মিতু হত্যায় বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ

বাবুল আক্তার, স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডে তাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ করে আসছেন শ্বশুর–শাশুড়ি।
ছবি: সংগৃহীত

পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামে মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলায় তাঁর স্বামী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল সোমবার তাঁকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়েছে। আলোচিত এই মামলায় বাবুল আক্তারের জিজ্ঞাসাবাদের কথা নিশ্চিত করেছেন পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার।

বনজ কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাদী নিজেই চট্টগ্রামে গিয়েছেন।

তবে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলীর ডিটি রোডে পিবিআইয়ের কার্যালয়ে বসে থেকেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বা পিবিআইয়ের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার দেখা পাওয়া যায়নি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কাজ করছি, বেশি কিছু বলতে পারব না।’

এর আগে গতকাল পিবিআইয়ের ঢাকা অফিসে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনকে ডেকে নিয়ে কথা বলেন কর্মকর্তারা। মোশাররফ হোসেন মেয়ে হত্যার জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী করে আসছিলেন।

এদিকে আজ সকালে ঢাকার মেরাদিয়ায় বাবুল আক্তারের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে তাঁর (বাবুল আক্তারের) শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফের সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাবুল আক্তারের বাবা আবদুল ওয়াদুদ তাঁদের ফোন করেছিলেন। বাবুল আক্তারের বর্তমান স্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, বাবুল আক্তার গতকাল থেকে বাড়ি ফেরেননি।

বাবুল আক্তার ও মাহমুদা খানম মিতু
ছবি: সংগৃহীত

আবদুল ওয়াদুদের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বাবুল আক্তারের ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁর ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।

২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। ওই সময় পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। চট্টগ্রামে ফিরে তিনি পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় তিনি বলেন, তাঁর জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রী আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকতে পারেন। তবে সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় মিতু হত্যার তদন্ত নতুন মোড় নেয়।

বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ অব্যাহতভাবে হত্যাকাণ্ডের জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী করে থাকেন। তবে পুলিশের তরফ থেকে কখনোই এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। গোয়েন্দা বিভাগ মাত্র দুবার বাদী বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বাদীর দিক থেকেও হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে কোনো তাগাদা ছিল না।

শুরু থেকে চট্টগ্রামের ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্ত করে। তারা প্রায় তিন বছর তদন্ত করেও অভিযোগপত্র দিতে ব্যর্থ হয়। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়।

মিতু হত্যার পর বাবুল আক্তার প্রথমে ঢাকার মেরাদিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে উঠেছিলেন। কিছু দিনের মাথায় ২০১৬ সালের ২৪ জুন বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে এনে প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

পরে পুলিশ জানায়, বাবুল চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। পরে বাবুল আক্তার দাবি করেন, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি। পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য ৯ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে তিনি আবার আবেদন করেন। ৬ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বাবুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হলো।’

বাবুল আক্তার পুলিশের চাকরি ছেড়ে প্রথমে আদ–দ্বীন হাসপাতালে যোগ দেন। সম্প্রতি তিনি চীন থেকে পানি পরিশোধনকারী যন্ত্র এনে বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছেন বলে তাঁর পরিচিতজনেরা জানিয়েছেন।