মাদককে ঘৃণা করুন মাদকাসক্তকে নয়

মাদক পরামর্শ সহায়তা দিচ্ছেন (বাঁ থেকে) হাসিবুর রহমান, ওয়াসিমা রহমান, অভ্র দাশ ভৌমিক, মোহিত কামাল, ফারজানা রাবিন ও ইকবাল মাসুদ
মাদক পরামর্শ সহায়তা দিচ্ছেন (বাঁ থেকে) হাসিবুর রহমান, ওয়াসিমা রহমান, অভ্র দাশ ভৌমিক, মোহিত কামাল, ফারজানা রাবিন ও ইকবাল মাসুদ

প্রথম আলো ট্রাস্ট মাদকবিরোধী আন্দোলনের উদ্যোগে ১৭ এপ্রিল বিকেল সাড়ে চারটায় পরামর্শ সহায়তা-৪৯-এর আসরটি অনুষ্ঠিত হয় ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে। এ আয়োজনে মাদকাসক্ত রোগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মনোরোগ চিকিত্সক ও বিশেষজ্ঞরা মাদকাসক্তি নিরাময়ের জন্য তাঁদেরবিভিন্ন পরামর্শ দেন। পরামর্শ সহায়তা অনুষ্ঠানের আলোচিত বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মোহিত কামাল উপস্থিত সবাইকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন যে, মাদকাসক্ত রোগীদের চিকিত্সার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ধৈর্য। মাদকাসক্ত রোগীদের চিকিত্সা কিছুটা দীর্যমেয়াদি। তাই ধৈর্যের কোনো বিকল্প নেই। অনেকে এদের মারধর করেন। আটকে রাখেন। এসব কাজে ভালো ফল পাওয়া যায় না। বরং ক্ষতি হয়। অনেকে আবার মাদকাসক্ত রোগীদের লুকিয়ে রাখেন। আত্মীয়স্বজনসহ মানুষের সামনে আনেন না। অন্যের সঙ্গে পরামর্শ করেন না। লজ্জায় ঘরে লুকিয়ে রাখেন। এর কোনোটাই মাদকাসক্ত রোগীদের জন্য মঙ্গলজনক না। মাদকাসক্তকে একটা রোগ মনে করতে হবে। মাদককে ঘৃণা করব। মাদকাসক্ত রোগীকে নয়। ঘর থেকে বের হলেই মাদকের হাতছানি। তাই কে কখন মাদকাসক্ত হবে কেউ জানি না। কেউ মাদকাসক্ত হলে সর্ব শক্তি নিয়ে তার পাশে দাঁড়াতে হবে। মাদকসক্ত রোগীকে সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। চিকিত্সক, আত্মীয়স্বজন—সবার পরামর্শ নিতে হবে। দ্রুত চিকিত্সার আওতায় আনতে হবে। সব ধরনের মায়া-মমতা, আদর, ভালোবাসা দিয়ে সেবা করতে হবে। চিকিত্সকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। অনেকেই মনে করেন, মাদকাসক্ত রোগী সহজে ভালো হয় না। দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই। নিয়ম অনুযায়ী চিকিত্সা করলে অবশ্যই মাদকাসক্ত রোগী ভালো হয়।

প্রশ্ন: আমার সন্তান মাদকাসক্ত ছিল। এখন ভালো হয়েছে। সে বাইরে গেলে ভয় পাই কেন? এ ক্ষেত্রে কী করণীয়?
