মিল্ক ভিটা কমিয়ে দিয়েছে দুধ সংগ্রহ, দিশেহারা খামারিরা

বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন (মিল্ক ভিটা) সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলা থেকে তাদের তরল দুধ সংগ্রহ কার্যক্রমে কোটা পদ্ধতি চালু করেছে। একই সঙ্গে এ দুটি জেলার চারটি কেন্দ্র থেকে দুধ সংগ্রহ বন্ধ রেখেছে মিল্ক ভিটা। ফলে উৎপাদিত দুধ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা। কম দামে তাঁরা এ দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
মিল্ক ভিটা সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলায় মিল্ক ভিটার আওতায় ৭১৩টি প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি রয়েছে। এসব সমিতিতে প্রতিদিন আড়াই লাখ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়ে থাকে। এ ছাড়া বাইরে থেকেও মিল্ক ভিটা একই পরিমাণ দুধ সংগ্রহ করে থাকে। বাঘাবাড়ী কারখানায় প্রতিদিন পৌনে ২ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এই এলাকার বাইরে উল্লাপাড়ার লাহিড়ী মোহনপুর, শাহজাদপুর পূর্বাঞ্চল, পাবনার ভাঙ্গুড়া ও ঈশ্বরদী দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র থেকে আরও প্রায় ৫০ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ হয়ে থাকে। বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় তরল দুধ কম বিক্রি হচ্ছে বলে মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ বাঘাবাড়ী কারখানা ছাড়া দুধ সংগ্রহের বাকি চার কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে।
খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ অর্ধেকে নেমে আসায় বাধ্য হয়ে তাঁরা কম দামে বাইরে দুধ বিক্রি করছেন।
স্থানীয় খামারিদের সূত্রে জানা গেছে, সমবায় প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটাসহ বেসরকারি সংস্থা প্রাণ, আকিজ, আফতাব, ব্র্যাক (আড়ং), এ্যামো মিল্ক, কোয়ালিটিসহ অন্যান্য দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিও তাঁদের কাছ থেকে দুধ কিনে থাকে। এসব সংস্থা দুধ ক্রয় বন্ধ না রাখলেও হঠাৎ করে মিল্ক ভিটার দুধ সংগ্রহ কার্যক্রম অর্ধেকে নেমে আসায় খামারিরা বিপাকে পড়েছেন।
মিল্ক ভিটার আওতায় রেশমবাড়ী প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুস সামাদ ফকির বলেন, সমিতির সদস্যরা প্রতিদিন সকালে ২ হাজার ৫০০ লিটার দুধ উৎপাদন করে থাকেন। এখন মিল্ক ভিটা তাঁদের কাছ থেকে মাত্র ৮৮০ লিটার দুধ সংগ্রহ করছে। এ ছাড়া সপ্তাহে দুদিন দুধ সংগ্রহ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হচ্ছে।
খামারিদের সূত্রে জানা যায়, মিল্ক ভিটা থেকে প্রতি লিটার দুধের দাম গড়ে ৪০-৪২ টাকা পাওয়া যায়। বাকি দুগ্ধ লিটারপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে বাইরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সমিতির সভাপতি। এতে প্রতিদিন লিটারপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে। একই ধরনের কথা বলেন বাড়াবিল সমিতির নেতা আতাউর রহমান ও মাদলা সমিতির রফিকুল ইসলাম।
বাঘাবাড়ী মিল্ক ভিটা কারখানা সমিতির ব্যবস্থাপক সাইদুল ইসলাম বলেন, সংগ্রহ করা তরল দুধের বেশির ভাগই ঢাকায় চলে যায়। ঢাকায় মিল্ক ভিটার প্রধান কারখানা এখন দুধ নেওয়া কমিয়ে দেওয়ায় বাধ্য হয়ে স্থানীয় পর্যায়ে দুধ সংগ্রহে কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
বাঘাবাড়ী কারখানার দায়িত্বে থাকা উপমহাব্যবস্থাপক মোশারফ হোসেন বলেন, প্রতিদিন দুই বেলা শুধু বাঘাবাড়ী থেকে গড়ে ১ লাখ ৬০ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ হয়ে থাকে। ঢাকায় চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন প্রতিদিন ৭০ হাজার লিটার দুধ কম সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাই পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার চারটি সংগ্রহ কেন্দ্র আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।
মোশারফ হোসেন আরও বলেন, এ ছাড়া প্রতিদিন ৮৬ হাজার লিটার দুধ পাউডার করা হচ্ছে। ঢাকায় দুধের চাহিদা বাড়লে বন্ধ হওয়া কেন্দ্রগুলো চালুসহ কোটা প্রথা তুলে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।