মুমিন মুসলমান, সেহরি খান...

আমজাদ হোসেন সেহরির সময় এভাবেই টিন বাজিয়ে ও গজল গেয়ে সেহরি খাওয়ার জন্য মানুষকে ডেকে তোলেন। ছবি: মনিরুল আলম
আমজাদ হোসেন সেহরির সময় এভাবেই টিন বাজিয়ে ও গজল গেয়ে সেহরি খাওয়ার জন্য মানুষকে ডেকে তোলেন। ছবি: মনিরুল আলম

তখন রাত তিনটা বাজে। অনেক দূর থেকে শব্দটা আসছে। টিন বাজানোর শব্দ। যাঁরা এই শব্দের সঙ্গে পরিচিত, তাঁদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। রোজার মাসে সেহরির সময় পুরান ঢাকাবাসীর কাছে এই শব্দের অর্থ জানা। যাঁরা রোজা রাখেন, তাঁদের এখন সেহরি খাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠতে হবে।
‘মুমিন মুসলমান, সেহেরি খান। রোজদার, দিলদার, ওঠো; রাত তিন বাজগিয়া’—যিনি বলছেন সেই আমজাদ হোসেনের এক হাতে একটা টিন, অন্য হাতে একটা লাঠি! ছন্দের তালে তালে টিনটি বাজিয়ে চলছেন আর একটু পর পর সুর করে বলে যাচ্ছেন, ওপরের কথাগুলো। পুরান ঢাকার পাতলা খান, লক্ষ্মীবাজার এলাকায় সেহরির সময় এখন এই দৃশ্য চোখে পড়বে।
বৃষ্টি থাকলেও আমজাদ হোসেনের এই কাজ থেমে থাকে না। আমজাদ বললেন, ‘আমি বহু বছর ধরে সেহেরির সময় মুমিনদের ঘুম ভাঙানোর জন্য এই কাজ করে আসছি। আমার ওস্তাদের নাম ছিল ফারুক। তাঁর কাছে থেকে শিখেছি।’ সঙ্গে যোগ করলেন, সেই সময়ে তাঁরা দল বেঁধে হ্যাজাক বাতি নিয়ে, গজল গাইতে গাইতে মুমিন মুসলমানদের সেহরি খাওয়ার জন্য ঘুম ভাঙাতেন। এখন আর সেই সব নেই। পুরান ঢাকায় একটা সময় এটা ঐতিহ্য ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলে গেছে। তবে প্রতি রোজার মাসে সেহরির সময় তিনি টিন বাজিয়ে, গজল গেয়ে মানুষকে জাগান। এ কাজে এলাকার লোকজন তাঁকে সাহায্য করে। তিনি লক্ষ্মীবাজার, পাতলা খান লেন, কেজি গুপ্ত লেন, শরৎ চন্দ্র লেনসহ বেশ কিছু এলাকায় ঘুরে ঘুরে মুমিন মুসলমাদের এই আহ্বান জানান।

আমজাদ হোসেন সেহরির সময় এভাবেই টিন বাজিয়ে ও গজল গেয়ে সেহরি খাওয়ার জন্য মানুষকে ডেকে তোলেন। ছবি: মনিরুল আলম
আমজাদ হোসেন সেহরির সময় এভাবেই টিন বাজিয়ে ও গজল গেয়ে সেহরি খাওয়ার জন্য মানুষকে ডেকে তোলেন। ছবি: মনিরুল আলম

আমজাদের দেশের বাড়ি মাদারীপুর হলেও তাঁর জন্ম ঢাকার গেন্ডারিয়ার ভাট্টিখানায়। তিনি ঢাকা শহরে বেড়ে উঠেছেন। লক্ষ্মীবাজার এলাকাতেই থাকেন। দিনের বেলায় তিনি রিকশা চালান বা অন্য টুকটাক কাজ করেন বলে জানালেন।

আমজাদের সঙ্গে কথা শেষ হয়। টিন বাজিয়ে আর ভাঙা গলায় সুর করে ‘মুমিন মুসলমান, সেহেরি খান। রোজদার, দিলদার ওঠো; রাত তিন বাজগিয়া’ বলতে বলতে চলে যান এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায়।