উত্তর: ভয় পাওয়া না পাওয়া দুটো বিষয়ই আপনার জন্য স্বাভাবিক। আপনি ভয় পেতেও পারেন। আবার নাও পেতে পারেন। ভয় পাওয়ার কারণ হলো, আপনি মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানেন। আপনার সন্তান মাদকাসক্ত ছিল। তখন হয়তো আপনি তার অনেক অমানবিক আচরণ দেখেছেন। অনেক সময় ও চেষ্টার পর হয়তো আপনার সন্তান ভালো হয়েছে। এ জন্য সে বইরে গেলে আপনার মধ্যে আতঙ্ক কাজ করে। আবার হয়তো মাদক গ্রহণ করতে পারে। আবার সন্তানের রূঢ় আচরণ শুরু হতে পারে। তা ছাড়া একবার মাদকাসক্ত হলে আবার মাদক গ্রহণের ঝুঁকি থেকে যায়। এসব ভাবনা আপনার মধ্যে দুঃশ্চিন্তা তৈরি করে। এটা আপনার মধ্যে একধরনের মানসিক সমস্যা তৈরি করছে। আপনি মানসিক চিকিত্সকের সাহায্য নিতে পারেন। কিছু ওষুধ খেলে ও পরামর্শ নিলে ঠিক হবে।
প্রশ্ন: আগে অ্যালকোহল ও ঘুমের বড়ি খেতাম। এখন খুব সিগারেটের নেশা হয় এবং সিগারেট খাই। কী করতে পারি?
উত্তর: সিগারেট একটি মাদক। কেবল মাদকই নয়, মাদক গ্রহণের

অন্যতম কারণও সিগারেট। অধিকাংশ মাদক গ্রহণকারীদের শুরুটা হয়েছে সিগারেটের মাধ্যমে। তা ছাড়া সিগারেট শরীরের ভীষণ ক্ষতি করে। সিগারেট ক্ষতিকর দিক নিয়ে বিভিন্ন সময় লিখেছি। আপনি অ্যালকোহল ও ঘুমের বড়ি খেতেন। এটা ছেড়ে দিয়েছেন। এ দুটো মাদক ছাড়ার জন্য আপনাকে অভিনন্দন জানাই। দুটি মাদক যেহেতু ছাড়তে পেরেছেন, সিগারেটও ছাড়তে পারবেন। এ জন্য দরকার আপনার দৃঢ় মনোবল ও নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস। মাদক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে পারেন। একধরনের চুইঙ্গাম আছে। এটা মুখে দিলে সিগারেটের নেশা কাটে। একদিন একদিন করে প্রতিজ্ঞা করবেন। ‘আজ আমি একটি সিগারেটও খব না।’ এভাবে সিগারেট থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন। আমাদের বিশ্বাস, আপনি সিগারেট ছাড়তে পারবেন। আমরা চাই, আগামী অনুষ্ঠানে আপনি সিগারেটমুক্ত হয়ে বলবেন, আমি সিগেরেট খাই না এবং কোনো দিন খাব না। আপনার প্রতি আমাদের শুভ কামনা রইল।
প্রশ্ন: আমার স্বামী ২০ বছর যাবত্ মাদক নেয়। ছেলেকে আদর করতে চায়। ছেলে জিজ্ঞেস করে তার বাবার কাছে যাবে কি না। এ ক্ষেত্রে কী করতে পারি?
উত্তর: দীর্ঘদিন মাদক নিলে মাদকের ওপর নির্ভরশীল হয়। মাদকের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের মায়া-মমতা থাকে না। তারা অনেক বেশি নিষ্ঠুর হয়। আবেগশূন্য হয়। অপরাধবোধ কমে যায়। মনে হচ্ছে, আপনার স্বামী তেমন নন। তাঁর মধ্যে আবেগ, মায়া-মমতা, ভালোবাসা রয়েছে। তিনি সন্তানকে আদর করতে চান। এটা একটা ভালো দিক। সন্তানকে তাঁর কাছে যেতে দিন। সন্তানের সঙ্গে কথা বললে, তাকে আদর-স্নেহ দিলে আপনার স্বামীর মধ্যে পরিবর্তন আসতে পারে। তিনি সন্তানকে মানুষ করার জন্য ভালো হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। বরং সন্তানকে বেশি বেশি তাঁর সঙ্গে থাকতে দিন। তবে সন্তানকে নিয়ে বাইরে যেন না যান। বাইরে গেলে তিনি বেখেয়ালি থাকতে পারেন। তাতে সন্তানের কোনো ক্ষতি হতে পারে।
প্রশ্ন: আমার বড় ভাই গুল খান। এটা কি ক্ষতিকর?
