প্রথম আলো: দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। আসলে কবে নাগাদ কাজ শেষ হতে পারে?
মফিজুর রহমান: আমরা আশা করছি, আগামী বছরের জুনের মধ্যে দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন ট্রেন চলাচলের উপযোগী হয়ে যাবে। তবে প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হবে না। কিছু কাজ বাকি থাকবে। গাছ লাগানো ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ বাকি থাকবে।
সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি এই রেললাইন প্রকল্প। নির্মাণকাজ ঠিক সময়ে শেষ না হওয়ার কারণ কী? বাধা কী ছিল?
মফিজুর রহমান: মহামারি করোনা তো একটা বাধা ছিল। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে করোনার চেয়ে বড় বাধা ছিল ভূমি অধিগ্রহণ। ভূমি অধিগ্রহণে দীর্ঘ সময় লেগেছে। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল ২০১৭ সালে। অবশ্য পুরোপুরি জমি পেতে, অর্থাৎ কাগজে–কলমে পেতে সময় লেগেছে ২০১৯ পর্যন্ত। কিন্তু বাস্তবে এখনো কিছু জমি পাওয়া যায়নি। এগুলো নিয়ে মামলা আছে। মামলার কারণে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না ভূমিমালিকেরা। এমন অনেক সমস্যা আছে। তাই বড় অন্তরায় যেটি ছিল, সেটি হলো ভূমি অধিগ্রহণ।
দ্বিতীয় বাধা ছিল বনভূমি এলাকায় প্রকল্পের কাজ করা। ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৫ কিলোমিটার গেছে সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে। এই বনভূমি পেতে অনেক সময় লেগেছে। আবার এই ভূমি পাওয়ার পরও জটিলতা ছিল। কেননা, সংরক্ষিত বনের গাছ চাইলেই কাটা যায় না। তাই গাছ কাটার অনুমতি নিতে হয়েছে। এগুলো পেতে পেতে অনেক সময় লেগে গেছে।
তারপর আরেকটা বাধা বৈদ্যুতিক টাওয়ার স্থানান্তর। বড় বড় খুঁটি ছিল। এগুলো সরাতে বেগ পেতে হয়েছে। তারপরও কিছু আছে। তবে তা তেমন সমস্যা নয়।
সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে রেললাইন যাচ্ছে। তাহলে বনের জীববৈচিত্র্যের কী হবে?
মফিজুর রহমান: এশিয়ান হাতি চলাচলের বিষয়টি মাথায় রয়েছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও উদ্যোগ আছে। আমরা খুব সচেতনভাবে কাজ করেছি। যেন হাতির চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্য ওভারপাস ও আন্ডারপাস করছি। তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করেছি। একটি ওভারপাস নির্মাণাধীন আছে। হাতির যেন রেললাইনের দিকে আসতে না হয়, সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বন বিভাগ ওখানে একটা বনায়ন করেছে। অর্থায়ন আমরা করেছি। হাতি এসে খেয়ে যাবে। হাতি লবণ খেতে পছন্দ করে, সেটিরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাতি জলাশয় পছন্দ করে। আমরা জলাশয় করে দিয়েছি।
এখন তো রেললাইন হয়ে যাচ্ছে। ট্রেনও চলাচল করবে। এরপর এই অঞ্চলে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে? কী ধরনের সুফল পাবেন?
মফিজুর রহমান: আমাদের দেশে বেড়ানোর জন্য কক্সবাজার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। কক্সবাজারে যাওয়ার যে পরিবহন ব্যয়, তা অনেক সময় মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তদের জন্য বেশি হয়ে যায়। ট্রেন চালু হলে পরিবহন সমস্যা থাকবে না। ট্রেন নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব।
আরেকটি বিষয় হলো কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্পায়ন হয়নি। ট্রেন যোগাযোগ হলে সহজেই শিল্পায়ন হবে। ওখানকার কাঁচামাল, কৃষিপণ্য, সামুদ্রিক মাছ, শুঁটকি, বাঁশ, বেত, বনজ সামগ্রী খুব কম খরচে পরিবহন করা যাবে। এ অঞ্চলের চেহারা পাল্টে যাবে।
কক্সবাজারে রেলস্টেশন নিয়ে মন্তব্য।
মফিজুর রহমান: কক্সবাজারে যে স্টেশন করা হচ্ছে, সেখানে সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা রাখা হচ্ছে। যেমন ওখানে হোটেল হবে, শপিং মল হবে, কনফারেন্স সেন্টার হবে। একটি শহরের জন্য যেসব জিনিস দরকার, তা হবে। এসব বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়া হবে। তারা পরিচালনা করবে। হোটেল ব্যবসা আমরা করব না। শপিং মলেও তা–ই হবে। আর এই স্টেশনে তরুণ প্রজন্মের জন্য সুযোগ–সুবিধা রাখা হবে। লকার সিস্টেম থাকবে।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে যেতে কতক্ষণ লাগবে?
মফিজুর রহমান: দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার যেতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টা। আর চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত বিদ্যমান লাইনে এখন যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। তবে কালুরঘাট সেতুর সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে ওই পথ যেতে তখন সময় লাগবে ৪০ মিনিট। অর্থাৎ দুই বা সোয়া দুই ঘণ্টার মধ্যে কক্সবাজার চলে যাওয়া যাবে চট্টগ্রাম থেকে। আর ঢাকা থেকে হলে বাড়তি পাঁচ–ছয় ঘণ্টা লাগতে পারে। প্রতিদিন ছয়টি ট্রেন যাবে। দুই ঘণ্টা পরপর ট্রেন ছাড়বে। এখন সিঙ্গেল লাইন। ভবিষ্যতে তা দুই লাইন করা হবে। জায়গা নিয়ে রাখা হয়েছে।
এই রেললাইনের সুফল পেতে বড় বাধা কালুরঘাট সেতু, তা সমাধানে আপনাদের প্রস্তুতি কী?
মফিজুর রহমান: ওটা নিয়ে অনেকবার বলেছি। ওটার বিষয়ে আলাদা প্রকল্প পরিচালক আছেন। আমি কিছু বলতে চাই না। তারপরও বলি, ওই সেতু না হলে পুরোপুরি সুফল পাব না। কিছু সুফল যাতে পাই, সে জন্য রেলওয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেতুটি শক্তিশালী করা হবে, যাতে গতি বাড়ে এবং বড় ইঞ্জিনগুলো যেতে পারে। তবে এটি চিরস্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধান হচ্ছে এখানে সেতু করতে হবে। সে ব্যাপারেও কাজ চলছে।