের দাবি তোলেন। সম্পূরক বাজেট সম্পর্কে বিরোধীদলীয় সদস্যদের সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প ব্যয় প্রাক্কলিত ব্যয় থেকে বেশি হয়ে যাওয়ায় মঞ্জুরি দাবি এসেছে। যে বাজেট দেওয়া হয়েছে, তা যৌক্তিক। তবে এটা ঠিক, দুর্নীতি প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে দেয়।

দাবির বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ডেসটিনি ও হলমার্ক কেলেঙ্কারির পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকর রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটেছে। ব্যাংক খাত থেকে টাকা চুরি হয়েছে। সব ব্যাংকের একই অবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকে যখন পচন ধরেছে, তখন অন্য ব্যাংকগুলোর অবস্থা আর বলা লাগে না। ৮০০ কোটি টাকা কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চুরি হয়ে গেল। সব চুরির সঙ্গে ওই ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত। পৌনে তিন লাখ হাজার কোটি পাচার হয়েছে। ৩০ হাজার কোটি টাকা চুরি হয়েছে। এগুলোকে পুকুর চুরি না বলে সাগর চুরি বলা যায়। এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে অর্থমন্ত্রীও একমত প্রকাশ করেন।

এর আগে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রজেকশন ইজ প্রজেকশন। এটা পরিবর্তন হতেই পারে। আমরা যেটা দিয়েছি, আগামী তিন মাসে পরে আমাদেরটাই সঠিক হবে। সেটা তারা মেনে নেবে। প্রবৃদ্ধি কোনোভাবেই ৭ দশমিক ৫-এর কম হবে না। আমাদের নিজস্ব গবেষণা আছে। আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরো অনেক দক্ষ। আমাদের তথ্য নিয়েই তারা (আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান) কাজ করে।’
আমলাতন্ত্রের কারণে বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে না—বিরোধী দলের এমন দাবির জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে বাজেট দিয়েছি, তারা তাদের জীবনে এত বড় বাজেট দেখেননি, যা গত সাত বছরে বাজেট ৯১ হাজার কোটি টাকা থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়। সেটার সঙ্গে যে তারা চলতে পারছেন। এ জন্যই তাদের ধন্যবাদ পাওয়া উচিত।’

একই সময়ে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের এক বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দুইবার জাতীয় পার্টির বাজেট দিয়েছি। এটা সর্বৈব মিথ্যা। আমি কখনো জাতীয় পার্টির বাজেট দিইনি। আমি যখন বাজেট দিয়েছি, তখন জাতীয় পার্টির জন্মই হয়নি। আমি দিয়েছি এরশাদ সাহেবের বাজেট, যখন নির্দলীয় সরকার ছিল।’
মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৯৮৮ সালে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল মাত্র নয় হাজার। এখন এই সংখ্যা ২৮ হাজার। এই ২৮ হাজারের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশকে অযথাই এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘একজন এমপি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি নিয়ে কথা বলেছেন। শিক্ষকেরা অনশন করেন এমপিওভুক্তির জন্য। আমি তাঁদের জিজ্ঞেস করতে চাই। অন্তর্ভুক্তি সম্পর্কে তাঁরা সব সময় সোচ্চার, কিন্তু কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ভুঁইফোড়, চারজন শিক্ষক একজন ছাত্র নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান। সেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে তাঁরা কেন প্রতিবাদ করেন না।’