উত্তর: গুল হলো তামাকের প্রচণ্ড ক্ষতিকর সংস্করণ। মুখের ক্যানসারের বড় কারণ গুল। গুল ব্যবহার করলে ক্যানসারসহ শরীরের বিভিন্ন প্রকার ক্ষতি হয়। তাই গুল থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। একা একা ছাড়তে পারবেন না। কোনো চিকিত্সাকেন্দ্রে ভর্তি হতে হবে। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। চিকিত্সকের পরামর্শমতো চললে গুল থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
প্রশ্ন: অনেক সময় লেখা দেখি, ‘মাদক ছাড়ার জন্য ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট’। এটা কি ঠিক? নিজের ইচ্ছে থাকলেই মাদক ছাড়া যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, এটা ঠিক। নিজের ইচ্ছে থাকলে মাদক ছাড়া যায়। মাদক ছাড়তে ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট। তবে নিজে নিজে মাদক ছাড়া যায় না। প্রথমে মাদক ছাড়ার জন্য দৃঢ় মনোবল নিয়ে ইচ্ছাশক্তি পোষণ করতে হয়। তারপর কোনো নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হতে হয়। ইচ্ছাশক্তি দিয়ে একা একা মাদক ছাড়া যায় না। কারণ, মাদক ছেড়ে দিলে শরীরে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নিজ চেষ্টায় শরীরের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকা যায় না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকার জন্য চিকিত্সার প্রয়োজন হয়। এ জন্য কোনো চিকিত্সাকেন্দ্রে ভর্তি হতে হয়। এক-দেড় বছর একজন চিকিত্সকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। নিজের ইচ্ছাশক্তি দ্বারা ঘরে বসে মাদকমুক্ত থাকার বিষয়টিকে বোঝানো হয়নি। মাদক ছাড়ার জন্য একদিকে প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় মনোবল থাকতে হবে, অন্যদিকে নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হয়ে চিকিত্সা নিতে হবে। এ দুটো কাজ একসঙ্গে করতে পারলে তিনি মাদকমুক্ত থাকতে পারবেন।
প্রশ্ন: আমার বয়স ২৪ বছর। কিছুদিন যাবত্ ইয়াবা নিচ্ছি। আমি ভালো হতে চাই। কিন্তু পরিবারকে জানাতে চাই না। কী করতে পারি?
উত্তর: মানুষ বিভিন্ন কারণে ইয়াবা নেয়। যেমন: কৌতূহল, বন্ধুদের চাপ ও কিছু ভুল ধারণা থেকে ইয়াবায় আসক্ত হয়। কারণ যা-ই হোক না, ইয়াবা অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি মাদক। খেলে প্রচণ্ড বিষণ্নতা তৈরি হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই মানসিক বৈকল্য দেখা দেয়। মেজাজ খিটখিটে হয়। কোনো কজের আগ্রহ থাকে না। কাজ করার শক্তিও থাকে না। ধীরে ধীরে যৌনশক্তি হারিয়ে ফেলে। শরীর দুর্বল হতে হতে মারাত্মক আকার ধারণ করে। ইয়াবাসহ যেকোনো মাদক হোক না কেন, গোপন রাখার কিছু নেই। যেকোনো অসুস্থার ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিত্সা নিতে হয়। মনে করতে হবে এটি অন্য অসুখের মতো এটিও একটি রোগ। পরিবারের সবাইকে জানাতে হবে। কারণ, ইয়াবাসেবী একটি ফাঁদে পড়ে গেছে। তাকে এ ফাঁদ থেকে তুলতে হবে। গোপন করলে সবার

জন্য ক্ষতিকর। আপনি পরিবারকে জানান এবং পরামর্শ করে দ্রুত কোনো চিকিত্সকের কাছে আসুন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও আসতে পারেন। এখানে বহির্বিভাগ থেকে ১০ টাকার টিকিট করে শরীরের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন। এবং চিকিত্সকের পরামর্শমতো চিকিত্সা করলে দ্রুত সেরে উঠতে পারবেন।
প্রশ্ন: অনেকে মনে করেন, ইয়াবা খেলে স্লিম হওয়া যায়। শারীরিক শক্তি বাড়ে ইত্যাদি। এ ধারণা কি ঠিক?
