মতলবের ২৭ বিদ্যালয়ে শৌচাগার নেই, বিড়ম্বনা
বিদ্যালয়ের ভবন নির্মিত হয় ১৯৯৪ সালে। সে সময় নির্মিত শৌচাগারটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায় ২০০৮ সালে। আজও নির্মিত হয়নি নতুন শৌচাগার। এর ফলে আট বছর ধরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রাকৃতিক কাজ সারতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই তারা আশপাশের বাড়িতে গিয়ে প্রাকৃতিক কাজ সারে।
এটি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার মাছুয়াখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এটিসহ উপজেলার ২৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৩টি। এর মধ্যে ২৭টির শৌচাগার ১ থেকে ১০ বছর ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী। এগুলোর শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। শিক্ষক ১৩৫ জন।
যেসব বিদ্যালয়ের শৌচাগার নষ্ট সেগুলো হচ্ছে মধ্যপিংড়া, উত্তর বহরী, নন্দীখোলা, পশ্চিম আশ্বিনপুর, বিরামপুর, কালিয়াইশ, লাকশিবপুর, আশ্বিনপুর, দক্ষিণ বারগাঁও, পাটন, পেয়ারীখোলা, ১৪৬ নম্বর ঘোড়াধারী, কোটরাবন্দ, মাছুয়াখাল, খিদিরপুর, দক্ষিণ খিদিরপুর, পদুয়া, বদরপুর, গাবুয়া, ৪০ নম্বর কাশিমপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, উত্তর কালিকাপুর, কালিকাপুর, ১৫৬ নম্বর কাশিমপুর, রসুলপুর, বাড়িগাঁও ও পূর্ব বারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় মাছুয়াখাল, গাবুয়া, পাটন, মধ্যপিংড়া, উত্তর বহরী, বদরপুর ও পশ্চিম আশ্বিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেগুলোর শৌচাগার নষ্ট। কিছু শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আশপাশের বাড়িতে ছুটছেন।
মাছুয়াখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী লিজা আক্তার বলে, ‘স্কুলে টয়লেট না থাহায় মাইনষের বাড়িতে যেতে হয়। এতে ভোগান্তি অয়। হেগো খারাপ কথা হোনন লাগে। ফিরতে দেরি অইলে ক্লাসও কামাই যায় কোনোসুম।’
পাটন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিকুন্নাহার বলে, ‘মাঝেমধ্যে পায়খানা-প্রস্রাব ধরলেও চাইপ্পা রাহি। পরে বাড়ি গিয়া করি। এলিগা তলপেডে ব্যথা অয়।’
গাবুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সোবহান বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে দুটি শৌচাগার দু-তিন বছর ধরে নষ্ট। এগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। কমিটির লোকজন ও উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কেউই এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেননি। আশপাশের বাড়ি গিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রাকৃতিক কাজ সারছেন। ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের বেশি বিড়ম্বনা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ কে এম মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘সময়মতো মলত্যাগ না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। প্রস্রাব না করে তা চেপে রাখলে মূত্রতন্ত্রে সংক্রমণ হতে পারে। এতে কিডনি বিকল হয়ে জীবনহানির শঙ্কা রয়েছে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জুলফিকার আলী বলেন, যেসব বিদ্যালয়ের শৌচাগার নষ্ট, সেগুলোর তালিকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. খোরশেদ আলম বলেন, এসব বিদ্যালয়ে শৌচাগার স্থাপনের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।