মায়ের কোলে ফিরতে ব্যাকুল রুমা-মিতু

রুমান রুমা। ছবি: আসাদুজ্জামান
রুমান রুমা। ছবি: আসাদুজ্জামান

নাম রুমান রুমা। বয়স ১৫। বাড়ি গোপালগঞ্জের পরানপুর গ্রামে। বাবার নাম সরোয়ার। মা জেসমিন। তার খালা মিতু রাজধানী শ্যামলীতে থাকেন। প্রায় দুই বছর আগে খালার সঙ্গে দেখা করতে একাই ঢাকায় আসে সে। কিন্তু খালার বাসার ঠিকানা ভুলে গিয়ে নিজেই রমনা থানায় হাজির হয়। সেই থেকে এই কিশোরী আছে গাজীপুরের কোনাবাড়ী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালিকা)।

কেবল রুমা নয় তাঁর মতো একই ঘটনা ঘটেছে মিতু নামের আরেক কিশোরীর জীবনে। তার বয়স ১৪। তার বাবার নাম আবদুল হাকিম। তবে এই কিশোরী কীভাবে ঢাকায় এসেছিল তা জানাতে পারেনি। প্রায় তিন বছর আগে ঢাকার পল্লবী থেকে তাকে উদ্ধার করে পল্লবী থানা-পুলিশ। পরে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে।

আজ সোমবার এই দুই কিশোরীকে ঢাকার শিশু আদালতে হাজির করে পুলিশ।  

জানতে চাইলে শিশু আদালতের সরকারি কৌঁসুলি শাহাবুদ্দিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীর পল্লবী থানা-পুলিশ মিতুকে ২০১৪ সালের ২২ নভেম্বর উদ্ধার করে। আর রুমাকে ২০১৫ সালের ২৮ আগস্ট রমনা মডেল থানা-পুলিশ উদ্ধার করে। এরপর থেকেই তাঁরা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে রয়েছে। এখনো তাঁদের কোনো অভিভাবককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অভিভাবক খুঁজে পাওয়া গেলে তাঁদের পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হবে।

মিতু । ছবি: আসাদুজ্জামান
মিতু । ছবি: আসাদুজ্জামান

শিশু আদালতের পেশকার এনামুল কবীর বলেন, রুমানা নামের মেয়েটিকে আদালত বেসরকারি সংগঠন অপরাজেয় বাংলাদেশ-এর জিম্মায় দিয়েছেন। তাঁরাই এখন অভিভাবকদের খুঁজে বের করে আদালতে হাজির করবেন।

রুমান রুমা আদালত চত্বরে বলেন, সে গ্রামে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত। স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। ঢাকায় আসার পর যখন খালার বাসা হারিয়ে ফেলে তখন নিরুপায় হয়ে থানায় হাজির হয়। তবে মিতু নামের মেয়েটি কীভাবে ঢাকায় আসে সে তথ্য জানাতে পারেনি। কোনাবাড়ীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে একসঙ্গে অনেক দিন থাকায় তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়েছে।

রুমা বলছিল, বাবা-মায়ের জন্য খুব খারাপ লাগে। দেখতে খুব মন চায়। তাঁরা হয়তো পাগলের মতো তাকে খুঁজছে। রুমা যখন কাঁদতে কাঁদতে এমন কথা বলছিল তখন মিতুর চোখেও পানি এসে যায়। রুমা বলে, বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে চায় সে। বাবা-মা থাকার পরেও তাদের কাছে পাচ্ছে না। এর থেকে কষ্টের জীবন আর কী হতে পারে?