উত্তর: এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। ইয়াবা সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে। অনেকে মনে করেন, ইয়াবা খেলে স্লিম হওয়া যায়, যৌনশক্তি বাড়ে, কাজে আনন্দ পাওয়া যায় ইত্যাদি। ইয়াবা চোরাচালানিরা এ ধারণাটি মানুষের মধ্যে প্রচার করেছে। এটা একধরনের ব্যবসায়ী কৌশল। বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইয়াবাতে মানুষের মাংসপেশি শুকিয়ে যায়। এতে তারা মনে করে শুকিয়ে যাচ্ছে, স্লিম হচ্ছে। এভাবে শুকাতে শুকাতে একসময় সম্পূর্ণ জীবনীশক্তি হারিয়ে ফেলবে। যৌনশক্তি তো থাকবেই না। দীর্ঘদিন ইয়াবা নিলে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুও হতে পারে। ইয়াবায় আরও বিভিন্ন প্রকার ক্ষতি রয়েছে। অতএব, স্লিম হওয়া ও শারীরিক শক্তি বৃদ্ধির ধারণা একেবারেই মিথ্যা।
প্রশ্ন আমার ছেলের বয়স ২৯ বছর। নয় বছর যাবত্ মাদকাসক্ত। বর্তমানে সে ইয়াবা নিচ্ছে। এর আগে হেরোইনসহ প্রায় সব ধরনের মাদক নিয়েছে। কয়েকবার চিকিত্সা করিয়েছি। কিছুদিন ভালো থাকে। আবার মাদক নেয়। এখন কী করব?
উত্তর: মাদক মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেয়। সেটা ইয়াবা হোক বা অন্য যেকোনো মাদক হোক। আপনার সন্তান অনেক বছর যাবত্ মাদক নিচ্ছে। চিকিত্সা করলে ভালো হয়। আবার মাদক নেয়। মাদকাসক্ত রোগীদের এমন বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। আপনারা হতাশ হবেন না। কিছুটা ধৈর্য নিয়ে চিকিত্সা করলে মাদকাসক্ত রোগী অবশ্যই ভালো হয়। মাদক থেকে সেরে উঠেছে এমন অসংখ্যা উদাহরণ আমাদের কাছে আছে। মাদকের চিকিত্সা কিছুটা দীর্ঘমেয়াদি। কোনো নিরাময় কেন্দ্রে চিকিত্সা করালেই সে ভালো থাকবে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। হাসপাতাল হচ্ছে চিকিত্সার প্রথম পর্যায়। হাসপাতাল থেকে বাসায় আসার পর নতুনভাবে চিকিত্সা শুরু হয়। এটা হলো চিকিত্সার দ্বিতীয় পর্যায়। দ্বিতীয় পর্যায়ের চিকিত্সা ভুল হলেই সে মাদকাসক্ত হবে। এ পর্যায়ে নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। চিকিত্সকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। টাকা, মোবাইল, মাদকাসক্ত বন্ধু—সবকিছু থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
প্রশ্ন আমার বয়স ২৮ বছর। প্রায় ১১ বছর যাবত্ ফেনসিডিল নিচ্ছি। এখন এ নেশা থেকে মুক্ত থাকতে চাই। এ বিষয়ে আপনাদের পরামর্শ চাই।
উত্তর: ইচ্ছে করলে যেকোনো নেশা থেকেই মুক্ত থাকা যায়। নেশা ছাড়া এমন কঠিন কিছু নয় যে একদমই ছাড়া যায় না। সবচেয়ে বেশি ভালো হয় রোগীরা যদি নিজ থেকে নেশা ছাড়ার কথা বলে। কেউ যদি নিজ থেকে নেশা ছাড়তে চায়, তার জন্য কাজটি অনেক সহজ হয়। আপনি অবশ্যই ফেনসিডিল ছাড়তে পারবেন। কারণ, আপনার

