ভবন ধসের ঝুঁকিতে আতঙ্কে প্রতিবেশীরাও

গুলজার খালের পাশের দুটি ভবনসহ একাধিক স্থাপনা হেলে পড়েছে
ছবি: প্রথম আলো

অনেক কষ্টে ও ধারকর্জ করে দোতলা ভবন করেছেন বৃদ্ধ নির্মল দাস। খালের পাশে গড়ে তোলা ভবনটিতে থাকেন পরিবার নিয়ে। খালে প্রতিরোধ দেয়ালের নির্মাণকাজের কারণে গত সোমবার পাশের তিনটি ভবন হেলে পড়েছে। কবে তাঁদের ভবনও ঝুঁকিতে পড়ে, এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন এই বৃদ্ধ।

শুধু ৭০ বছর বয়সী নির্মল দাস নন, এভাবে আতঙ্কে আছেন খালের পাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ভবন ও কাঁচা ঘরের বাসিন্দারা। তাঁদের বসতি চট্টগ্রাম নগরের মাঝিরঘাট এলাকার গুলজার খালের পাশে পার্বতী ফকিরপাড়ায়।

আরও পড়ুন

আতঙ্কিত নির্মল দাস বলেন, অনেক কষ্টে ঘর করেছেন। দুই বছর আগে ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়। এখনো সবার ধারকর্জ পরিশোধ করতে পারেননি। কিন্তু এর মধ্যে খালে কাজের কারণে আশপাশের ভবন হেলে পড়েছে। কখন তাঁদের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন।

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় গুলজার খালে চলছে প্রতিরোধ দেয়ালের নির্মাণকাজ। এ জন্য খালের পাশে লোহার পাত পুঁতে দেওয়া হয়েছে। এরপর গত সোমবার বিকেলে খালের দিকে হেলে পড়ে একটি তিনতলা, একটি দোতলা, একটি একতলা মন্দির ও একটি টিনের ঘর। ওই দিন রাতেই ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। হেলে পড়া ভবনগুলোতে অন্তত ১০টি পরিবারের বাস। গতকাল মঙ্গলবার দুটি ভবনের অংশবিশেষ অপসারণ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। পরে ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয় সিডিএ।

আরও পড়ুন

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালের ভেতর নির্মাণকাজের কারণে আরও তিনটি ভবন ও টিনের ঘর ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে।

স্থানীয় যুবক নয়ন দাস প্রথম আলোকে বলেন, খালে নির্মাণকাজের কারণে তাঁরা খুব আতঙ্কে আছেন। তিন-চার মাস আগে একটি পাঁচতলা ভবন হেলে পড়েছিল। পরে তা ভেঙে টিনের ঘর করা হয়, গত সোমবার সেটিও হেলে পড়েছে। এখন যদি খালের পাশে বাকি ভবনগুলোও হেলে পড়ে, তাহলে বাসিন্দারা কোথায় যাবেন? ঘরগুলো ভেঙে আবার নতুন করে কিছু করবে, সেই সামর্থ্য কারও নেই। তাই নির্মাণকাজের জন্য প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হোক।

তবে নির্মাণকাজ চলাকালে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী।

ভবন থেকে সরে যেতে বাধ্য হওয়া বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন
ছবি: প্রথম আলো

সিডিএর প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান বলেছেন, খালের পাড়ে ভবনগুলো নকশা অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে। খাল পাড় থেকে অন্তত ১২ ফুট দূরে ভবন নির্মাণ করতে হয়। এখানে সেটিও মানা হয়নি। এ কারণে ভবন ধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

এদিকে হেলে পড়া ভবনগুলোর অপসারণের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানান সিডিএর কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভবনগুলোর ভার কমাতে কিছু অংশ সিডিএ অপসারণ করেছে। বাকি অংশের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে সিটি করপোরেশন।

সিটি করপোরেশনের পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, হেলে পড়া ভবনমালিকদের সিটি করপোরেশন ও তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করা হবে।