মাশুল বাড়ানোর মাশুল দিচ্ছে ডাক বিভাগ!

স্বল্প সময়ে বিদেশে পণ্য পাঠানোর এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিসের (ইএমএস) মাশুল সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। এর পাশাপাশি অন্যান্য সেবার মাশুলও বাড়ানো হয়েছে।

মাশুল বাড়লেও ইএমএসের মাধ্যমে বিদেশে যে পণ্য ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছানোর কথা তাতে সময় লাগছে আগের মতো—৭ থেকে ১০ দিন।

এ ছাড়া আগে ইএমএসের মাধ্যমে সর্বনিম্ন ২০ গ্রাম ওজনের কাগজপত্র বা পণ্য পাঠানো যেত। নতুন নিয়মে সর্বনিম্ন ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত একই মাশুল গুনতে হচ্ছে।

একাধিক পোস্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতিরিক্ত মাশুল আরোপের পর ইতিমধ্যেই ইএমএসে পণ্য পাঠানো কমেছে।

গত ৩ জুন থেকে নতুন মাশুল কার্যকর করেছে ডাক বিভাগ। এর আগে ২০০৭ সালের ১ জুলাই ডাক মাশুল বাড়ানো হয়েছিল। এবার সবচেয়ে বেশি মাশুল বাড়ানো হয়েছে ইএমএস সেবায়। এর পাশাপাশি অন্যান্য সেবার মাশুলও বাড়ানো হয়েছে।

আগে যুক্তরাষ্ট্রে ২০ গ্রাম নথি বা পণ্য পাঠাতে খরচ লাগত ৬০৩ টাকা। নতুন হারে মাশুল দিতে হচ্ছে ২ হাজার ৬৮০ টাকা। খরচ বেড়েছে প্রায় সাড়ে চার গুণ। মাশুলের নতুন হার অনুযায়ী ৫০০ গ্রাম পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে খরচ পড়ছে ২ হাজার ৯৮০ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জার্মানভিত্তিক পার্সেল সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ডিএইচএলে ৫০০ গ্রাম পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর খরচ ৩ হাজার ৩০০ টাকা। তারা সাধারণত ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য পৌঁছানোর নিশ্চয়তা দেয় গ্রাহককে।

ইএমএসের আগের মাশুল অনুযায়ী সৌদি আরবে ১ কেজি ওজনের একটি পার্সেল পাঠাতে খরচ লাগত ৯৯৪ টাকা। এখন লাগছে ২ হাজার ৪২৭ টাকা।

ইএমএসের ডাক মাশুল বাড়ানোর প্রভাবে গ্রাহক কমে গেছে বলে জানান ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা। গত রোববার বেলা ১১টায় মিরপুর পোস্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ইএমএসে পণ্য পাঠানোর লাইনটি ফাঁকা। পোস্ট অফিসের চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, মাশুল বাড়ানোর পর থেকে ইএমএসে পণ্য পাঠানোর পরিমাণ অনেক কমে গেছে। পোস্ট অফিসে এসে নতুন মাশুল শুনে গ্রাহক ফিরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

মিরপুর পোস্ট অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ঈদের পর থেকে বলতে গেলে ইএমএস করিই নাই। খরচ এত বাড়াইছে লোকজন কেন আসবে? একটা ২০০ টাকার টি-শার্ট পাঠাতে খরচ লাগে ২ হাজার ৭০০ টাকা। খরচ না কমালে পোস্ট অফিসে ইএমএস পাঠানোই বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।’

খরচ কয়েক গুণ বাড়লেও নির্ধারিত সময়ে পণ্য পৌঁছাতে পারে না ডাক বিভাগ। ফলে গ্রাহকদের অনেকেই বেসরকারি পার্সেল সেবা নিচ্ছেন। মিরপুর এলাকার গ্রাহক সাইফুর রহমান বলেন, মিরপুর পোস্ট অফিস থেকে মে মাসের ২৭ তারিখে যুক্তরাজ্যে ৪ কেজি ২০০ গ্রামের একটি পার্সেল পাঠিয়েছেন। খরচ পড়েছে ২ হাজার ৯৫০ টাকা। ১০ দিন পরে সেটি পৌঁছায়।

সাইফুর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের একই ঠিকানায় ৬ জুন ১ কেজি ৬০০ গ্রামের আরেকটি পার্সেল পাঠাতে মিরপুর পোস্ট অফিসে যাই। খরচ বেড়ে যাওয়ায় সেটি পাঠাতে লাগবে প্রায় ৪ হাজার টাকা। তা ১৫ তারিখের মধ্যে পৌঁছাবে কি না সে নিশ্চয়তা তারা দিতে পারেনি। পরে বেসরকারি মাধ্যমে পাঠিয়েছি।’

মাশুল বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার মণ্ডল বলেন, ১০ বছর পরে ডাক মাশুল বাড়ানো হয়েছে। দ্রব্যমূল্য, বেতন-ভাতা, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। সেগুলো বিবেচনা করে বিশ্ব ডাক সংস্থার নিয়মনীতি অনুসরণ করে মাশুল বাড়ানো হয়েছে। বিমানের ফ্লাইট ও কাস্টমসের সঙ্গে জটিল হিসাবের কারণে ৭ থেকে ৮ দিনের কম সময়ে পার্সেল পৌঁছানো সম্ভব না।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, যে পদ্ধতিতে ডাক বিভাগ তার রাজস্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছে তা হিতে বিপরীত হবে। মানুষ বিকল্প সেবার দিকে ঝুঁকে পড়বে। ডাক বিভাগের স্বার্থেই মাশুল পুনর্বিবেচনা করা উচিত, তাতে ভোক্তাস্বার্থও রক্ষা হবে।