ইতিবাচক দিক রয়েছে। আপনি নিজেই ফেনসিডিল ছাড়তে চাইছেন। কখনোই মাদক গ্রহণের বিষয়টি গোপন রাখার দরকার নেই। আপনার স্ত্রীসহ পরিবারের সবাইকে জানান। তাদের সহযোগিতা চান। মাদক ছাড়তে চেষ্টা করেও অনেকে ছাড়তে পারে না। আপনিও কয়েকবার চেষ্টা করেছেন পারেননি। এটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করার দরকার নেই। কারণ, নেশা ছেড়ে দিলে কিছু মানসিক ও শারীরিক সমস্যা হয়। যে কারণে রোগীরা আবার নেশা করতে বাধ্য হয়। মাদকমুক্ত থাকার কিছু শর্ত আছে। যেমন: যে স্থানে মাদক গ্রহণ করা হয়, সেখানে গেলে, মাদক গ্রহণকারী বন্ধুদের দেখলে, যে সময় মাদক নেওয়া হতো, সে সময় এলে মাদকের প্রতি প্রচণ্ড আকর্ষণ বেড়ে যায়। ফলে এসব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকতে হবে। এখন মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কল লিস্ট থেকে মাদক গ্রহণকরী বন্ধুদের নম্বর একেবারে মুছে দিতে হবে। আপনার কাছে টাকা রাখা যাবে না। পবিবার ও চিকিত্সকের সহযোগিতা নিতে হবে। সর্বোপরি, একজন চিকিত্সকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতে পারেন। এখানে আপনার শরীর পরীক্ষা করা হবে। ফেনসিডিল ছাড়ার পর যে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা তৈরি হবে, মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তার চিকিত্সা করা হবে। নিজের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। মাদক নিতে ইচ্ছে করলে আপনার সন্তানসহ প্রিয় মানুষের কথা ভাববেন। প্রিয়জনের কাছে থাকার চেষ্টা করুন। মাদক নিতে ইচ্ছে করলেই সন্তান ও স্ত্রীর কাছে থাকুন। পরিবারকে অবশ্যই জানাতে হবে। এতে লজ্জার কিছু নেই। এটা একটা রোগ। অন্য কোনো রোগ হলে কি আপনি লুকিয়ে রাখতেন? তাই পরিবারকে জানাতে হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন যাঁরা:
মোহিত কামাল, অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
ফারজানা রাবিন, সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
অভ্র দাশ ভৌমিক, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
ওয়াসিমা রহমান, মনোরোগ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
ইকবাল মাসুদ, পরিচালক, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন
হাসিবুর রহমান, কাউন্সিলর, আপন
সঞ্চালনায়: ফেরদৌস ফয়সাল, গ্রন্থনা: আশফাকুজ্জামান

সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলো
কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র, ৪৪১ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র, ১১৫ পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম। রাজশাহী আঞ্চলিক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র, ২০৪/২ উপশহর ক্যান্টনমেন্ট, রাজশাহী। খুলনা আঞ্চলিক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র, ২ কেডিএ অ্যাভিনিউ, ময়লাপোতার মোড়, খুলনা। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।