ভুয়া রপ্তানি, প্রণোদনা আত্মসাৎ

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তদন্তে এখন পর্যন্ত উঠে এসেছে, ৮০০টি চালানে কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। জড়িত ১৮টি প্রতিষ্ঠান।

ছবি: চট্টগ্রাম কাস্টমসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মামুন এন্টারপ্রাইজ গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৫৩ কোটি টাকার বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানির বিপরীতে তারা সরকারের কাছ থেকে ১০ কোটি টাকার নগদ সহায়তাও নিয়েছে। কিন্তু এখন কাস্টমসের তদন্তে দেখা যাচ্ছে, আসলে কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। ভুয়া রপ্তানি দেখিয়ে তারা সরকারের নগদ সহায়তার টাকা আত্মসাৎ করেছে।

মামুন এন্টারপ্রাইজের রপ্তানির নথিপত্রে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ঢাকার ফকিরাপুলের ইনার সার্কুলার রোডের শতাব্দী সেন্টার। গত বুধবার ভবনটিতে গিয়ে মামুন এন্টারপ্রাইজ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। শতাব্দী সেন্টারে ১৫ বছর ধরে নিরাপত্তাপ্রহরী হিসেবে কাজ করা আবদুল হাই প্রথম আলোকে বলেন, এই নামে কোনো প্রতিষ্ঠান সেখানে কখনো ছিল না।

রপ্তানিকারক সমিতির সদস্য তালিকায় মামুন এন্টারপ্রাইজের মালিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে মো. ইলিয়াছ মামুন মিয়াজী। তাঁর একটি মুঠোফোন নম্বরও তালিকায় রয়েছে। তবে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মামুন এন্টারপ্রাইজের এই ‘জালিয়াতি’ ধরা পড়ার পর এ রকম আরও ‘ভুয়া’ রপ্তানির ঘটনা ঘটেছে কি না, তার খোঁজে নামে চট্টগ্রাম কাস্টমস। তদন্তে এখন পর্যন্ত বেরিয়ে এসেছে যে শুধু কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য খাতে বিগত পাঁচ বছরে ৮০০টি চালানে এমন ভুয়া রপ্তানির ঘটনা ঘটেছে। এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা আরও ৪১টি প্রতিষ্ঠানের বিপুলসংখ্যক সন্দেহজনক রপ্তানি পণ্যের চালান নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। তদন্ত শেষে জানা যাবে আসলে কত টাকার রপ্তানি ভুয়া ছিল, তার বিপরীতে কত টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

মুড়ি, মসলা, আলু, তৈলবীজসহ কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যেই এই জালিয়াতি হচ্ছে। জালিয়াতি শনাক্ত হওয়া চালানগুলোর বেশির ভাগের গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া। শতাধিক চালান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একেকটিতে গড়ে ৫০ হাজার ডলারের পণ্য থাকে (৫৩ লাখ টাকা)। ২০ শতাংশ হারে এর বিপরীতে নগদ সহায়তা দাঁড়ায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা। ৮০০ চালানের বিপরীতে নগদ সহায়তার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৮ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, কৃষিপণ্য বা খাদ্যপণ্য রপ্তানির যেসব অনিয়ম পাওয়া গেছে, সেগুলো মূলত ভর্তুকির টাকা নেওয়ার জন্যই করা হয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

যেভাবে ‘জালিয়াতি’

দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও নতুন পণ্য রপ্তানি বাড়াতে বিভিন্ন খাতকে সহায়তা দেয় সরকার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে সহায়তা পায় কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, হার ২০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকা রপ্তানি আয় আনতে পারলে সরকার ভর্তুকি দেয় ২০ টাকা। এই রপ্তানি সহায়তাবাবদ ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। এই নগদ সহায়তার টাকা হাতিয়ে নিতে কারও কারও জালিয়াতির চিত্র বেরিয়ে আসছে। নিয়মানুযায়ী, কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্য নির্ধারিত ডিপোতে শুল্কায়ন করতে হয়। এরপর তা জাহাজে তোলা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টমসের মাধ্যমে যেসব পণ্য রপ্তানি হয়, তার শুল্কায়নের জন্য ১৯টি বেসরকারি ডিপো রয়েছে। কাস্টমসের তদন্তে এসেছে যে জালিয়াতি করা চালানের পণ্য ডিপোতেই যায়নি।

