ভোটদানে বিরত মানে মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে সমর্থন নয়: পররাষ্ট্রসচিব
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে পাস হওয়া প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকাটা বাংলাদেশের নীতিগত অবস্থানের কোনো পরিবর্তন নয়। প্রত্যাশা অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রসঙ্গটি না থাকায় ওই প্রস্তাবের পক্ষে বাংলাদেশ ভোট দেয়নি। আজ রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন তিনি।
গত শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাস হয়। সেখানে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার প্রতি সহিংসতা বন্ধের আহ্বান, অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি এবং দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এই প্রস্তাবের পক্ষে ১১৯টি ভোট পড়ে, বিপক্ষে ভোট দেয় শুধু বেলারুশ। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, নেপাল, ভুটান, লাওস, থাইল্যান্ড, রাশিয়াসহ ৩৬টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে।
ভোট না দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে কি না, প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ভোটদানে বিরত থাকার মাধ্যমে ভুল বার্তা দেওয়ার ‘প্রশ্ন উঠে না’। জাতিসংঘে প্রস্তাবটি নিয়ে কয়েক মাস ধরে কাজ হচ্ছে। এটা যে ভোটে যাবে, সেটা নিশ্চিত ছিল না। শেষের দিকে দেখা গেছে যে প্রস্তাবটি ভোটাভুটিতে যাচ্ছে।
বৈশ্বিক সংস্থার প্রস্তাবে ছাড় দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘জাতিসংঘে এত দেশ আছে যে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখা যায়, প্রস্তাব পাসের ক্ষেত্রে সবাইকে সঙ্গে রাখার জন্য কোনো একটি দেশের নির্দিষ্ট চাহিদা সেভাবে রাখা যায় না। এই প্রস্তাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বিষয়টি ছিল। আমাদের বক্তব্য ছিল প্রস্তাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কিছু অনুচ্ছেদ রাখা হোক। এটা আমাদের চাহিদা ছিল। আমরা রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ চাই। এটা ছাড়া প্রত্যাবাসন সম্ভব না।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে, প্রস্তাবটি যথেষ্ট জোরালো নয়। তাই বিরত থেকেছি। আর এই বিরত থাকার পক্ষে সুস্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরেছি। এই বিরত থাকা মানে এটা নয় যে বর্তমান সামরিক সরকারকে সমর্থন করছি, তা নয়। এটা ভাবা ঠিক হবে না। আমাদের মূল অগ্রাধিকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন।’
জাতিসংঘে পাস হওয়া প্রস্তাবটিতে মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার প্রতি অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিকদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রতি জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘের সব সদস্যদেশের প্রতি মিয়ানমারে অস্ত্র যাওয়া প্রতিরোধে কাজ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই প্রস্তাব নিয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন বলেছে, প্রস্তাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে কোনো পদক্ষেপের সুপারিশ না থাকায় বাংলাদেশ অসন্তোষ জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডাসহ জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর একটি কোর গ্রুপ এই প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে।