
দীর্ঘ হাঁটাপথে আটজনের টিম নিয়ে কালেঙ্গা থেকে রেমা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে পাখি-প্রাণীর ছবি তুলতে তুলতে যাচ্ছি। পথে ময়না, হরবোলা, সিঁদুরে পিঠ ফুলঝুরির দেখা পেলাম। একটা বড় গাছের কোটর থেকে কিছু একটাকে মাথা বের করে থাকতে দেখে চুপি চুপি সামনে এগিয়ে গেলাম। ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রেখে আস্তে আস্তে ক্লিক করে গেলাম। ওর নড়নচড়নের কোনো লক্ষণই দেখছি না। খানিক পর হঠাৎ করেই খোঁড়লের মুখ থেকে সবুজ দেহ ও লাল বুকের স্ত্রী পাখিটি উড়াল দিল।
এরপর ওদের বহুবার দেখেছি সাতছড়ি, কাপ্তাই, আদমপুর এমনকি ঢাকা চিড়িয়াখানার বড় কড়ইগাছে মুক্ত অবস্থায়। ঢাকার রমনা পার্ক, শিশু একাডেমী চত্বর এমনকি মধুপুরের শালবনেও ওদের দেখা গেছে।
লাল–বুক ও সবুজ দেহের সুন্দর এই পাখির নাম মদনা টিয়া। লাল-বুক টিয়া নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Red Breasted Parakeet, Moustached Prakeet. Psittacidaeগোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম psittacula alexandri।
মদনা টিয়ার দৈর্ঘ্য ৩৮ সেন্টিমিটার ও ওজন ১০০-১৩০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষের রঙে পার্থক্য থাকে। পুরুষের মাথা হালকা ধূসর। দুচোখের মাঝখানে, কপালে নাসারন্ধ্রের ঠিক ওপরে রয়েছে কালো ফিতে। থুতনিতে মোটা কালো
গোঁফের মতো রেখা। গলা ও বুক পিচফলের মতো লাল। মাথা বাদে দেহের ওপরের অংশ ও পেট ঘাস-সবুজ। নীলচে সবুজ লেজের আগা হলুদ। দুই ডানার ওপর একচিলতে হলুদ রং। লেজের তলা হলদে সবুজ। পুরুষের ওপরের ঠোঁট প্রবালের মতো লাল ও নিচের ঠোঁট কালচে বাদামি। চোখ হলদে। পা, নখ ও পায়ের পাতা হলদে ধূসর। স্ত্রীর উভয় ঠোঁটই কালো। মাথায় নীলচে সবুজ আভা থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্কগুলো দেখতে অনেকটা মায়ের মতো, তবে পালক অনুজ্জ্বল, গোঁফরেখা অসম্পূর্ণ, লেজ খাটো ও ঠোঁট হালকা গোলাপি।
মদনা টিয়া সচরাচর দৃশ্যমান আবাসিক পাখি। মূলত মিশ্র পাতাঝরা ও চিরসবুজ বন, চা-বাগান এবং পাহাড়ের পাশের আবাদি জমিতে বিচরণ করে। সচরাচর ৬-২০টির দলে দেখা যায়। ফল, শস্যদানা, ফুলের রস ইত্যাদি প্রিয় খাবার। মাঝে মাঝে ঝাঁকবেঁধে ফসলের খেতে আক্রমণ করে শস্যের বেশÿক্ষতি করে। প্রায়ই দলবেঁধে চিৎকার করতে করতে আকাশে উড়ে যায়।
জানুয়ারি থেকে এপ্রিল প্রজননকাল। গাছের খোঁড়লে বাসা বানায়। কখনো কখনো কাঠঠোকরা ও বসন্তবাউরির বাসাও দখল করতে পারে। স্ত্রী ২-৪টি সাদা রঙের ডিম পাড়ে, যা ২০-২৪ দিনে ফোটে। বাচ্চারা প্রায় ৫২ দিনে উড়তে শেখে। আয়ুষ্কাল ৭-৮ বছর।