ভিক্ষা করে জীবন চলছে বীরাঙ্গনা চাইন্দা উর

চাইন্দা উ মারমা
চাইন্দা উ মারমা

ভিক্ষা করে জীবন চলছে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার বীরঙ্গনা চাইন্দা উ মারমার। মহালছড়ির আরেক বীরাঙ্গনা হ্লাম্রা সং মারমা স্বজনদের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও আদিবাসী নেতাদের দাবি, স্বীকৃতি দেওয়া হোক এই দুই বীরাঙ্গনাকে। একই সঙ্গে দুই বীরাঙ্গনার পুনর্বাসনও দাবি করেছেন তাঁরা।
গত শুক্রবার বিকেলে চাইন্দা উ মারমার সঙ্গে কথা হয় মহালছড়ির থলিপাড়া গ্রামে। তখন তিনি ভিক্ষা শেষে মাত্র বাড়িতে ফেরেন।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. মাসুদ করিম বলেন, ‘বীরাঙ্গনাদের দুর্দশার বিষয়টি নানা কারণে প্রকাশ পায়নি। এখন প্রাথমিকভাবে সহযোগিতার উদ্যোগ নেব। পরে সরকারি স্বীকৃতির জন্য তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে।’
মহালছড়ি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার চোহ্লা প্রু চৌধুরী জানান, ১৯৭১ সালে চাইন্দা উ ও হ্লাম্রা সং মারমাসহ কয়েকজনকে হানাদাররা ধরে নিয়ে যায়।
চাইন্দা উ জানান, সরকারি কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি তাঁকে দেখতে আসেননি। তিনি জানান, ১৯৭১ সালে তাঁর বয়স ছিল আনুমানিক ২৪ থেকে ২৬ বছর। অনেক মেয়েকে তিনি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হতে দেখেছেন। চাইন্দা উ জানান, একদিন হঠাৎ হানাদাররা তাঁকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
চাইন্দা উ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ফিরে আসার পর সমাজ তাঁকে ভালো চোখে দেখেনি। তবে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন ঘটেছে। এখন সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা খাবার আর চাল দেন। অন্যরা সহানুভূতি দেখান ও ভিক্ষা দেন।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার চোহ্লা প্রু চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর যোগাযোগের সমস্যার কারণে মুক্তিযুদ্ধকালীন অনেক অত্যাচার-নির্যাতনের কথা জানাতে পারিনি। পরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশে অনেক কিছু চাপা পড়েছে।’
মহালছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হ্লা ব্রে চাই মারমা বলেন, ‘চাইন্দা উ মারমাসহ বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযুদ্ধে যে অবদান, সে তুলনায় কিছুই করতে পারিনি। ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের সাহায্যের চেষ্টা করি। সরকারের উচিত যথাযথ স্বীকৃতি দিয়ে তাঁদের সহযোগিতা করা।’
থলিপাড়া মৌজার হেডম্যান কালাচান চৌধুরী বলেন, বীরাঙ্গনারা শেষ বয়সে এসে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামছেন। এটা সবার জন্য লজ্জার। বেশি লজ্জা সরকার ও প্রশাসনের।