মশারি বিক্রি দ্বিগুণ বেড়েছে

নূরানী শাড়ি হাউস। মোহাম্মদপুরের টাউন হল এলাকার ছোট্ট একটি কাপড়ের দোকান। কিন্তু দোকানে ঢুকলে আগে চোখে পড়বে থরে থরে রাখা মশারির কাপড়। শাড়ি, লুঙ্গিসহ অন্য কাপড়ও আছে যথারীতি। 

দোকানমালিক মো. সুজন জানালেন, সম্প্রতি মশারির চাহিদা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। আগে দিনে চার-পাঁচটি মশারি বিক্রি হতো। এখন ১০টি, কোনো কোনো দিন ১৫টিও বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ও ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মাসে মশারির পাশাপাশি মশক নিধন ও নিয়ন্ত্রণের উপকরণ কয়েল, অ্যারোসল ও বৈদ্যুতিক ব্যাটের চাহিদাও বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীতে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি ও চিকুনগুনিয়া নিয়ে শোরগোলই চাহিদা বৃদ্ধির কারণ।

মশক নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা আধুনিক ব্যবস্থা থাকলেও এখনো সবার ভরসা মশারিতে। মোহাম্মদপুরের টাউন হল, নীলক্ষেত, গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট, কাপ্তান বাজার কমপ্লেক্স ও কারওয়ান বাজারের দোকানি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঈদের পর মশারির বাজার ভালো থাকে। এবার চিকুনগুনিয়া নিয়ে আতঙ্কের কারণে মশারি বিক্রি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হচ্ছে।

দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সুতা ও নকশার ওপর ভিত্তি করে ১৮ থেকে ২০ ধরনের মশারি পাওয়া যায়। এসব মশারি ২০০ থেকে শুরু করে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। বিক্রেতারা বলছেন, রাজধানীতে মশারির একমাত্র পাইকারি বাজার ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট। মূলত এই মার্কেট থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দোকানিরা তৈরি মশারি বা মশারির কাপড় কেনেন।

গত শনিবার দুপুরে সিটি সুপার মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, বহুতলবিশিষ্ট মার্কেটটির নিচতলায় মশারির পাইকারি বাজার। এখানে ১৫-১৬টি দোকানে শুধুই মশারি ও মশারি তৈরির কাপড় বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এসব দোকানে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার মশারি বিক্রি হয়। তবে এর বেশির ভাগই যায় ঢাকার বাইরে।

হাবিব বেডিং স্টোরের পরিচালক মানসুর হোসেন বলেন, এবার রাজধানীর বাইরে মশারি বিক্রির হার স্বাভাবিক থাকলেও রাজধানীতে বিক্রি বেড়েছে। যেসব ক্রেতার কারণে বিক্রি বেড়েছে তাঁদের অধিকাংশই উচ্চবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির। মানসুর বলেন, যাঁরা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসায় থাকেন, তাঁদের অধিকাংশই মশারি ব্যবহার করতেন না। কিন্তু এখন চিকুনগুনিয়ার ভয়ে তাঁরাও মশারি ব্যবহার করছেন। এর ফলে বিক্রি বেড়েছে।

টাউন হল এলাকায় কথা হয় ইকবাল রোডের বাসিন্দা শামীম পাটোয়ারীর সঙ্গে। আগে বানাতে দেওয়া একটি মশারি নিতে এসেছিলেন তিনি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়ার ভয়ে এখন আর মশারি ছাড়া ঘুমানো যায় না। বাড়িতে মেহমান এলে সবাই যাতে একসঙ্গে ঘুমাতে পারে, সে জন্য ১০ ফুট—৭ ফুট মাপের একটি মশারি নিয়েছেন।

মশারি সেলাইয়ের দর্জিদেরও ব্যস্ততা বেড়েছে। কাপ্তান বাজার এলাকার সিফাত মশারি স্টোরের মালিক ফয়েজ আহমেদ বলেন, কাজের চাপ বেড়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। তাঁর দোকানের তিনটি মেশিন থেকে প্রতিদিন গড়ে ৯০টি করে মশারি তৈরি করা হয়।

কারওয়ান বাজার এলাকায় বাবুল হাওলাদার নামের এক বিক্রেতা বলেন, তাঁর দোকানে আগে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০টি করে মশারি বিক্রি হতো। এখন প্রতিদিন ৪০-৫০টি করে মশারি বিক্রি হয়।

কয়েল, অ্যারোসল, ব্যাট

মশা থেকে রক্ষা পেতে কয়েল, অ্যারোসল ও বৈদ্যুতিক ব্যাটের ব্যবহারও রেড়েছে।বিভিন্ন দোকান ঘুরে জানা গেছে, ঢাকায় দেশি-বিদেশি মিলে অন্তত ১০০ রকমের মশায় কয়েল পাওয়া যায়। যেসব এলাকা স্যাঁতসেঁতে এবং যেসব এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের বাস, সেসব এলাকায় কয়েলের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি। যাঁরা একটু ভালো পরিবেশে থাকেন, তাঁরা অ্যারোসল ও বৈদ্যুতিক কয়েলে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। বাজারে চালু বৈদ্যুতিক ব্যাটও মশা মারার উপকরণ হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।

দেশে মশার কয়েল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম গ্লোব ইনসেক্টিসাইডস লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) আতিকুর রহমান বলেন, জুন-জুলাই মাসে বিভিন্ন এলাকায় পানি আটকে থাকায় মশার উপদ্রব বাড়ে। ফলে কয়েলের চাহিদাও বাড়ে। এবার চিকুনগুনিয়ার কারণে কয়েলের চাহিদা বেড়েছে। তবে কী পরিমাণ বেড়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।

বাজারে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের অ্যারোসল পাওয়া যায়। অ্যারোসল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম এসিআই লিমিটেডের ব্র্যান্ড ম্যানেজার জিসান রহমান বলেন, মূলত শহর অঞ্চল ও উচ্চবিত্ত মানুষের মধ্যে অ্যারোসলের চাহিদা বেশি। চিকুনগুনিয়ার কারণে অ্যারোসলের চাহিদার ওপর তেমন প্রভাব পড়েনি। বিক্রি স্বাভাবিক।

কয়েল, অ্যারোসলের পাশাপাশি জনপ্রিয় হচ্ছে মশা মারার বৈদ্যুতিক ব্যাট।   ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মূলত চীন থেকে এসব ব্যাট আমদানি করা হয়। দেশে ৮-১০ রকমের ব্যাট পাওয়া যায়। এসব ব্যাটের দাম ২০০–৫০০ টাকার মধ্যে।

পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডের সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটে এ ব্যাট পাইকারি দরে বিক্রি হয়। এই মার্কেটে মেসার্স মোল্লা ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিকসের হাছান মাহমুদ খান বলেন, দেশে এই ধরনের ব্যাট তৈরির কোনো কারখানা নেই। শীতের সময় মশার উপদ্রব বেশি থাকায় এই ব্যাটের চাহিদা তখন বেশি থাকে। সম্প্রতি চিকুনগুনিয়ার আতঙ্কে বিক্রি বেড়েছে।