মাস্টার্সেও প্রথম মতিউর

মতিউর রহমান
মতিউর রহমান

মাসে ছয়টি টিউশনি করেন। কখনো ১০টিও করেছেন। ওই টাকায় নিজে পড়েছেন। ছোট দুই বোনকেও পড়াচ্ছেন। মাসে মাসে বাড়িতেও টাকা পাঠাচ্ছেন।
সেই অদম্য মেধাবী মতিউর রহমান এবার সারা দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) শ্রেণীতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছেন। এর আগে তিনি একই কলেজের একই বিভাগে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছিলেন।
গত সোমবার সারা দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। মতিউরের ফলাফলে এবারও আনন্দে আত্মহারা পুরো কলেজ পরিবার। মতিউর কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কামাল্লা ইউনিয়নের আলগী গ্রামের মোশারফ হোসেন ও মমতাজ জাহানের একমাত্র ছেলে। মতিউরের তিন বোনের মধ্যে বড়জনের বিয়ে হয়েছে।
মতিউর তাঁর সাফল্যের গল্পটা বলেন এভাবে। ‘ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটপাগল ছিলাম। স্বপ্ন ছিল বড় ক্রিকেটার হব। ২০০৪ সালে এইচএসসি পাস করলেও ক্রিকেটের জন্য পরের বছর কোথাও ভর্তি হইনি। একদিন হঠাৎ খেলতে গিয়ে বাঁ পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। এরপর আর ক্রিকেট খেলা হয়নি। ২০০৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ভর্তি হই। প্রথম দিন থেকেই মেসে উঠে টিউশনি শুরু করি।’
মতিউর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন এমবিএ করছেন ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিষয়ে। সেখানে চারটি সেমিস্টারে তিনি জিপিএ-৪-এর মধ্যে জিপিএ-৩ দশমিক ৯৪ পেয়ে যুগ্মভাবে প্রথম হয়েছেন। তিনি প্রথম আলো কুমিল্লা বন্ধুসভার শিক্ষা ও গ্রন্থাগারবিষয়ক সম্পাদক। প্রথম আলোর গণিত অলিম্পিয়াড, ভাষা প্রতিযোগ, বিতর্ক উৎসব ও জিপিএ-৫-এর সব সনদই তাঁর লেখা। ২০০৩ সালে সুন্দর হাতের লেখার জন্য মুরাদনগর উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে পুরস্কারও পেয়েছিলেন। মতিউরের এখন স্বপ্ন বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়া।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকার কারণেই মতিউরের এমন সাফল্য এসেছে। গ্রামের সাধারণ একটি ছেলের এমন অসাধারণ ফল আমাদের প্রত্যাশিতই ছিল।’