মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত কতটা ঝুঁকিমুক্ত?
সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি তখনো থামেনি। বৃষ্টিভেজা প্রকৃতি। মাধবকুণ্ড ইকো পার্কে ঢোকার ফটক পেরিয়ে মনে হলো, এখানে বৃষ্টি বনের সখা। গাছের পাতা থেকে টুপটাপ জলের ফোঁটা ঝরছে। স্যাঁতসেঁতে টাইলস বিছানো পথ। কিছুদূর এগোনোর পর কানে আসে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের নিরবচ্ছিন্ন জলপতনের শব্দতরঙ্গ।
কিন্তু এসব ছাপিয়ে তখন চোখে পড়ে ইকো পার্ক এলাকার পর্যটন রেস্তোরাঁর পাশে দেবে যাওয়া সড়ক। মাটি ধসে জলপ্রপাতের পশ্চিম পাশে ভেঙেচুরে যাওয়া পুলিশ ও পর্যটক ছাউনি। আর জলপ্রপাতের দক্ষিণ পাশে পাথুরে পাহাড়ের ধসে যাওয়া অংশ। দুর্ঘটনা এড়াতে কুণ্ডের কাছে দড়ি দিয়ে বিপজ্জনক সীমানা আলাদা করে দেওয়া হয়েছে, যাতে পর্যটকেরা কুণ্ডের ভেতরে চলে না যান। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড ইকো পার্ক ঘুরে এমনটাই চোখে পড়ে।
ইজারাদার সূত্রে জানা গেছে, ছুটির দিনে সহস্রাধিক পর্যটক ভিড় করেন মাধবকুণ্ডে। গত ঈদুল ফিতরে ছুটির প্রতিদিন পাঁচ হাজারের বেশি দর্শক এসেছিলেন।
ইকো পার্ক পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই ফিরোজ আল মামুন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর সময় ঝরনার পাশে ধস নামে। একই সময় সড়ক দেবে যায়। আর ঝরনার দক্ষিণ পাশের পাহাড়ে ধস নেমেছে পরে। পর্যটকেরা যাতে বিপজ্জনক অংশে না যান, সেটা আমরা দেখছি।’
সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আর এস এম মুনিরুল ইসলাম গত ৩১ মে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে দেওয়া চিঠিতে জানিয়েছেন, গত ১৮ মে রাতে প্রবল বর্ষণে মাধবকুণ্ড ইকো পার্কের জলপ্রপাতের পশ্চিম পাহাড়ে ধস হয়। এতে পাহাড়সংলগ্ন পুলিশ পোস্টটি মাটির নিচে চাপা পড়ে। বিদ্যমান শিবমন্দিরটি ধসে সাত-আট ফুট নিচে নেমে আসে। পাশের পর্যটক ছাউনিটি মাটিচাপা পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। পর্যটন রেস্তোরাঁর ১০-১৫ ফুট পূর্ব দিকে যে সিঁড়ি পাহাড়ের দিকে উঠে গেছে, তার পূর্ব পাশের দেয়ালটি জলপ্রপাতে যাওয়ার রাস্তা পর্যন্ত ফাটলসহ দেবে গেছে। জলপ্রপাতের যাওয়ার রাস্তা সামান্য দক্ষিণ দিকে সরে গিয়ে প্রায় দুই ফুট দেবে গেছে। সিঁড়ির পূর্ব পাশের রেলিংয়ে বড় আকারে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এদিকে পরে গত ১৪ জুন মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পাহাড়ের দক্ষিণ অংশের প্রায় ২০ ফুট এলাকার পাথর ধসে পড়ে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা বন বিভাগের জায়গা। কাজটা আমার না। তবু তারা পরামর্শ চেয়েছিল। উপজেলা প্রকৌশলী দুদিন গেছেন। যেটা বুঝেছি, রাস্তা বসে গেছে। যে লেভেলে ধসে গেছে, এটাকে এভাবেই রাখতে হবে। পাহাড়ের ধস জোর করে ঠেকাতে গেলে ক্ষতি হয়। এক দিকে আটকালে আরেক দিকে যায়। পাহাড়কে তার মতো থাকতে দেওয়াই ভালো।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম আবদুল্লাহ আল মামুন গত ২৫ মে জেলা প্রশাসককে একই বিষয়ে একটি চিঠিতে বলেছেন, বর্ষণ ও মাধবপুরের রাস্তার মাটির ক্ষয়প্রবণতা অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় ভূমিধসসহ বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘আমি নিজে ভিজিট করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, এটা সাধারণ কোনো ধস নয়। ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানটি রেস্টিকটেড করা হয়েছে। পুলিশ আছে। বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে বড় আকারের প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করতে হবে।’