
ঢ্যাঁড়সের রস, কাপড়ের রং আর ফরমালিন মিশিয়ে মাছ তাজা রাখার বিস্ময়কর পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজারের মাছ বিক্রেতারা।
রং আর ফরমালিনের ব্যবহার করায় এসব মাছ হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ানক রকমের ক্ষতির কারণ।
আজ সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীর অন্যতম বৃহত্ এ বাজারে অভিযান চালিয়ে প্রায় চার মণ মাছ আটক করেছেন। পরে এগুলো কেরোসিন মিশিয়ে ডাস্টবিনে ফেলা হয়।
অভিযানের সময় দেখা গেছে, ঢ্যাঁড়স ছোট ছোট করে কাটা হয়। এর আঠাল রস মাছের শরীরজুড়ে মাখিয়ে দেন বিক্রেতারা, যাতে বোঝা যায় মাছটি তাজা। সঙ্গে মাছের কানসায় লাগিয়ে দেওয়া হয় কাপড়ে ব্যবহূত লাল রং। ফরমালিন তো আছেই। সব মিলিয়ে মাছটি তরতাজা দেখায়। পাশাপাশি দোকানের সামনে জ্বলজ্বলে বাতিগুলো তো আছেই।
ক্রেতারাও তাই পড়ে যান গোলকধাঁধায়। তাঁরা দিব্যি হাসিমুখে বাড়ি নিয়ে যান বিষাক্ত ‘তাজা’ মাছ। অভিযানে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বিক্রেতারা সাধারণত রুই, কাতলা, বোয়াল মাছকেই বেছে নেন। কারণ আঠাল আর কান লালচে থাকলে তাজা মাছ ভেবে কেনেন ক্রেতারা। ক্রেতার মনোভাব বুঝেই নতুন এ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন বিক্রেতারা। এর সঙ্গে যোগ করে দেন ফরমালিন।

টাউনহল বাজারের খাজা বাবা মত্স্যভান্ডার, পুরান মামা-ভাগিনা ইলিশ মাছের দোকান নামের দোকানে সাজিয়ে রাখা ছিল এ ধরনের মাছ। কিন্তু মামা-ভাগিনা মাছের দোকানের সাইন বোর্ডে লেখা আছে ‘যার মান ভালো, তার দাম ভালো’।
এ ‘ভালো’ মানের দোকানের বড় একটি বোয়াল মাছে দশমিক ৫৩ মাত্রায় ফরমালিন মেশানো ছিল। আর রুই ও কাতলা মাছে ছিল দশমিক ৩৫ মাত্রায় ফরমালিন।
তবে ছোট ছোট মাছের ওপরও ফরমালিন ছড়িয়ে দিতে পিছপা হননি বিক্রেতারা। ট্যাংরা, বেলে, কাজরি, মলা মাছেও পাওয়া যায় দশমিক ৬০ মাত্রার ফরমালিন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ফরমালিন শনাক্তকারী যন্ত্র দিয়ে মাছগুলোকে পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে মাছ বিক্রেতারা অভিযান শুরুর আগে পালিয়ে গেছেন। আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার থানাকে নির্দেশ দিয়েছি এসব মাছের বিক্রেতাকে খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।’ তিনি আরও জানান, দশমিক শূন্য এক মাত্রার ওপরে ফরমালিন থাকলে সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
অভিযানের সময় মাছ কিনতে আসা জামিল হোসেন বলেন, ‘টাউনহল বাজারে অন্য জায়গার থেকে মাছের দাম বেশি। বেশি দামেই তাজা মাছ এখান থেকে কিনতাম। এখন ভাবছি কী-ই-না খাচ্ছি আমরা।’
গত বছর তত্কালীন বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের, স্থানীয় সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিরা টাউনহল বাজারকে ফরমালিনমুক্ত ঘোষণা করেছিলেন।
ফরমালিনে ভরপুর রসাল আম-লিচু!
পুলিশি অভিযানের সময় টাউনহলের ফলবাজারে সার সার সব ফল সাজানো ছিল। চোখ জুড়িয়ে যাওয়া বড় বড় লিচু, হলদে-সবুজ আম, জামরুল, তরমুজ, আপেল ঝুড়ি ভর্তি করে রাখা। তবে বিক্রেতারা সবাই উধাও। কারণ সব ফলেই মিলেছে ফরমালিনের সন্ধান।
সবুজ পাতার ডালে বাঁধা লাল রঙের রসাল ১০০টি লিচু টাউনহল বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। কিন্তু এই বাজারের লিচুতে ৯ দশমিক ২০ মাত্রার ফরমালিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আমে পাওয়া গেছে ৭ দশমিক ৯৩ এবং জামরুলে দশমিক ৮২ মাত্রায় ফরমালিন।
তবে অভিযানের সময় আবদুস সাত্তার নামের এক ফল বিক্রেতা ধরা পড়েন পুলিশের হাতে। ১০ হাজার টাকা জরিমানা গুনে জেলে যাওয়া থেকে রেহাই পান তিনি। সাত্তার অনেকটা নিচু স্বরেই বলেন, ‘আমি ফরমালিন মিশাই নাই। আড়ত থেকে কিইন্যা আইনা এ বাজারে বিক্রি করি।’
অভিযানের নেতৃত্বে থাকা ডিএমপির সহকারী কমিশনার নূরে আলম বলেন, ২২ মে এ বাজারে অভিযান চালানো হয়। সেদিন মাছ বিক্রেতারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছিলেন। খাদ্যে ফরমালিনের অস্তিত্ব দূর করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।