ভাসানচরের প্রশংসায় জাতিসংঘ
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনের সভাপতি বলকান ভজকির রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে ভাসানচর প্রকল্পের প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে, সংকটের সময় উদ্বাস্তুদের কীভাবে সহযোগিতা করতে হয়, ভাসানচর সেটির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে আলোচনা শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
দুদিনের সফরে বলকান ভজকির আজ সকালে ঢাকায় আসেন। সফরের শুরুতে সকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। দুপুরে তিনি ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের একাংশকে স্থানান্তরের প্রসঙ্গে বলকান ভজকির বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা দেখতে আমি নিজে সেখানে (ভাসানচরে) যেতে পারিনি। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে ভাসানচরের একটি ভিডিও দেখিয়েছেন। যে ধরনের উচ্চমানের অবকাঠামো সেখানে হয়েছে, তা প্রশংসনীয়। ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সংকটের সময়ে উদ্বাস্তুদের কীভাবে সহযোগিতা করতে হয়, ভাষানচর সেটির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমি কক্সবাজারে যাচ্ছি এবং সেখান থেকে মিয়ানমারকে একটি বার্তা দেব।’
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে জানতে চাইলে বলকান ভজকির বলেন, ‘জাতিসংঘের অন্যতম অগ্রাধিকার হচ্ছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের প্রতি সমর্থন করি, যাতে অবাধে তথ্য সংগ্রহ করা যায় এবং জনমত গঠনে সহায়তা হয়। যাতে জনগণ সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। বেলারুশে যা হয়েছে, সেটি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আমি অবিলম্বে ওই সাংবাদিকের মুক্তি চাই।’
মিয়ানমার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলকান ভজকির বলেন, ‘সাধারণ পরিষদে ছয় সপ্তাহ আগে মিয়ানমার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনায় আমরা জেনেছি, জাতিসংঘের বিশেষ দূতকে ওই দেশে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি। এখানে মনে রাখতে হবে, বিশেষ দূতের দায়িত্ব রোহিঙ্গা–সম্পর্কিত, কিন্তু এ সংকটে তাঁকে আমরা ব্যবহার করতে চাইছি। আমি এখান থেকে ফিরে যাওয়ার পর মিয়ানমার নিয়ে আরেকটি বৈঠকের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।
সাধারণ পরিষদে মিয়ানমার নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে উল্লেখ করে ভজকির জানান, একটি গ্রুপ হচ্ছে আসিয়ান গ্রুপ এবং আরেকটি কোর গ্রুপ। আসিয়ানের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রচার করা হয়েছে এবং কোর গ্রুপ মনে করে, এখনই একটি রেজল্যুশন নেওয়া উচিত। মিয়ানমার নিয়ে দুই পক্ষের মতবিরোধ একেবারে স্পষ্ট। মূল বিষয় হচ্ছে মিয়ানমারে যে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, সেটিকে কীভাবে দেখা হচ্ছে। মিয়ানমার সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং চাপ প্রয়োগ করাকে আসিয়ান দেশগুলো সমর্থন করে না।
ভজকির বলেন, ‘অন্যদিকে কোর গ্রুপ সামরিক সরকারকে নিন্দা জানায় এবং এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চায়। তুরস্কের একজন নাগরিক হিসেবে বলতে চাই, সেখানে অনেকবার সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই, আমি যেকোনো দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরোধী। কাজেই সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান নিয়ে কোনো অস্পষ্টতা নেই। তবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিতে হবে। আমার অনুপস্থিতিতে দুই গ্রুপ আলোচনায় বসেছিল। আমি ফিরে গিয়ে খোঁজ নেব। আমি দুই গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করে একমত হওয়ার চেষ্টা করব। কারণ, এটি শুধু মিয়ানমারের ইস্যু নয়, বরং সারা বিশ্বের ইস্যু। আমি আশাবাদী, মিয়ানমার ইস্যুতে একটি মতৈক্যে পৌঁছাতে পারব।’