মহেশখালীতে পাহাড়ধসে আরও এক শিশুর মৃত্যু, প্রশাসনের মাইকিং

পাহাড়ে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করছেন ইউএনও মো. মাহফুজুর রহমান। মুদিরছড়া পাহাড়ি এলাকা, মহেশখালী, কক্সবাজার, ১৭ জুন
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় পাহাড়ধসে মোহাম্মদ জুনায়েদ নামের ১১ বছরের আরও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার বেলা দেড়টার দিকে উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হরিয়ারছড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মোহাম্মদ জুনায়েদ ওই এলাকার মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। এর আগে ৬ জুন উপজেলার অফিসপাড়ায় পাহাড়ধসে সুমাইয়া বেগম নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। তবে ভারী বর্ষণে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে প্রশাসনের পক্ষে মাইকিং করা হয়েছে। সকাল থেকে আবার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শাপলাপুর, হোয়ানক, ছোটমহেশখালী ও কালারমাছড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে বসবাসকারীদের মধ্যে কোনো সাড়া মিলছে না। ফলে ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কা করছে স্থানীয় মানুষ।

স্থানীয় হোয়ানক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, বেলা দেড়টার দিকে পূর্ব হরিয়ারছড়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের ১১ বছরের ছেলে মোহাম্মদ জুনায়েদ খেলার জন্য বাড়ি থেকে বাইরে বের হয়। পরে মোহাম্মদ জুনায়েদসহ আরও কয়েকজন পাহাড়ের পাদদেশে পাখি ধরতে যায়। এ সময় ওপর থেকে পাহাড়ধসে মাটিতে চাপা পড়ে মোহাম্মদ জুনায়েদ। খবর পেয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী মাটি সরিয়ে মোহাম্মদ জুনায়েদের লাশ উদ্ধার করে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় ভারী বৃষ্টিতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এতে ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় রয়েছে। এ কারণে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরে যেতে আবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। ফলে সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে উপজেলার শাপলাপুর, হোয়ানক, কালারমারছড়া ও ছোটমহেশখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করলেও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে স্থানীয় লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যেতে বললেও কোনো সাড়া মিলছে না।

কালারমারছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা এলাকায় বসবাসকারী মো. হাশেম ও কামাল হোসেন বলেন, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে কুতুবদিয়ায় তাঁদের ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। এরপর তাঁরা নিরাপদে আশ্রয়স্থল হিসেবে মহেশখালী পাহাড়ে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছেন। ভারী বর্ষণ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো আতঙ্ক নেই।

কালারমারছড়া ইউনিয়নের আঁধারঘোনা এলাকার বাসিন্দা নাজেম উদ্দিন জানান, ১৩ দিন আগে পাহাড়ধসে কালামারছড়া ইউনিয়নে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া গত ২০০৭, ২০০৮, ২০১২ ও ২০১৫ সালে ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ধসে একই পরিবারের চারজনসহ ১০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এরপরও ভারী বৃষ্টিতে পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীরা সরে যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, বাড়ি থেকে বের হয়ে আধা কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের পাদদেশে পাখি ধরতে যায় ১১ বছরের শিশু জুনায়েদ। পরে হঠাৎ পাহাড় ধসে পড়ে ওই শিশু ঘটনাস্থলে মারা যায়।

ইউএনও মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কা থাকায় পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে সরে যাওয়ার জন্য মঙ্গলবার থেকে আবার স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে হোয়ানক, ছোটমহেশখালী ও কালারমারছড়া ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। শনিবারও বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। এমনকি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বোঝানো হচ্ছে। অন্তত ভারী বৃষ্টির সময় যাতে তারা নিরাপদে আশ্রয় নেয়।