ভুল পরিকল্পনার খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ

  • মার্চ মাসে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ওপর গণশুনানি হবে।

  • গ্যাসের পর হবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে শুনানি।

প্রতীকী

চাহিদা না থাকায় সরকার অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নিতে পারছে না। কিন্তু ভাড়া বাবদ টাকা ঠিকই দিতে হচ্ছে। গত এক দশকে শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া বাবদ সরকারের খরচ হয়েছে ৭০ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতের মতোই সরকারের ভুল পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতা পেয়ে বসেছে গ্যাস খাতেও। অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর না দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে চড়া দামের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)। এসবের ফল হচ্ছে, বারবার বাড়ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। আর বাড়তি খরচের বোঝা চাপছে গ্রাহকের ওপর।

পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি)। আগামী ২১ মার্চ থেকে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ওপর গণশুনানি শুরু হবে। এরপর হবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে শুনানি। এর আগে গত নভেম্বরে বেড়েছিল জ্বালানি তেলের দাম। এমনিতেই নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের কষ্ট বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতেও সাধারণ মানুষের জন্য কোনো সুখবর নেই। উল্টো জীবনযাত্রার ব্যয়ও আরও বাড়বে।

বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে সরকারের নীতি ও পরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন তুলেছে বেসরকারি নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। নতুন করে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তারা। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা প্রাক্কলনে সরকারের ভুল ছিল। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনসক্ষমতার বিপরীতে চাহিদার বিরাট পার্থক্য তৈরি হয়েছে। এর ফল হচ্ছে, অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনে সরকার যে টাকা ব্যয় করছে, তা ভোক্তার ঘাড়ে গিয়ে পড়ছে। ভোক্তার ওপর বাড়তি খরচের বোঝা চাপালে সমাধান হবে না, ভোক্তা তো এর জন্য দায়ী নয়। অন্যদিকে একটি গোষ্ঠী সরকারকে গ্যাস আমদানির দিকে নিয়ে গেছে। বেশি দামে গ্যাস আমদানি করে এই খরচ গ্রাহকের কাছ থেকে নিতে চাচ্ছে সরকার।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া বাড়ছে

স্বল্প মেয়াদে ভাড়াভিত্তিক ও দীর্ঘ মেয়াদে আইপিপি (ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। নির্মাণের আগেই এসব কেন্দ্রের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করতে হয়। এ চুক্তি অনুসারে বিদ্যুৎ নিতে না পারলে কেন্দ্রগুলোকে সক্ষমতার ভাড়া দিতে হয়, যা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা কেন্দ্রভাড়া নামে পরিচিত। তাই অলস কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়তে থাকলে বিদ্যুৎ না কিনেই হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হয় পিডিবিকে।

পিডিবি সূত্র বলছে, ১০০ মেগাওয়াট একটি কেন্দ্রের ভাড়া (যদি উৎপাদন না করতে হয়) বছরে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। এর চেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া আরও বেশি। যেমন কয়লাচালিত ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নিতে না পারায় মাসে পিডিবিকে ভাড়া দিতে হচ্ছে ১৩০ কোটি টাকা। গত বছর এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ইউনিটপ্রতি খরচ হয়েছে ৮ দশমিক ৬ টাকা। আগের বছর এটি ছিল ৬ দশমিক ৩ টাকা। সঞ্চালন লাইন তৈরি না হওয়ায় এ কেন্দ্র থেকে সক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ নেওয়া যাচ্ছে না।

সিপিডি বলছে, শুরু থেকেই বিদ্যুৎ চাহিদার প্রক্ষেপণে ভুল থাকায় অতিরিক্ত সক্ষমতা বেড়েছে। আবার উৎপাদনসক্ষমতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন তৈরি করা যায়নি। সরকার বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র আনতে না পারায় বেসরকারি খাতের স্বল্প মেয়াদের ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র মেয়াদ শেষেও চালু রাখতে হচ্ছে। ৯২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এমন ১২টি স্বল্পমেয়াদি বিদ্যুৎকেন্দ্র এখনো চালু আছে।

দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি হিসেবে মূলত ব্যবহৃত হয় গ্যাস, কয়লা, ফার্নেস তেল ও ডিজেল। এবার পিডিবি দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে বলেছে, গ্যাস-সংকটের কারণে গ্যাসভিত্তিক অধিকাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তরল জ্বালানি ফার্নেস তেলচালিত কেন্দ্র থেকে বেশি বিদ্যুৎ নেওয়া হচ্ছে। ফার্নেস তেল আমদানিতে এখন শুল্ক ও কর বাবদ খরচ বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। কয়লার দামও বেড়েছে বিশ্ববাজারে। এলএনজির দাম বাড়ায় ইতিমধ্যেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জমা পড়েছে। এসব কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো না হলে চলতি অর্থবছরে ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে পিডিবিকে। তাই পাইকারি পর্যায়ে ৬৪ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পিডিবির কাছ থেকেই দেশের ছয়টি বিতরণ কোম্পানি বিদ্যুৎ কেনে। পিডিবি দাম বাড়ালে স্বাভাবিক কারণেই বিতরণ কোম্পানিগুলোও বিদ্যুতের দাম বাড়ায়। ইতিমধ্যে গ্রাহক পর্যায়েও দাম বাড়ানোর আবেদন করেছে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো।

১১ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ খাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইকোনমিকস ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া বাবদ পিডিবির খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি।

বিদ্যুতের উৎপাদনসক্ষমতা আরও বাড়ছে

দেশের প্রায় শতভাগ এলাকা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। এরপরও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা থেমে নেই। ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে ১৯ হাজার ৬৫১ মেগাওয়াট নতুন সক্ষমতা যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে পুরোনো সক্ষমতা থেকে বাদ পড়বে মাত্র ৩ হাজার ৯৯০ মেগাওয়াট। ২০২৫ সালে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনসক্ষমতা হবে ৩৪ হাজার ৩৪৫ মেগাওয়াট। তখন সর্বোচ্চ চাহিদা হতে পারে ১৯ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। এটি পিডিবিরই প্রক্ষেপণ।

বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রভাড়া দিতে হলেও অতিরিক্ত সক্ষমতার বিষয়টি ঠিক নয়, এটা প্রয়োজনীয়। প্রাথমিক জ্বালানির সীমাবদ্ধতা থাকায় বিভিন্ন রকম বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হচ্ছে। গ্যাসের সংকটে তেলচালিত কেন্দ্র চালানো হচ্ছে। লোডশেড হচ্ছে না, মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে—এটাই বড় কথা।

বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনসক্ষমতা দেশে ২২ হাজার ৬৬ মেগাওয়াট। দিনে উৎপাদিত হচ্ছে ৯ থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট। এ পর্যন্ত পিডিবি দিনে সর্বোচ্চ উৎপাদন করেছে ১৩ হাজার ৭৯২ মেগাওয়াট, গত বছরের ২৭ এপ্রিল।

সবাই লাভে, পিডিবি ছাড়া

পিডিবি ছাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের সব প্রতিষ্ঠান মুনাফায় আছে। ঘাটতি মোকাবিলায় প্রতিবছর ভর্তুকি পাচ্ছে পিডিবি। এলএনজি আমদানির জন্য পেট্রোবাংলাকেও ভর্তুকি দেয় সরকার। ভর্তুকির চাপ বাড়ায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বিদ্যুৎ খাতে বিতরণ কোম্পানির মধ্যে ডিপিডিসির গত অর্থবছরে নিট মুনাফা করেছে প্রায় ১০৮ কোটি টাকা। ডেসকোর নিট মুনাফা ৭৩ কোটি টাকা। পল্লী বিদ্যুতের নিট মুনাফা ২০ কোটি টাকা। ওজোপাডিকোর নিট মুনাফা ২৪ কোটি টাকা। নেসকোর মুনাফা প্রায় ১৮ কোটি টাকা। আর বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র কোম্পানি পিজিসিবি গত অর্থবছরে মুনাফা করেছে ৩৩৭ কোটি টাকা। মুনাফায় থেকেও প্রতিটি কোম্পানি বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি বিতরণ ও সঞ্চালন চার্জ বাড়ানোর আবেদন করেছে।

অন্য দিকে গ্যাস খাতে পেট্রোবাংলা গত অর্থবছরে দুই হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মধ্যে তিতাস মুনাফা করেছে ৩৪৬ কোটি টাকা। জালালাবাদ ২১৮ কোটি, বাখরাবাদ ১২৬ কোটি, কর্ণফুলী ৩৫১ কোটি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি ৬ কোটি এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির মুনাফা ৫৯ কোটি টাকা। গ্যাস খাতের একমাত্র সঞ্চালন কোম্পানি জিটিসিএল মুনাফা করেছে ২৩৭ কোটি টাকা। ট্যাক্স, ভ্যাট ও ফি বাবদ সরকারি কোষাগারে দিয়েছে ৭৫৩ কোটি টাকা।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কোম্পানিও এখন শোষণ করছে। মুনাফায় থাকায় পরও তারা দাম বাড়াতে চায়। মিথ্যা তথ্য দিয়ে গ্রাহককে ঠকাচ্ছে, কোম্পানিগুলো জোটগতভাবে এগুলো করছে।

