ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি হতে পারেন শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি

সবকিছু ঠিকমতো এগোলে আগামী বছর ২৬ জানুয়ারি ভারতের ৭৩তম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হতে পারেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রস্তাবটি নিয়ে দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে প্রাথমিক কথা হয়েছে। যদিও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে দিল্লি এলে এই অনুষ্ঠানে প্রথমবারের জন্য বাংলাদেশ প্রতিনিধিত্ব করবে। এর আগে প্রতিবেশী এই দেশের কোনো রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হননি।

অবশ্য এর আগে বাংলাদেশ সম্মানিত হয়েছে। চলতি বছরের প্রজাতন্ত্র দিবসের বর্ণাঢ্য প্যারেডের সূচনা করেছিল বাংলাদেশের তিন বাহিনীর ১২২ জনের সমন্বিত চৌকস দল। তাঁদের প্যারেডের মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করার পাশাপাশি উদ্‌যাপিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। কোভিডের কারণে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে কোনো বিদেশি রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান উপস্থিত ছিলেন না। আগামী বছর শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে ভারতে এলে তা হবে দুই দেশের সম্পর্কের ‘সোনালি অধ্যায়ের’ আরও এক অভিনব স্বীকৃতি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘এখনো বলার মতো সময় আসেনি।’ দিল্লিতে বাংলাদেশের দূতাবাসের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে না।’ তবে দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রই প্রস্তাবের বিষয়টি স্বীকার করেছে।

ভারতের স্বাধীনতার তিন বছর পর ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি সংবিধান সমর্পিত হয়। প্রজাতন্ত্র ভারতের পথচলার সেই শুরু। সেদিন থেকে শুরু আনুষ্ঠানিক প্যারেড, যা ১৯৫৫ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে প্রশস্ত রাজপথে। এই প্যারেড হয়ে উঠেছে ভারতের শক্তি, সমৃদ্ধি ও বৈভবের গৌরবগাথা। বিদেশি রাষ্ট্রনায়কেরা যার সাক্ষী থেকেছেন। প্যারেডে ফ্রান্স ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সেনানী ও তাদের ব্যান্ড যথাক্রমে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে অংশ নিলেও বাংলাদেশের বাহিনীর মতো কুচকাওয়াজের সূচনা কেউ করেনি। সেই দিক থেকে ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবস ছিল ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশের কাছেই অনন্য ও অভিনব।

যে দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারত সক্রিয় অংশ নিয়েছিল, যে দেশকে ভারত ‘সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য প্রতিবেশীর’ স্বীকৃতি দেয়, ৫০ বছরে সেই দেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীকে প্রজাতন্ত্র দিবসে বিশেষ অতিথির মর্যাদা কেন দেওয়া হয়নি, তা বিস্ময়কর! অথচ ভারতের প্রতিবেশীদের কেউ কেউ একাধিকবার এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেছেন। দেশ হিসেবে ভুটান এসেছে চারবার। নেপাল ও শ্রীলঙ্কা দুবার। মালদ্বীপ, আফগানিস্তান ও মিয়ানমার একবার করে। অবিভক্ত পাকিস্তানও অংশ নিয়েছে দুবার, ১৯৫৫ ও ১৯৬৫ সালে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে দুই দেশেই বছরব্যাপী চলছে নানান অনুষ্ঠান। গত মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে সে দেশে যাবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

তার ঠিক আগে ৬ ডিসেম্বর ভারতে এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু স্মারক ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধুর অপর মেয়ে শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হিসেবে ভারতে এলে বছরব্যাপী চলা এই উদ্‌যাপন এক ভিন্ন মাত্রা পাবে।

তবে বার্ষিক এই বর্ণাঢ্য প্যারেড আগামী বছর প্রথামাফিক রাজপথে হতে পারবে কি না, সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। রাজপথজুড়ে চলছে ‘সেন্ট্রাল ভিস্তা’ নির্মাণযজ্ঞ। তৈরি হচ্ছে নতুন সংসদ ভবন। রাজপথের দুধারে বোট ক্লাবের পাশে সরকারি অফিসগুলো ভেঙে ফেলা হবে। তৈরি হবে অত্যাধুনিক ভবন। জানুয়ারির মধ্যে রাজপথ ও তার সংলগ্ন চত্বর প্যারেডযোগ্য করে তোলা সম্ভব হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠে গেছে।

সরকারিভাবে এই প্যারেডের দায়িত্ব ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের। তাকে সাহায্য করে বিভিন্ন সরকারি বিভাগ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের দাবি, প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে রাজপথ তৈরি করে ফেলতে যথাসাধ্য করা হচ্ছে। তা সম্ভব না হলে নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে। সেটা কী, সে বিষয়ে এই মন্ত্রণালয় এত আগে কিছু জানাতে নারাজ। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত প্যারেড হয়েছে লাল কেল্লা, রামলীলা ময়দান বা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের মতো স্থানে। ১৯৫৫ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজপথে। রাজপথ অগোছালো থাকলে অন্যত্র প্যারেডের জৌলুশ কমবে।