মক্কায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০৭

সৌদি আরবের মক্কা নগরে পবিত্র মসজিদুল হারামে ভেঙে যাওয়া ক্রেনটির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন মুসল্লিরা। গত শুক্রবার এই ক্রেন ভেঙে নিহত হন অন্তত ১০৭ জন l ছবি: রয়টার্স
সৌদি আরবের মক্কা নগরে পবিত্র মসজিদুল হারামে ভেঙে যাওয়া ক্রেনটির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন মুসল্লিরা। গত শুক্রবার এই ক্রেন ভেঙে নিহত হন অন্তত ১০৭ জন l ছবি: রয়টার্স

সৌদি আরবের মক্কা নগরে পবিত্র মসজিদুল হারাম বা হারাম শরিফে ক্রেন ভেঙে পড়ার ঘটনায় কোনো বাংলাদেশি নিহত হননি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া সর্বশেষ খবরে এ তথ্য জানা গেছে। তা ছাড়া, যেসব বাংলাদেশি আহত হয়েছেন, তাঁদের আঘাতও গুরুতর নয়।
গত শুক্রবারের ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে অন্তত ১০৭ জনে দাঁড়িয়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়ে আহত ব্যক্তির সংখ্যাও হয়েছে ২৩৮ জন।
এদিকে বিপুলসংখ্যক মুসল্লির হতাহতের এই ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পৃথক বার্তায় এসব শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
মক্কার শিশা মুয়াইসিমে (মরদেহ রাখার হিমঘর) গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে কোনো বাংলাদেশি নেই। দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে মক্কায় বাদশাহ আবদুল আজিজ হাসপাতাল ও আল নূর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কিছু বাংলাদেশিকে আনা হলেও তাঁদের কেউ গুরুতর আহত নন।
আহত বাংলাদেশিরা জানান, দুর্ঘটনার সময় আতঙ্কে হুড়োহুড়ির মধ্যে পড়েই মূলত তাঁরা আহত হন। তা ছাড়া, বৃষ্টির কারণে মেঝে পিচ্ছিল ছিল। ফলে দৌড় বা হাঁটতে গিয়ে অনেকে আঘাত পেয়েছেন।
মসজিদুল হারামের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা (পাকিস্তানি ও ভারতীয়) জানালেন, মসজিদুল হারামের বাইরের চত্বরে অর্থাৎ সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে যেখানে সাঈ করা হয়, সেখানে বিশাল আকারের একটি ক্রেন রাখা ছিল। শুক্রবার আসর নামাজের পর থেকে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। এমনিতে মক্কায় বৃষ্টি হয় না বললেই চলে। ঝড় ও বাতাসে ক্রেনটির গোড়া নড়ে যায়। মাগরিবের নামাজের আগে ক্রেনের ওপরের অংশ আছড়ে পড়ে সাঈ করার স্থানে মসজিদুল হারামের চারতলা ভবনের ওপর। এতে এ ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে যায়। ওই অংশে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা নিহত হন।
দুর্ঘটনায় আহত ৪০ বাংলাদেশির বেশির ভাগকেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ হজ মিশনের মেডিকেল চিকিৎসা কেন্দ্র থেকেও সাতজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশনের কার্যালয়ে কেউ কেউ এসে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন।
গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মসজিদুল হারামে অবস্থান করে দেখা গেল, অন্য সময়ের মতোই পবিত্র কাবা শরিফে অনবরত তাওয়াফ চলছে। মুসল্লিদের নামাজ আদায়, দোয়া—সবই আগের মতো চলছে।
বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে মৃতের সংখ্যা ১০৭ জন বলা হলেও মক্কার স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ এ সংখ্যা ১৫০ থেকে ১৮০ বলছেন। আর সৌদি বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ আহত ব্যক্তির সংখ্যা ২৩৮ জন বলে জানিয়েছে। দুর্ঘটনার পরপর নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ৮৭ জন বলে জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
নিহত ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে দুজন ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার সর্বোচ্চ বন্দোবস্ত করতে মক্কার গভর্নর খালেদ আল-ফয়সাল নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র হজ শুরুর মাত্র কয়েক দিন আগে সংঘটিত এ দুর্ঘটনা তদন্তে তিনি দুটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সৌদি গেজেট।
এ দুর্ঘটনার আগে মক্কায় ২০০৪ সালে একটি টানেলে দুর্ঘটনায় এবং ২০০৬ সালে ভবনধস ও মিনায় জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করতে গিয়ে হাজিদের প্রাণহানি ঘটেছিল। ওই সব ঘটনার পর সতর্কতামূলক নানা ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে এবার মসজিদুল হারামে ক্রেন ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটল। এ অবস্থায় আরও সতর্ক হওয়ার আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আহত বাংলাদেশিদের সহায়তার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর: ইউএনবি জানায়, আহত বাংলাদেশি হাজিদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তায় তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি গতকাল নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মক্কার দুর্ঘটনায় শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামীও।