ভূমধ্যসাগরে ভাসছিলেন ২৬৪ বাংলাদেশি

ভূমধ্যসাগর থেকে ২৬৭ জনকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করেছে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ডছবি: এএফপি

ভূমধ্যসাগর থেকে ২৬৪ বাংলাদেশিকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে মিসরের তিন নাগরিককে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে ভূমধ্যসাগর থেকে বাংলাদেশি, মিসরীয়সহ মোট ২৬৭ জনকে উদ্ধার করে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড।

উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের পরে তিউনিসিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ জেরবার একটি হোটেলে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তিউনিসিয়া থেকে আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মকর্তা মোঙ্গি স্লিম আজ শুক্রবার দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে ভূমধ্যসাগর থেকে ২৬৭ জনকে উদ্ধার করা হয়
ছবি: এএফপি

মোঙ্গি স্লিম জানান, উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি ও মিসরীয়রা লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালির পথে রওনা হয়েছিলেন। ভূমধ্যসাগরে তাঁদের ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। জেরবার হোটেলে কোয়ারেন্টিন শেষে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের কোথায় নেওয়া হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি বলে জানান মোঙ্গি স্লিম।

তিউনেসিয়ার কোস্টগার্ডের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২৬৪ জন বাংলাদেশি। ৩ জন মিসরীয়। তাঁরা নৌকায় করে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তাঁদের বহন করা নৌকা সাগরে ভেঙে যায়। তখন তাঁরা সাগরে ভাসছিলেন। সে অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালির পথে রওনা হয়েছিলেন
ছবি: এএফপি

মোঙ্গি স্লিম জানান, উদ্ধার হওয়া ২৬৭ জনকে তিউনিসিয়ার নৌবাহিনীর সহায়তায় তীরে আনা হয়। সাগর থেকে তাঁদের লিবিয়ার সীমান্তবর্তী তিউনিসিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের বেন গুয়ের্দেন বন্দরে নেওয়া হয়। পরে তাঁদের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কাছে হস্তান্তর করা হয়।

রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তা মোঙ্গি স্লিম বলেন, অভিবাসীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তিউনেসিয়ায় আশ্রয়শিবির তৈরি করা হয়েছে। আশ্রয়শিবিরগুলোতে যে পরিমাণ লোক রাখার কথা, তার চেয়ে বেশি মানুষ এখন সেখানে অবস্থান করছেন।

সাগর থেকে উদ্ধারের পর উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের তিউনিসিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের বেন গুয়ের্দেন বন্দরে নেওয়া হয়
ছবি: এএফপি

২৪ জুনের আগে ১০ জুন ১৬৪ বাংলাদেশিকে তিউনিসিয়া উপকূল থেকে উদ্ধার করে দেশটির কোস্টগার্ড। তাঁরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তার আগে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার সময় গত ১৮ মে ৩৬ জন এবং ২৭ ও ২৮ মে উপকূল থেকে ২৪৩ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড। সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে তিউনিসিয়ায় ৭০৭ বাংলাদেশি রয়েছেন।

এ ছাড়া গত মাসে লিবিয়ার অবৈধ অভিবাসন দমন বিভাগের (ডিসিআইএম) কর্মকর্তারা আলজেরিয়ার সীমান্তবর্তী মরু এলাকা দারাসে অপহরণকারীদের কবল থেকে ৮৬ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেন। তাঁরা বেনগাজি হয়ে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে ভূমধ্যসাগরে যাওয়ার পথে অপহরণকারীদের কবলে পড়েছিলেন। তাঁরা লিবিয়ার হাতে রয়েছেন।

উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের পরে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কাছে হস্তান্তর করা হয়
ছবি: এএফপি

রেড ক্রিসেন্টের তথ্য অনুযায়ী, লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকালে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এক হাজারের বেশি অভিবাসী তিউনেসিয়ায় আটক হয়েছেন।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২১ জুন পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন দেশের ১৯ হাজার ৬১ জন ইতালিতে পৌঁছেছেন। এই তালিকার শীর্ষে থাকা বাংলাদেশের ২ হাজার ৬০৮ জন ইউরোপে পৌঁছেছেন। এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২১ জুন পর্যন্ত অবৈধভাবে ইউরোপ যাত্রার সময় অন্তত ৮১০ জন অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছেন।

উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের এখন তিউনিসিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ জেরবার একটি হোটেলে রাখা হয়েছে
ছবি: এএফপি

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্যানুসারে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরে ৮১৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে।
মানব পাচারকারীদের কবল থেকে উদ্ধার হওয়া ১৬০ বাংলাদেশি গত মে মাসে আইওএমের সহায়তায় দেশে ফেরেন। ২০১৫ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত সংস্থাটির সহায়তায় ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার হওয়া ২ হাজার ৯০০ বাংলাদেশি লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন।

আগে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে এখন তিউনিসিয়ায় সাত শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন
ছবি: এএফপি