ভাস্কর্যে ডাকহরকরা

কুষ্টিয়া শহরের নিশান মোড়ে ডাকহরকরার ভাস্কর্য। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
কুষ্টিয়া শহরের নিশান মোড়ে ডাকহরকরার ভাস্কর্য। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো

বাঁ হাতে হারিকেন ও বল্লম। বল্লমের আগার নিচে একটি ছোট্ট ঘণ্টি। ডান হাতে লাঠির আগায় কাঁধে রাখা চিঠির বস্তা। মাথায় পাগড়ি, পরনে ধুতি। রাতের আঁধার ভেদ করে ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে চলেছেন সামনের দিকে। উদ্দেশ্য সঠিক সময়ে বার্তা পৌঁছে দেওয়া। নাম তাঁর ডাকহরকরা। ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তান আমল পর্যন্ত চিঠিপত্রাদি আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই ডাকহরকরার।
কবি সুকান্তের ‘রানার’ কবিতাটি সলিল চৌধুরীর সুরে গেয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তাতে ডাকহরকরার ন্যায়নিষ্ঠতা ও দায়িত্ববোধের কথা আছে, কী দরদ দিয়েই-না ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ডাকহরকরার দুঃসহ জীবনযাপনের ছবি।
সময় পাল্টেছে। উন্নত প্রযুক্তির এই বিশ্বে ডাক বহন এখন এক লুপ্ত পেশার নাম, শুধুই ইতিহাস। সময়ের সেই স্মৃতি ধরে রাখতে কুষ্টিয়া পৌরসভার হাউজিং এলাকায় নিশান মোড়ে ডাকহরকরার একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে।
পৌরবাসীর কাছে যাবতীয় সুখবর পৌঁছে যাক—এমন প্রতীকী ব্যঞ্জনাই সৃষ্টি করা হয়েছে ভাস্কর্যটি দিয়ে। নতুন প্রজন্মের কাছে সেই সময়ের ডাকহরকরাকে চিনিয়ে দিতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে কুষ্টিয়া পৌরসভা।
এ ছাড়া পাশেই কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কসবা গ্রামের সন্তান গগন হরকরা। ‘আমি কোথায় পাব তারে/ আমার মনের মানুষ যে রে’ গানের রচয়িতা গগন হরকরা। ডাকঘরের সামান্য কর্মচারী হয়েও দৃষ্টি কেড়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের। সান্নিধ্য পেয়েছিলেন ফকির লালন শাহের। কুষ্টিয়ার সেই কৃতী মানব গগন হরকরা এই ভাস্কর্য নির্মাণে অনুপ্রেরণার একটি উৎস।
পৌরসভা প্রকৌশল শাখা থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেল, ২০১৪ সালে পৌর মেয়র আনোয়ার আলী প্রথম এই ভাস্কর্য নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর পৌরসভার মাসিক সভায় এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাব পাস হয়। ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে ভাস্কর্যের নির্মাণকাজ শুরু করেন শিল্পী ফয়সাল মাহমুদ। মাত্র দুই মাসে ২৬ মে কাজ শেষ করেন তিনি।
শহরের হাউজিং এলাকায় চার রাস্তার নিশান মোড়ে স্থাপিত এই ভাস্কর্যের নিচে চারদিকে চারটি ডাকবাক্স রয়েছে। এর পশ্চিমেরটিতে লেখা রয়েছে কুষ্টিয়া শহর, পুবেরটায় লেখা বিদেশ আর দক্ষিণ ও উত্তরের দুটিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানালেন, ‘মানুষের কাছে মানুষের বার্তা বহন করে ছুটে চলত ডাকহরকরা। হাতের বল্লম নিরাপত্তা দিত। আমরা পৌরবাসীর কাছে ভালো বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। সে জন্যই শহরের নিশান মোড়ে ডাকহরকরার ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। এটি তৈরির সময় খ্যাতিমান গগন হরকরার কথাও মাথায় রাখা হয়েছিল।’
রবিউল ইসলামের মতে, দেশের আর কোথাও ডাকহরকরার এমন ভাস্কর্য আছে বলে তাঁর জানা নেই।