ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে বাংলাদেশ,পরিস্থিতি পর্যালোচনার পরামর্শ

‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: কার লাভ, কার ক্ষতি’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এসআইপিজির সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস)
ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান এখন পর্যন্ত বেশ নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যপূর্ণ। তবে পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের পর্যালোচনা করার প্রয়োজন হতে পারে। ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: কার লাভ, কার ক্ষতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এমন অভিমত দিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার ওই সেমিনারের আয়োজক ছিল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এসআইপিজির সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস)।

সেমিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (এসআইপিজি) ফেলো অধ্যাপক মো. শহীদুল হক। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান এখন পর্যন্ত বেশ নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যপূর্ণ। তবে পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের পর্যালোচনা করার প্রয়োজন হতে পারে।

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় এ যুদ্ধের প্রভাব; জাতিসংঘের ভূমিকাসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে শহীদুল হক বলেন, নিরপেক্ষতা সব সময় পছন্দের পথ না-ও হতে পারে। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন একটি অবস্থান নিয়েছে। তবে বাংলাদেশ যে অবস্থানই নিক না কেন, এ যুদ্ধের একটা প্রভাব পড়বে।

শহীদুল হকের মতে, এ যুদ্ধে বৈশ্বিক সমরাস্ত্র উৎপাদন শিল্প লাভবান হবে এবং মানবিকতার পরাজয় হবে। জাতিসংঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনগুলো এখানে মানা হচ্ছে না এবং দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশ এই যুদ্ধের ব্যাপারে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে।

মুক্ত আলোচনায় এসআইপিজির জ্যেষ্ঠ ফেলো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কিয়েভের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রধান লক্ষ্য। পুতিন এই যুদ্ধ বন্ধ করবেন না, যদি না ইউক্রেন ঘোষণা করে যে তারা কখনো ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেবে না।

প্যানেল আলোচক নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, রাশিয়ার আগ্রাসনকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার ফল। এই অসম যুদ্ধে ইউক্রেন বিশ্বরাজনীতিতে নিছক একটি খেলার পাত্রে পরিণত হয়েছে।

অপর প্যানেল আলোচক নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হেলাল মহিউদ্দিন বলেন, যুদ্ধের নামে মানুষ হত্যা কখনো কাম্য নয়। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে অ-ইউরোপীয় শরণার্থীরা যে বর্ণবাদের মুখোমুখি হচ্ছেন, তা বন্ধ করার আহ্বান জানান।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ইশরাত জাকিয়া সুলতানা বলেন, অতীতের সব সংকটের মতো, এই যুদ্ধের ভয়াবহতাও নারী ও শিশুদেরই ওপর পড়বে। এ ধরনের সংকটের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে নারী ও শিশুদের রক্ষা করার জন্য এখনো কোনো সামগ্রিক বৈশ্বিক কৌশল নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রথম আলোর কূটনৈতিক প্রতিবেদক রাহীদ এজাজ বলেন, পাশ্চাত্যের গণমাধ্যম এই যুদ্ধের খবর পক্ষপাতহীন এবং কোনো রকম অসংগতি ছাড়া তুলে ধরছে, এমনটা বলার সুযোগ নেই। তাই আসলেই কী ঘটছে, সেটা যথাযথ যাচাইয়ের জন্য প্রচলিত গণমাধ্যম সূত্রের পাশাপাশি অপ্রচলিত ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও খুঁজে দেখা জরুরি।

সেমিনারের সঞ্চালক এবং সিপিএস ও এসআইপিজির পরিচালক তৌফিক এম হক বলেন, এই যুদ্ধের ফলে বিশ্ব বদলে যাবে। এ ব্যাপারে সচেতন থেকে পরিস্থিতির ওপর সবার দৃষ্টি রাখা উচিত।

সিপিএসের সমন্বয়ক ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্র ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুল ওহাব আলোচনায় স্বাগত বক্তৃতা করেন।