মহামারিতে খর্ব হয়েছে মতপ্রকাশ, বেড়েছে দমন-পীড়ন

ধর্ষণ
প্রতীকী

করোনা মহামারির মধ্যে মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব হয়েছে; বেড়েছে দমন-পীড়ন, সীমান্ত হত্যা ও নারী নির্যাতন। এ তথ্য জানিয়ে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলেছে, মহামারির সময়েও মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব ঘটনা ঘটেছে তা নজিরবিহীন।

আজ বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে আয়োজিত এক সেমিনারে আসক ২০২০ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ভিত্তিতে এক প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংস্থাটি। সর্বস্তরের নাগরিকের অধিকার রক্ষা করাসহ একটি গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারবান্ধব রাষ্ট্র গঠনে সরকার কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেছে তারা।

দেশে মহামারির সময়ও যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে তা নজিরবিহীন।
নূর খান লিটন, আসকের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব

আসকের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির ও সহকারী সমন্বয়কারী অনির্বাণ সাহা ওই সেমিনারে মানবাধিকার–সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরেন। আসকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা বেড়েছে। এ বছর ১২৯ মামলায় ২৬৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আসক বলেছে, বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যা বন্ধে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বারবার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা কমেনি। ২০২০ সালে তাদের গুলিতে ৪২ জন এবং শারীরিক নির্যাতনে ৭ জনসহ মোট ৪৯ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। আগের বছর ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৩।

আসকের তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে সারা দেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৬২৭ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ–পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৫৩ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১৪ জন। ২০১৯ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন মোট ১ হাজার ৪১৩ জন নারী। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭৩২।

নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে এ বছরও আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। বরং ‘বৈশ্বিক আইনের শাসনের সূচকে’ গত বছরের তুলনায় ৩ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ ১১৫তম অবস্থানে রয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট।

আসক বলেছে, ২০২০ সালে ধর্ষণের ঘটনা ও এর ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ–সংক্রান্ত আইন সংশোধন করার দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে শুধু সাজা বাড়িয়ে ধর্ষণের মতো সামাজিক অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব নয়।

এ সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, গত ১৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আইনটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে আজ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫৮টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন ২০১ নারী। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ১০৬ পুরুষ। উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৪ নারী। এ ছাড়া যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ নারী ও ১১ পুরুষ খুন হয়েছেন।

বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যা বন্ধে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বারবার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা কমেনি। ২০২০ সালে তাদের গুলিতে ৪২ জন এবং শারীরিক নির্যাতনে ৭ জনসহ মোট ৪৯ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। আগের বছর ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৩।

আসক বলেছে, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে এ বছরও আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। বরং ‘বৈশ্বিক আইনের শাসনের সূচকে’ গত বছরের তুলনায় ৩ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ ১১৫তম অবস্থানে রয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট।

আসকের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব নূর খান লিটন বলেন, দেশে মহামারির সময়ও যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে তা নজিরবিহীন। সামনের বছরটি সুন্দর ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ আরও সুন্দর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আসকের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক নিনা গোস্বামী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার স্বাগত বক্তব্য দেন।