মানিকগঞ্জে বাসে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত যাত্রীসেবা
রাজধানী ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৬৫ কিলোমিটার। রাজধানীর কাছের জেলা হলেও এখানে বাসে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত যাত্রীসেবা। এই রুটে বেসরকারি চারটি পরিবহনের বাস চলাচল করে। তবে এদের সেবা নাজুক। আর বিআরটিসির ১৬টি বাস চলাচল করলেও এগুলো একেবারে লক্কড়ঝক্কড়।
মানিকগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলাচলকারী বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই রুটে বেসরকারি ভিলেজ লাইন, পদ্মা লাইন, শুভযাত্রা ও মানিকগঞ্জ এসি লিংক লিমিটেডের বাস চলাচল করে। এর মধ্যে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এসি লিংকের সেবার মান তুলনামূলক ভালো। তবে অন্যগুলোর মান খারাপ। বর্তমানে এসি লিংকের বাসের সংখ্যা মাত্র ১০। এই স্বল্পসংখ্যক বাস দিয়ে যাত্রীদের চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, এখানে পরিবহন সেবার মান নেই বললেই চলে। যাত্রীদের জিম্মি করে রাখছেন পরিবহন মালিকেরা। পদ্মা লাইন, ভিলেজ লাইন ও শুভযাত্রা পরিবহনের বাসগুলো সিটিং সার্ভিস হলেও নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে ৮-১০ স্টপেজে যাত্রী ওঠানামা করে। এ ছাড়া ঘন ঘন আসন হওয়ায় যাত্রীদের গাদাগাদি করে বসতে হয়। ভাড়াও তুলনামূলক বেশি।
এ ছাড়া ঢাকা-আরিচা ও ঢাকা-পাটুরিয়া রুটে বিআরটিসির বিভিন্ন ডিপোর ৩০টি বাস চলাচল করত। বাসগুলো পুরোনো হওয়ায় ১৪টি বিকল হয়ে পড়ে আছে। বর্তমানে ১৬টি বাস এই দুই রুটে চললেও সেগুলোর যাত্রীসেবার মান একেবারেই খারাপ।
বারসিক নামে একটি বেসরকারি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানের জেলার সমন্বয়ক বিমল রায় বলেন, বিআরটিসির যে বাসগুলো চলাচল করছে তার অধিকাংশই ফিটনেসবিহীন। আসন নড়বড়ে। কোনো কোনো বাসের আসন একেবারে ভাঙাচোরা। এ ছাড়া যাত্রী নিয়ে চলাচলের সময় প্রায়ই রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে বাস।
বিআরটিসির মানিকগঞ্জের উথলী ডিপো সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ২০১৩ সালে উথলী ডিপোর জন্য ঢাকা-আরিচা এবং ঢাকা-পাটুরিয়া রুটে বিআরটিসির ৪০টি নতুন দোতলা বাস দেওয়া হয়। ওই বছরের ৪ মে এসব বাস চালুর কথা থাকলেও তা হয়নি। এসব বাসের মধ্যে অধিকাংশ ঢাকার সাভার থেকে মতিঝিল এবং কয়েকটি ঢাকা-বরিশাল পথে চলাচল করছে। বর্তমানে এই ডিপোর অধীনে বিআরটিসির কোনো বাস নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৮ জুন সাটুরিয়া উপজেলায় সেতু উদ্বোধন করতে আসেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সে সময় ঢাকা-আরিচা এবং ঢাকা-পাটুরিয়া রুটে এসব দোতলা বাস নামানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পরিবহন মালিকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ওই সব বাস চালু করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ভিলেজ লাইন ও পদ্মা লাইন পরিবহনের বাসগুলো বিভিন্ন উপজেলা সদর থেকে যাত্রী বোঝাই করে জেলা সদর হয়ে ঢাকায় চলাচল করে। জেলা সদরের যাত্রীদের এসব বাসে প্রায় সময়ই দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। তা ছাড়া সন্ধ্যার পর ঢাকায় যাতায়াতে যাত্রীদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
পরিবহনব্যবস্থার এই নাজুক পরিস্থিতির কারণে ঢাকা-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া পথে রেললাইনের দাবিতে স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছে। স্থানীয় সামাজিক আন্দোলনের কর্মী দীপক কুমার ঘোষ বলেন, ‘ঢাকার কাছে হওয়ার পরও আমরা মানসম্মত পরিবহন সেবায় পিছিয়ে। এ কারণে ঢাকা-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া পথে রেললাইন স্থাপনের দাবি জেলাবাসীর। রেললাইন স্থাপন করা হলে ঢাকায় যাতায়াতে শুধু মানিকগঞ্জবাসীর নয়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদেরও সুবিধা হবে।’
জেলা বাস-মিনিবাস-মাইক্রোবাস-অটো টেম্পো ওনার্স গ্রুপের নেতা জাহিদুল ইসলাম গত ১৯ ডিসেম্বর প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীদের কল্যাণে শুভযাত্রা পরিবহনের প্রায় ৪০টি নতুন বাস নামানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য পরিবহনের নতুন বাস নামানো হবে। সিটিং বাসগুলো ঘন ঘন বিভিন্ন স্টপেজে থামানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া সিটিং বাসগুলোতে যাত্রী ওঠানামা বন্ধ করতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।’
যোগাযোগ করা হলে বিআরটিসির উথলী ডিপোর ব্যবস্থাপক ফারুক হোসেন বলেন, এই ডিপোর অধীনে যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী বিআরটিসির নতুন বাস দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিন-চার মাসের মধ্যে এসব বাস দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। পাটুরিয়া থেকে ঢাকা হয়ে মাওয়া পর্যন্ত এসব বাস যাত্রী পরিবহন করবে।