মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতায় মাস খানেক ধরে পানি নেই
গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা—কখন পানি আসবে। অবশেষে পানি আসে, কিন্তু পাত্র ভরার আগেই কলে পানির ধারা সরু হয়ে আসে। তারপর এক ফোঁটা, দু ফোঁটা করে পড়তে পড়তে থেমে যায়।
মিরপুর সেনপাড়া পর্বতার ১২৬/২ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা শৈবাল এমনই বর্ণনা দিয়ে পানির কষ্টের কথা জানাচ্ছিলেন। আল-হেলাল হাসপাতালের বিপরীত দিকে সেনপাড়া-পর্বতার কর্ণফুলী গলি এলাকার বেশির ভাগ বাড়িতে এখন এমন অবস্থা। একে তীব্র গরম, তার ওপর পানির অভাবে জীবনযাত্রার কষ্ট অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
গতকাল সোমবার গিয়ে জানা যায়, এক মাস ধরে এই এলাকায় ওয়াসার পানির স্বাভাবিক সরবরাহ নেই। এলাকাবাসী বলেন, বছরের পর বছর এই সমস্যা চলছে। অথচ ওয়াসার কার্যকর পদক্ষেপ নেই। পানির গাড়ির জন্য আবেদন জানালে পানি পেতে দুদিন-তিন দিন সময় লেগে যায়।
সেনপাড়া পর্বতাসহ এলাকার কিছু বাসিন্দা অভিযোগ করেন, কারও কারও বাড়িতে ওয়াসার পানির গাড়ি আসতে দেখা যায়। গাড়ির লোকদের কাছে সহজে পানি পাওয়ার উপায় জানতে চাইলে তাঁরা গাড়িপিছু পানির বাড়তি দাম চান। অনেক গলিতে পানির গাড়ি যায় না। সে ক্ষেত্রে পাইপ দিয়ে পানি সরবরাহের নিয়ম থাকলেও তা করা হয় না। এলাকাবাসী বলেন, পানির এমন কষ্ট চলতে থাকলে এলাকায় যেকোনো সময় বিক্ষুব্ধ মানুষ রাস্তায় নেমে আসতে পারে।
কাজীপাড়া, মণিপুর, মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ২০ নম্বর সড়ক, ১৩ নম্বর সেকশনের ৪ নম্বর সড়ক, ১৪ নম্বর রোডের রোটারি স্কুল-সংলগ্ন এলাকা, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর—এসব এলাকাতেও পানির সমস্যা বেড়েছে বলে জানান বাসিন্দারা।
শুধু মিরপুর নয়, বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে নগরীর ওয়ারী, গোপীবাগ, মুগদাপাড়া, মানিকনগর, গোলাপবাগ, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, নারিন্দা, তাঁতীবাজার, পানিটোলা, রাজার দেউড়ি, শেখেরটেকসহ মোহাম্মদপুরের কিছু স্থানে পানির সংকট চলছে। কোথাও কোথাও পানিতে দুর্গন্ধ।
গরম বেড়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ-বিভ্রাট ছাড়াও প্রধানত পানির স্তর অতিরিক্ত মাত্রায় নেমে যাওয়ার কারণে মিরপুরে রাজধানীর অন্য অংশের তুলনায় পানির সমস্যা বেশি হচ্ছে বলে ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তারা দাবি করেন। মিরপুরে প্রতিবছর কমপক্ষে তিন মিটার করে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এ কারণে বর্তমানে মিরপুর এলাকায় প্রায় অর্ধেক গভীর নলকূপের নির্ধারিত উত্তোলনক্ষমতা এক-তৃতীয়াংশে নেমে গেছে। এ ছাড়া অবৈধ সংযোগ এবং চুরির কারণে পানির সমস্যা বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে বৈধ গ্রাহকদের ওপর। বৃহত্তর মিরপুরে ১০০টির মতো গভীর নলকূপ রয়েছে।
ওই কর্মকর্তারা বলেন, একটি গভীর নলকূপ বসানোর পর প্রতি মিনিটে উত্তোলনক্ষমতা তিন হাজার লিটার পর্যন্ত থাকে। কিন্তু মিরপুরের ক্ষেত্রে পরের বছর দুই হাজার, তারপরের বছর এক হাজার লিটার বা তারও নিচে নেমে আসে। তারপরও ওয়াসা চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এদিকে ওয়াসার একাধিক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিরপুর এলাকায় পানির সমস্যা সামাল দিতে আসলেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃহত্তর মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পানির সংকট বেড়েছে। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান অবশ্য বলেন, মিরপুরসহ নগরীর কিছু এলাকার রাস্তার পকেট এলাকায় পানির সমস্যা থাকতে পারে।
ওয়াসার হিসাবে রাজধানীতে দৈনিক পানির চাহিদা ২২৫ থেকে ২৩০ কোটি লিটার। এর মধ্যে মিরপুর এলাকার চাহিদা কমপক্ষে ৪০ কোটি লিটার। তবে গত কয়েক দিনে ৩০ কোটি লিটারের বেশি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। সেই পানি চুরিও হচ্ছে।