মাঝারি ও সরু চালের দাম বেড়েছে

চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। সরকারি মজুত বাড়াতে বিদেশ থেকে চাল আমদানির জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তোড়জোড়ও চলছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে পাইকারি বাজারে আবারও বেড়েছে সরু ও মাঝারি মানের চালের দাম।

দুই দিন আগে মিলমালিকেরা প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) মিনিকেট চালের দাম ২৫ টাকা বাড়িয়েছেন। এতে কেজিপ্রতি বাড়তি দাম পড়ছে ৫০ পয়সা। আর মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১ টাকা। এই দুই ধরনের চালের ক্রেতা মূলত নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। তবে নিম্নবিত্ত মানুষের চাল হিসেবে পরিচিত মোটা চালের দাম বাড়েনি।

গতকাল শনিবার রাজধানীর দুটি পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল কিনতে প্রতি কেজি ৫৩ টাকা ৫০ পয়সা গুনতে হচ্ছে, যা খুচরা বাজারে ৫৬ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। অথচ গত বছর এ সময়ে এই চাল কেজিপ্রতি ৪৬-৪৮ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে চাল কেনার সময় কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে মোখলেসুর রহমানের সঙ্গে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘প্রতি মাসেই চালের দাম বাড়ছে। চালের দাম কমাতে সরকারের নানা উদ্যোগ ও শুল্ক কমানোর কথা আমরা শুনছি। কিন্তু বাজারে তার প্রভাব নেই। আমাদের তো দিনকে দিন চাল কিনতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।’

বিক্রেতারা বলছেন, আমদানি হচ্ছে শুধু মোটা ও আতপ চাল। এই দুই ধরনের চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা কমেছে। মিলমালিকদের দাবি, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া তাঁদের উপায় নেই।

দেশের বাজারে মিনিকেট ও বিআর-২৮ চালই বাজারের সার্বিক দাম ওঠানামায় মূল ভূমিকা রাখে। ঢাকার মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও চাকরিজীবীরা মূলত বেশি কেনেন মিনিকেট চাল।নিম্ন আয়ের মানুষের পছন্দ বিআর-২৮ জাতের চাল।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চালের আড়তে রশিদ, বিশ্বাস, এরফান ইত্যাদি ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের দাম বস্তাপ্রতি ২ হাজার ৬৫০ টাকা ছিল। নতুন সরবরাহ আদেশে বস্তাপ্রতি এসব চালের দাম ২৫ টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে বলে দাবি আড়ত মালিকদের। একই তথ্য জানান রাজধানীর পুরান ঢাকার বাবুবাজার-বাদামতলী ও কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতারা।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের বরিশাল রাইস এজেন্সির মহিউদ্দিন রাজা প্রথম আলোকে বলেন, রশিদের মিনিকেটের দাম বেড়েছে। এ ব্র্যান্ডের চালের দাম বাড়লে অন্যরাও বাড়িয়ে দেয়। কারণ, রশিদ ‘মার্কেট লিডার’। তিনি বলেন, মিনিকেট ছাড়া সরু নাজিরশাইল চাল কেজিপ্রতি ২ টাকা ও মাঝারি বিআর-২৮ জাতের চাল ১ টাকা বেড়েছে। মজুমদার ব্র্যান্ডের বিআর-২৮ চাল কেজিপ্রতি ৪৭ টাকা ছিল, এখন তা ৪৮ টাকা এবং একই ব্র্যান্ডের বিআর-২৯ জাতের চাল ৪৫ থেকে বেড়ে ৪৬ টাকা হয়েছে বলে জানান ওই বিক্রেতা। তিনি আরও বলেন, এ বছর রশিদের সরু মিনিকেটের দাম কেজিপ্রতি ৫৪ টাকায় ওঠে। পরে নতুন মৌসুমের চাল আসায় তা এক থেকে দেড় টাকা কমেছিল। এখন আবার বেড়েছে।

২০১৪ ও ২০১৫ সালে ভারত থেকে নুরজাহান ও তাজমহল ব্র্যান্ডের প্রচুর সরু ও মাঝারি মানের চাল আমদানি হয়েছিল। এ বছর ভারত থেকে নুরজাহান ব্র্যান্ডের মোটা স্বর্ণা চাল আমদানি হলেও সরু বা মাঝারি চাল আসেনি। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের মেসার্স কর্ণফুলী রাইস এজেন্সির আবদুল কাদের বলেন, সরু ও মাঝারি চাল আমদানি করলে আমদানিকারকদের লাভ থাকে না। ভারতেই এ চালের দাম বেশি। এ কারণে মোটা চালের মতো এসব চালের দাম কমেনি।

সরু চালের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও রশিদ অটোমেটিক রাইস মিলের মালিক আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, এখন এক মণ (৪০ কেজি) ধানের দাম ১ হাজার ২৩০ টাকা। গত এক মাসে তা কমপক্ষে ৫০ টাকা বেড়েছে। এ দরে ধান কিনে ৫০ কেজি চাল উৎপাদনে ২ হাজার ৬০০ টাকার বেশি খরচ হয়। তিনি বলেন, ‘বাজারে যখন মোটা চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল, তখন কিন্তু আমি সরু চালের দাম বাড়তে দিইনি। কারণ, আমাদের জবাবদিহি আছে।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে বছরে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টন চাল উৎপাদিত হয়। যার মধ্যে ১ কোটি ৯০ লাখ টন আসে বোরো থেকে। এবার বোরো মৌসুমে হাওরের ধান নষ্ট হয়, এতে চালের দাম বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে সরকার গত ২০ জুন চাল আমদানিতে কর হার ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে। এর আগে ব্যাংকগুলো নগদ অর্থ ছাড়াও চাল আমদানির ঋণপত্র খোলার সুযোগ দেয়।