ভোট শেষে দুই সপ্তাহেও ফল ঘোষিত হলো না

সুপ্রিম কোর্ট
ফাইল ছবি

আইনজীবীদের অন্যতম সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের (২০২২-২৩) ভোট শেষে দুই সপ্তাহেও ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। সম্পাদক পদে একজন প্রার্থীর পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে আবেদন এবং পরে নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়কের পদত্যাগকে কেন্দ্র করে ফলাফল ঘোষণা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুই সপ্তাহের মাথায় করণীয় ঠিক করতে গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি জরুরি সভায় বসে। সমিতির সভাপতির কক্ষে বেলা সাড়ে তিনটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত সভা হয়।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে সবার সম্মান ও সমিতির মর্যাদা রক্ষায় সমস্যার আশু সমাধান বাঞ্ছনীয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে কার্যকরী কমিটির সব সদস্য একমত পোষণ করেন যে এ পরিস্থিতিতে সমিতির অভিভাবক হিসেবে সমিতির সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকেরা এগিয়ে আসবেন।

জটিলতা নিরসনে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। কার্যকরী কমিটি প্রত্যাশা করে, সমিতির সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকেরা পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে একত্রে বসে এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করবেন।

সমিতির সহসভাপতি মো. জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সমিতির সম্পাদক মো. রুহুল কুদ্দুসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় কার্যনির্বাহী কমিটির ১৩ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গতকাল বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শফিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই সপ্তাহেও ফলাফল ঘোষণা না করা আমার জানামতে অতীতে হয়নি। এটি দুঃখজনক। কেননা, ভোটাররা ভোট দিয়েছেন, তাঁদের ফলাফল না জানিয়ে সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখা ঠিক না। এটি ভোটারদের প্রতি অসম্মান। যৌক্তিকতা থাকলে পুনরায় ভোট গণনা হতে পারে।’ পুনরায় ভোট গণনার দাবি সঠিক না হলে তা নাকচও হতে পারে বলে মনে করেন সাবেক এই আইনমন্ত্রী।

১৫ ও ১৬ মার্চ সমিতির নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়। ১৭ মার্চ বিকেল সাড়ে চারটায় ভোট গণনা শুরু হয়, চলে রাত পর্যন্ত। সভাপতি পদে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ভোটে এগিয়ে ছিলেন। সম্পাদক পদে বিএনপি-সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুস (বর্তমান সম্পাদক) তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে কিছু ভোটে এগিয়ে ছিলেন। ওই রাতে একপর্যায়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সাদা প্যানেল থেকে সম্পাদক প্রার্থী আবদুন নূর পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে নির্বাচন পরিচালনা–সংক্রান্ত আহ্বায়ক কমিটির কাছে আবেদন করেন। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে হইচই-হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মসিউজ্জামান সমিতির কমিটির কাছে পদত্যাগপত্র দেন। এরপরই ভোটের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়।

আইনজীবীরা বলছেন, অতীতে দুই পক্ষের সম্মতিতে পুনরায় ভোট গণনার নজির থাকলেও নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়কের পদত্যাগ সমিতির ইতিহাসে প্রথম। ভোট গ্রহণ শেষে দুই সপ্তাহেও ফলাফল ঘোষণা না করার ঘটনা অতীতে দেখা যায়নি।

ভোট গণনার রাতের বর্ণনা দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা বলেন, আবদুন নূরের করা আবেদনের ভিত্তিতে সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা করে ফলাফল ঘোষণার দাবি তোলেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সাদা প্যানেলের সমর্থকেরা। অন্যদিকে ফলাফল ঘোষণার দাবি তোলেন বিএনপি-সমর্থিত নীল প্যানেলের সমর্থকেরাও। দুই পক্ষের হইচই ও হট্টগোলের মধ্যে অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক এ ওয়াই মসিউজ্জামানসহ অন্য সদস্যরা। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে এ ওয়াই মসিউজ্জামান সমিতির দক্ষিণ হল থেকে বেরিয়ে যান।

সভাপতি, দুজন সহসভাপতি; সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ; দুজন সহসম্পাদক ও সাতজন সদস্যসহ মোট ১৪টি পদে এক বছর মেয়াদের জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয়ে থাকে। ১৭ মার্চ রাত একটার দিকে দুই প্যানেলের সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সমিতির ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি, সহসভাপতির দুটি পদ এবং সদস্যের তিনটি পদসহ ছয়টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের (সাদা প্যানেল) প্রার্থীরা ভোটে এগিয়ে ছিলেন। অন্যদিকে সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ; সহসম্পাদকের দুটি পদ এবং সদস্যের চারটি পদসহ মোট আটটি পদে এগিয়ে ছিলেন বিএনপি–সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) প্রার্থীরা।

সমিতির বিধি অনুযায়ী, বর্তমান কমিটির মেয়াদ আজ শেষ হচ্ছে। নতুন কমিটির ১ এপ্রিল দায়িত্ব নেওয়ার কথা। তবে বর্তমান কমিটি গত বছরের ১২ এপ্রিল বার্ষিক সাধারণ সভার মাধ্যমে পরবর্তী এক বছরের জন্য দায়িত্ব বুঝে নেয়।

উল্লেখ্য, গত নির্বাচনে (২০২১-২২) ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতিসহ আটটি পদে সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা এবং সম্পাদকসহ ছয়টি পদে নীল প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন।