ভারতফেরত শরণার্থী পুনর্বাসনে কাজ নেই?

ভারত থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ফিরে আসা শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসনবিষয়ক টাস্কফোর্সের তেমন কোনো কাজ নেই। কার্যপরিধি সংশোধনের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান যতীন্দ্রলাল ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৃতপক্ষে টাস্কফোর্সের পুনর্বাসন–সংক্রান্ত কোনো কাজ নেই। মানুষ মনে করে টাস্কফোর্স ভারত থেকে ফিরে আসা শরণার্থী, অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু (অশান্ত পরিস্থিতিতে বাস্তুভিটা থেকে স্থানচ্যুত হওয়া পরিবার) পুনর্বাসনের কাজ করবে। পার্বত্য চুক্তিতেও সেভাবে বলা আছে। কিন্তু বর্তমান কার্যপরিধিতে পুনর্বাসনকাজে সরকারকে দিকনির্দেশনা দেওয়া, সহায়তা ও সুপারিশ করা ছাড়া টাস্কফোর্সের কোনো কাজ নেই। এ অনুযায়ী প্রশাসনের করা অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু তালিকা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ২৬৬ জনের চাকরিতে পুনর্বহাল, ঋণ মওকুফ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাগত প্রায় ১৩ হাজার শরণার্থীর (এসব পরিবার সরকারিভাবে ফিরে আসেনি) ব্যাপারে সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।

গত ২৩ অক্টোবর খাগড়াছড়ি জেলা শহরের সেনানিবাস এলাকায় টাস্কফোর্সের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছাড়া কোনো লোকজন নেই। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ভারত প্রত্যাগত ১২ হাজার ২২২ পরিবারের ৬৪ হাজার ৬১২ জন শরণার্থী তালিকায় কোনো সমস্যা নেই। পার্বত্য চুক্তির পরে প্রশাসনের মাধ্যমে করা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৯০ হাজার ২০৮ জন ও ৩৮ হাজার ১৫৬ জন বাঙালি অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু তালিকা ২০০০ সালের ১৫ মে টাস্কফোর্সে সভায় অনুমোদন দেওয়ার পর বিতর্ক শুরু হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও শরণার্থী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিরা এ তালিকা নিয়ে আপত্তি করেন। তাঁদের দাবি, টাস্কফোর্সে শুধু প্রত্যাগত শরণার্থী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের কথা বলা হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্ত পরিস্থিতির সময়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের সঙ্গে সরকারের ১৯৯৭ সালে ২০ দফা চুক্তির ভিত্তিতে শরণার্থীদের পুনর্বাসনে সহযোগিতার জন্য জনপ্রতিনিধি, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, শরণার্থী প্রতিনিধির সমন্বয়ে ১০ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তিতে টাস্কফোর্সকে অঙ্গীভূত করা হয়।

যতীন্দ্রলাল ত্রিপুরা আরও বলেন, পার্বত্য চুক্তিতে টাস্কফোর্সকে শরণার্থী পুনর্বাসন ছাড়াও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু তালিকা করে পুনর্বাসনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রত্যাগত শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের ঋণ মওকুফ, মামলা প্রত্যাহার, চাকরিতে পুনর্বহালসহ পুনর্বাসন–সংক্রান্ত সব দায়িত্ব টাস্কফোর্সকে করার কথা পার্বত্য চুক্তিতে বলা হয়েছে।

টাস্কফোর্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমা বলেছেন, পার্বত্য চুক্তির আগে শরণার্থী প্রত্যাবাসনের জন্য টাস্কফোর্স গঠন ও কার্যপরিধি করা হয়। সেই কার্যপরিধি সংশোধন না করেই এ পর্যন্ত টাস্কফোর্সে কাজ চলছে। পার্বত্য চুক্তির আলোকে কার্যপরিধি সংশোধনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। টাস্কফোর্সের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সংশোধনী প্রস্তাব পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও টাস্কফোর্সের সদস্যসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেছেন, কাজ হচ্ছে না বলা যাবে না। তবে আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও নিয়মিত সভা হচ্ছে এবং সরকারের কাছে অনেক বিষয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।