মহালছড়ির পাহাড়ি গ্রামে হামলার বিচার চাইলেন ২৫ বিশিষ্টজন
খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে পাহাড়িদের বসতিতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছেন ২৫ বিশিষ্টজন। তাঁরা এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার আইনে বিচারের দাবি করেন। আজ শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতিতে এ দাবি করেন তাঁরা।
মহালছড়ির মাইসছড়ি ইউনিয়নের জয়সেনপাড়ায় ৫ জুলাই স্থানীয় বাঙালিরা বাসায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে বলে অভিযোগ করেন পাহাড়িরা।
আজ বিবৃতিতে বলা হয়, ওই দিন পাহাড়ি পুরুষেরা যখন পাশের বাজারে গিয়েছিলেন, তখন পুনর্বাসিত বাঙালিদের ২০০ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে জয়সেনপাড়ায় পাহাড়ি নারী ও বসতিতে হামলা চালায়। এ সময় পাহাড়িদের বাড়িঘরে লুটপাট করে অন্তত ৩৭টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের বর্ণনা অনুযায়ী, ঘটনার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকলেও তাঁরা হামলাকারীদের প্রতিহত করতে এগিয়ে আসেননি। পরবর্তীকালে হামলাকারীদের সঙ্গে স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং হামলাকারীরা চলে যায়। এ ঘটনায় কয়েক পাহাড়ি ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিবৃতিদাতরা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলে এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। পাহাড়িদের ওপর নির্যাতন–নিপীড়ন কিংবা তাদের অধিকার বঞ্চনার ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। রাষ্ট্রীয় সেবা বঞ্চনা থেকে শুরু করে জানমালের নিরাপত্তাহীনতা এখানে সর্বদাই বিরাজ করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাটি একটি ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। এটি চরমভাবে মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।
আজ দেওয়া বিবৃতিতে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে আছে, এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ, হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা, দ্রুত বিচার আইনে অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা, ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ।
বিবৃতিদাতারা বলেন, বৈচিত্র্য ধ্বংস করে পাহাড়ে পুনর্বাসিতদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার যে সংস্কৃতি শুরু হয়েছে, তা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে চলতে পারে না। এ ধরনের প্রবণতা দেশে ও দেশের বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ জাতীয় সংহতি বিনষ্ট করবে। তাই দ্রুততম সময়ে ঘটনার প্রভাবমুক্ত তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধূরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদবিরোধী মঞ্চের সদস্যসচিব নুর মোহাম্মদ তালুকদার, অধ্যাপক এম এম আকাশ, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এস এম এ সবুর, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, উন্নয়নকর্মী রোকেয়া কবির, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেনিন চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, জোবাইদা নাসরীন, আইনজীবী পারভেজ হাসেম, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ, সংস্কৃতিকর্মী সেলু বাসিত, ইমারত নির্মাণশ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংস্কৃতিকর্মী এ কে আজাদ, অলক দাস গুপ্ত, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, সংস্কৃতি মঞ্চের আহ্বায়ক সেলিম রেজা।