‘ভাসানচর নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই’

রোহিঙ্গাদের আগমন উপলক্ষে সেজেছিল ভাসানচরফাইল ছবি: প্রথম আলো

রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে মনে করছে বাংলাদেশ। কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে সরকার নিজের টাকায় ভাসানচরে তাদের একাংশের উন্নত ও নিরাপদ জীবন আর জীবিকা নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে। আর কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গারা নিজের ইচ্ছায় ভাসানচরে গেছেন।

জেনেভায় জাতিসংঘ দপ্তরে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ম. মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) হাইকমিশনারকে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়ে এ আশ্বাস দেন।

ভাসানচরে যাওয়ার পর রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে, যা প্রকাশ হয়েছে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের কাছে এ বিষয়টিও তুলে ধরেন জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।
ফিলিপ্পো গ্রান্ডি
ছবি: সংগৃহীত

মোস্তাফিজুর রহমান আজ বুধবার জেনেভা থেকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফিলিপ্পো গ্রান্ডির সঙ্গে আলোচনাটি পূর্বনির্ধারিত ছিল। আলোচনায় রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়টিতে সরকারের অবস্থান তাঁকে জানিয়েছি।’

প্রসঙ্গত, ফিলিপ্পো গ্রান্ডি রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মঙ্গলবার একটি টুইট করেন। গ্রান্ডি টুইটে লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার খবরে আমি উদ্বিগ্ন। রোহিঙ্গাদের অভিমত আর সেখানকার পরিস্থিতি জানতে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এবং জাতিসংঘের অন্যান্য অংশীজন ভাসানচরে যাওয়ার সুযোগ পেতে চায়। কেননা যেকোনো স্থানান্তর স্বেচ্ছায় আর তথ্যভিত্তিক হওয়া উচিত।’

ফিলিপ্পো গ্রান্ডির সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই বলে তাঁকে জানিয়েছি। স্থানান্তরের পেছনে সীমিত জায়গায় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান, জীবন-জীবিকার অনিশ্চয়তা, স্থানীয় আর্থসামাজিক ও পরিবেশগত অবস্থার চরম বিপর্যয় এবং ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরেছি।’

জেনেভায় জাতিসংঘ দপ্তরে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ম. মোস্তাফিজুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের নিজের অর্থায়নে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য আরও উন্নত জীবনমান, জীবিকা ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে। রোহিঙ্গারা নিজেদের ইচ্ছায় ভাসানচরে গেছে।’

ভাসানচরে যাওয়ার পর রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে, যা প্রকাশ হয়েছে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের কাছে এ বিষয়টিও তুলে ধরেন জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।

বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মিয়ানমার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে গত তিন বছরেও রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি।
মোস্তাফিজুর রহমান

এই পরিস্থিতিতে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি এবং মিয়ানমারের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে এ সমস্যার টেকসই সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান তিনি। এ ক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ, আসিয়ান ও মিয়ানমারে বিনিয়োগকারীসহ সব দেশের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ফিলিপ্পো গ্রান্ডি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই এই সংকটের সমাধান করতে হবে বলে হাইকমিশনার একমত পোষণ করেন। এ লক্ষ্যে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে আশ্বস্ত করেন তিনি।

আরও পড়ুন