ভারতের ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নে দরপত্র সহজ হচ্ছে

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক হওয়া উচিত ভারসাম্যমূলক

ভারতের দেওয়া ঋণচুক্তির (এলওসি) আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন গতিশীল করতে দরপত্রের প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে দরপত্র বিজয়ী দরদাতাদের সঙ্গে চুক্তি করে প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া গতিশীল হবে।

বাস্তবায়নের আওতাধীন প্রকল্পগুলো কার্যকরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। সেই সঙ্গে সময়মতো অর্থায়ন নিশ্চিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ উদ্যোগ প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিতে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলবে।

ঋণচুক্তি–বিষয়ক উচ্চ স্তরের প্রকল্প পর্যবেক্ষণ কমিটির প্রথম বৈঠকে গতকাল সোমবার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ঋণচুক্তির আওতায় অর্থায়িত প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার।

ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন আজ মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, প্রকল্পের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে এবং এলওসি তহবিলের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সমস্যাগুলোর সমাধান এবং প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার জন্য দুই পক্ষের সম্মিলিতভাবে নেওয়া বেশ কয়েকটি উদ্যোগের মধ্যে একটি হলো উচ্চস্তরের প্রকল্প পর্যবেক্ষণ কমিটি।

উচ্চপর্যায়ের প্রকল্প পর্যবেক্ষণ কমিটিতে বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব, ঢাকা ভারতীয় হাইকমিশনার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র ও সুরক্ষা সেবা বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ভারতীয় হাইকমিশন, ঢাকা এবং ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তারা পর্যালোচনা সভায় অংশ নেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারত-বাংলাদেশ উন্নয়ন অংশীদারত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ভারতের ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশ সরকারের কাছে ঋণচুক্তির অধীনে ভারত সরকারের মোট প্রতিশ্রুতি ৭ হাজার ৮৬২ মিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য অনুমোদিত ৫০০ মিলিয়ন ডলারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বর্তমানে ভারত সরকারের তিনটি ঋণচুক্তির আওতাধীন ৪৬টি প্রকল্পের মধ্যে ১৪টি প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে (৪১২.৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), ৮টি প্রকল্প চলমান (১০১৩.৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), ১৫টি প্রকল্প দরপত্র পর্যায়ে (৩১৯৫.৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং ১৪টি প্রকল্প ডিপিপি (৩০৮১.৩৪ মার্কিন ডলার)) প্রস্তুতি পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পগুলোর প্রায় ৮৩ শতাংশ এখনো পরিকল্পনা/খসড়া প্রকল্প প্রস্তাবনা (প্রায় ৪১ শতাংশ) এবং দরপত্র (প্রায় ৪২ শতাংশ) পর্যায়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে এ পর্যন্ত প্রায় ১২৭৬ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা মোট ঋণচুক্তির ১৭ শতাংশ। এ–জাতীয় চুক্তির আওতায় ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক এ পর্যন্ত ৭১৯ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (চুক্তির মূল্যের ৫৬ শতাংশ) বিতরণ করেছে। প্রথম ঋণচুক্তির ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানে রূপান্তরিত করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্থানীয় উপকরণ বৃদ্ধি, ক্রয়প্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং ঋণচুক্তি সংশোধনীর জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। ভারতীয় ঋণচুক্তির আওতাধীন প্রকল্পগুলোর সময়োপযোগী বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য প্রক্রিয়াগত বাধা পর্যালোচনা ও দূরীকরণে ১৮তম ঋণচুক্তি পর্যালোচনা সভার (২০-২১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য) আগে একটি প্রযুক্তিগত পর্যালোচনার জন্য ঐকমত্য হয়েছিল।

ডিপিপি প্রস্তুতি এবং দরপত্রের বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা প্রকল্পগুলো ত্বরান্বিত করার জন্য ফলোআপ ব্যবস্থা গ্রহণ করার ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। ভারতীয় ঋণচুক্তির তহবিলের বাইরে চিহ্নিত প্রকল্পগুলোর জন্য ডিপিপি প্রস্তুতি ত্বরান্বিতকরণের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে, যাতে দ্রুত দরপত্রের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া যায়।