গ্যাসের খরচ বাড়াচ্ছে এলএনজি

পেট্রোবাংলার দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বাড়তি দামে আমদানি করায় গ্যাসের ইউনিটপ্রতি (ঘনমিটার) গড় খরচ পড়ছে ২০ টাকা ৩৬ পয়সা। আর গ্রাহকের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ৯ টাকা ৩৭ পয়সা। তাই দাম শতভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

গ্যাস সরবরাহের খরচের একটি হিসাব বিইআরসিতে পাঠিয়েছে পেট্রোবাংলা। এতে বলা হয়, দেশীয় কোম্পানির উৎপাদিত গ্যাসের খরচ ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ২৭ পয়সা। আর দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে উৎপাদিত গ্যাসের খরচ ২ টাকা ৯১ পয়সা। আর আমদানি করা গ্যাসের ক্ষেত্রে এ বছর প্রতি ইউনিটে খরচ হবে ৫০ টাকা ৩৯ পয়সা। কমিশনকে দেওয়া চিঠিতে পেট্রোবাংলা বলেছে, এ বছর এলএনজি আমদানির জন্য ৪৪ হাজার ২৬৫ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে।

পেট্রোবাংলার হিসাব বলছে, এ বছর মোট সরবরাহ করা গ্যাসের ৭৩ শতাংশ আসবে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে। এর জন্য পেট্রোবাংলার খরচ হবে প্রায় ৫ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা। আর বাকি ২৭ শতাংশ গ্যাস আসবে আমদানি থেকে, যার জন্য খরচ হবে ৪৪ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। বাড়তি দামে গ্যাস আমদানির জন্যই গ্রাহকের ওপর চাপ বাড়ছে।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ার মূল কারণ হচ্ছে এলএনজি আমদানি। বিশেষ করে খোলাবাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে এখন। এটি না হলে এতটা প্রভাব পড়ত না।

দেশে গত এক যুগে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে তেমন জোর দেওয়া হয়নি। গ্যাসসংকট সমাধানে ২০১৮ থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। দিনে দিনে উৎপাদন কমেছে, আমদানিনির্ভরতা বেড়েছে। কিন্তু নির্ধারিত দামে আমদানির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে শুধু দুটি দেশের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। ফলে চড়া দামে খোলাবাজার থেকে এলএনজি কিনতে হচ্ছে।

ভোক্তার ওপরই চাপ

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মতো কৌশলগত পণ্যের দাম বাড়লে এর প্রভাব পড়ে উৎপাদনে। এতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে। তবে সবচেয়ে বেশি শঙ্কায় আছে উৎপাদনমুখী শিল্প খাত। রপ্তানিমুখী বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ করেছেন।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ কোম্পানি থেকে সরকার লভ্যাংশ নিচ্ছে, রাজস্ব নিচ্ছে। এখন দাম না বাড়ালেই পারে। বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। দফায় দফায় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ালে এ শিল্প দাঁড়াতে পারবে না।

ক্যাব বলছে, এক দশকে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বেড়েছে ১২৯ শতাংশ। গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত দুই চুলার গ্যাসের মাসিক বিল ৪০০ থেকে বেড়ে ৯৭৫ টাকা হয়েছে। এখন তা ২ হাজার ১০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রস্তাব নিয়ে আগামী মাসে গণশুনানি করবে বিইআরসি।

অন্য দিকে গত এক দশকে পাইকারি বিদ্যুতের দাম ১১৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে এবং খুচরা দাম প্রায় ৯০ শতাংশ বেড়েছে। এখন নতুন করে পাইকারি পর্যায়ে ৬৪ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে ৬৬ থেকে ৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। জ্বালানি তেল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ডিজেলের দাম ৪৪ থেকে বেড়ে ৮০ টাকা হয়েছে গত এক দশকে।

গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে সরকারের পরিকল্পনার সমন্বয়হীনতা রয়েছে বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ম. তামিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের সংকট জানার পরও এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা যথাযথ হয়নি। সামনে সংকট আরও ভয়াবহ হবে। বিদ্যুৎ খাতে জ্বালানি নিশ্চিত না করে অতিরিক্ত উৎপাদনসক্ষমতা করা হয়েছে। শীতকালে বড় একটি অংশ বসিয়ে রেখে ভাড়া দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে কিছু দুর্নীতিও হচ্ছে।