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কয়েকটি ডিপোতে যোগাযোগ করা হলে কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট চালান তাঁদের কাছে না যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সব কটির বিষয়ে বেসরকারি ডিপোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুল কাইয়ূম খানের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে কয়েক শ চালানের বিষয়ে জানতে চেয়েছিল যে সেগুলো রপ্তানি হয়েছে কি না। আমরা দেখেছি, এসব চালানের ৯৮ শতাংশের রপ্তানি পণ্য ডিপোতেই আসেনি।’

প্রশ্ন হলো, পণ্য যদি ডিপোতে না যায়, তাহলে শুল্কায়ন কীভাবে হলো। তদন্তকারীরা বলছেন, জালিয়াতি হওয়া চালানের ক্ষেত্রে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের যোগসাজশে বা কোনো প্রতিষ্ঠানের আইডি-পাসওয়ার্ড চুরি করে অনলাইনে বিল অব এক্সপোর্ট ফরম পূরণ করে জমা দেওয়া হয়েছে। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বা তাঁদের অবহেলার সুযোগ নিয়ে অনলাইনে রপ্তানি প্রক্রিয়াগুলোর অনুমোদন নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে পণ্য ডিপোতে নেওয়া ও পরীক্ষার বিষয়টি।

ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে দ্রুত অনুমোদন দিতে হয়। প্রায়ই সরেজমিনে পণ্য না দেখে রপ্তানির অনুমোদন দিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এক কর্মকর্তার বিপরীতে অনেক চালান যাচাইয়ের দায়িত্ব থাকে। ফলে সব সময় সরেজমিনে দেখা সম্ভব হয় না। আবার অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। এ সুযোগই নেয় চক্রটি।

ভুয়া চালানের বিপরীতে রপ্তানি আয় কীভাবে আসে, সে প্রশ্নের জবাবে তদন্তকারীরা বলছেন, এ ধরনের জালিয়াতিতে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিদেশেও লোক থাকে। কারও কারও সেখানে প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ভুয়া রপ্তানি আদেশ আসে। এ-ও হতে পারে যে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে যাওয়া টাকাই তাঁরা রপ্তানি আয় হিসেবে দেশে এনে বৈধ করে নিচ্ছেন। আবার ২০ শতাংশ নগদ সহায়তাও পাচ্ছেন।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, কৃষিপণ্য বা খাদ্যপণ্য রপ্তানির যেসব অনিয়ম পাওয়া গেছে, সেগুলো মূলত ভর্তুকির টাকা নেওয়ার জন্যই করা হয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে। যেসব নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান অনিয়মে জড়িত রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ভর্তুকির টাকা দেওয়ার সুপারিশ করেছে, তাদেরও কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। অতীতে এমন নজির রয়েছে।

জালিয়াতিতে যারা

মামুন এন্টারপ্রাইজের রপ্তানির বিপরীতে সব নথিপত্র রয়েছে। তবে তারা যে ভুয়া রপ্তানি দেখিয়েছে, তার প্রমাণ পেয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। প্রতিষ্ঠানটির কয়েকটি চালান রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত ছিল সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান ফেয়ার ট্রেড। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক জেসমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমার সৎ ছেলে মইনুল ইসলাম ব্যবসা দেখাশোনা করত। সে-ই এ বিষয়ে বলতে পারবে।’

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মইনুল ইসলাম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তিনি প্রতি চালানের বিপরীতে এক হাজার টাকার বিনিময়ে কুমিল্লার আলাউদ্দিন ও ঢাকার সাইফুল নামের দুই ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ভাড়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তারা যে এত বড় জালিয়াতি করবে, এটা আমি কল্পনাও করিনি। জালিয়াতি ধরা পড়ার পর তাদের খুঁজে পাচ্ছি না।’

জালিয়াতিতে জড়িত যে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া গেছে, তার মধ্যে একটি ডিওই ইমপেক্স লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠান ২০১৯ ও ২০২০ সালে খাদ্যপণ্যের ৩০টি চালানে ভুয়া পণ্য রপ্তানি দেখিয়েছিল বলে নিশ্চিত হয়েছে কাস্টমস। চালানগুলোর রপ্তানিমূল্য ছিল প্রায় ১৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে নগদ সহায়তা দাঁড়ায় প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকা।

ডিওই ইমপেক্স যে নগদ সহায়তা নিয়েছে, তা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জিয়া হায়দারই প্রথম আলোকে জানান। কাস্টমসের তদন্তে উঠে আসা ভুয়া রপ্তানির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ শত্রুতা করে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

ঢাকার কদমতলীর এম কে অ্যাগ্রো ফুড প্রডাক্টসের ১১টি পণ্যের চালানে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি গত দুই বছরে এই রপ্তানি দেখায়। চালানগুলো রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ছিল বেঙ্গল প্রগ্রেসিভ এন্টারপ্রাইজ ও জিআর ট্রেডিং করপোরেশন। তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এম কে অ্যাগ্রোর এসব চালান রপ্তানির সঙ্গে তারা যুক্ত ছিল না। যদিও রপ্তানিবাবদ পৌনে ৫ কোটি টাকা দুটি ব্যাংকে জমা হয়। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের নগদ সহায়তা বাবদ ৯০ লাখ টাকাও তুলে নিয়েছে।

নথিপত্রে এমকে অ্যাগ্রোর মালিক কামাল উদ্দিন। তাঁর মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে অপর প্রান্তের ব্যক্তি প্রথমে সব কথা শোনেন। পরে বলেন, তিনি প্রতিষ্ঠানটির কেউ নন।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তদন্তে নারায়ণগঞ্জের এস এস ফুড লিমিটেডের আটটি চালান রপ্তানি হয়নি বলে উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সাত্তার বাংলাদেশ অ্যাগ্রো ফুড প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাদের সংগঠনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ কাস্টম হাউসে এসব অভিযোগ দিয়েছে। এগুলো রপ্তানি বন্ধ করার ষড়যন্ত্র।

অবশ্য কাস্টমসের কর্মকর্তারা বলছেন, ওই ব্যক্তি দায় এড়াতে ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন। এখানে বিবেচ্য বিষয় হলো রপ্তানি হয়েছে কি না, নাকি জালিয়াতি করে সরকারের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

ঢাকার মসলা ফুডস লিমিটেড, খান এন্টারপ্রাইজ, জান্নাত করপোরেশন, আল আমিন করপোরেশন, জেটিএফ ইন্টারন্যাশনালসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান পণ্য রপ্তানি না করে নগদ সহায়তার টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে কাস্টমসের তদন্তে দেখা যায়। নথিপত্রে খান এন্টারপ্রাইজ, জান্নাত করপোরেশন ও আল আমিন করপোরেশনের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসেবে দেখানো হয়েছে বেঙ্গল প্রগ্রেসিভ এন্টারপ্রাইজকে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো রপ্তানি চালান আমরা প্রক্রিয়া করিনি। আমাদের আইডি ও পাসওয়ার্ড হ্যাক করে কেউ এ কাজ করতে পারে। প্রকৃত অপরাধীদের বিচার হোক, আমরা তা-ই চাই।’

জালিয়াতিতে সভাপতির প্রতিষ্ঠানও

২০২০ সালের ডিসেম্বরে রপ্তানি পণ্যের একটি চালান খুলে কাস্টমস কর্মকর্তারা দেখতে পান, কনটেইনারের সামনের দিকে মুড়ি, বিস্কুট ও মসলার কিছু প্যাকেট। ভেতরটা ফাঁকা। নথিপত্রে ১ লাখ ৩ হাজার ডলারের প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানির কথা বলা হলেও পণ্য পাওয়া যায় মাত্র ৫ হাজার ডলারের।

এই চালানের রপ্তানিকারক ছিল বাংলা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সর্বশেষ কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতিও ছিলেন তিনি।

জাহাঙ্গীর হোসেন ‘পণ্য রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান’ রাখায় গত ২০ জানুয়ারি ‘বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সিআইপি’ কার্ড পান। জালিয়াতির বিষয়ে মন্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে ফোন করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি। অবশ্য চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করা হয়েছে। আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

‘বিস্তারিত তদন্ত দরকার’

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য খাতে রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ১০৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি। এটি এখন দেশের তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এর আগেও বিভিন্ন সময় ভুয়া রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা আত্মসাতের ঘটনা বেরিয়ে এসেছিল। তাই সব খাতেই নগদ সহায়তা দেওয়ার তদারকি বাড়াতে হবে এবং জালিয়াত প্রতিষ্ঠানকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) উচিত বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করা। কারণ, এই জালিয়াতির সঙ্গে অবৈধ লেনদেন ও অর্থ পাচার জড়িত। তিনি বলেন, জনগণের করের টাকা যাতে আত্মসাৎ করা না হয়, সে জন্য তদারকি বাড়াতে হবে।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন মোহাম্মদ মোস্তফা, ঢাকা]