মুক্তিযুদ্ধের অস্ত্র বেচতে চায় সরকার

  • আট শ্রেণি মিলিয়ে মোট অস্ত্র ২৭,৬৬২টি, সবচেয়ে বেশি আছে রাইফেল।

  • ছয় ধরনের অস্ত্র সরকারের কেনা নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগ্রহ করা—বিওএফ।

  • যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ও সুইজারল্যান্ডের একটি কোম্পানি পুরোনো অস্ত্র কিনতে আগ্রহী।

  • আগ্নেয়াস্ত্রগুলো রপ্তানির চেষ্টা চলছে ২০১৬ সাল থেকে।

  • প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে অস্ত্রগুলোর যথেষ্ট মূল্য আছে—বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত হয়েছে, এমন আগ্নেয়াস্ত্রগুলো সরকার বেচে দিতে চায়। সরকারের যুক্তি হচ্ছে এগুলো পুরোনো, অপ্রচলিত এবং যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে অকার্যকর। ফলে রাখার কোনো দরকার নেই। প্রাচীন নিদর্শন বা স্মৃতিচিহ্ন (অ্যান্টিক সুভ্যেনির) হিসেবে অস্ত্রগুলো কিনে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ও সুইজারল্যান্ডের একটি অস্ত্র আমদানিকারক কোম্পানি।

এদিকে পুরোনোর পাশাপাশি নতুন অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানিরও উদ্যোগ রয়েছে সরকারের। প্রথম উদ্যোগটি নেওয়া হয় ১৬ বছর আগে। এ বিষয় নিয়ে আবারও নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

রপ্তানি করতে চাওয়া পুরোনো অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যে তৈরি ০.৩০৩ রাইফেল নম্বর-৪ এমকে-১; ৯ এমএম স্টেন এসএমজি এমকে-২ ও সিএম ৯ এমএম স্টেন এ১; ভারতে তৈরি ৭.৬২ এমএম এসটিআর এল১ এ১ /১ এ ১ ও রাইফেল জি-৩; পাকিস্তানে তৈরি ৪৪ এমএম হ্যান্ড লঞ্চার এম-৫৭; যুক্তরাষ্ট্র/রাশিয়া/জাপানে তৈরি পিস্তল ও রিভলবার ৭০০ এবং জার্মানি/যুক্তরাজ্য/ভারতে তৈরি এলএমজি এইচকে ১১ এ১ সিএএল ৭.৬২ * ৫১।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র রপ্তানির বিষয়ে আমার কাছে কোনো ফাইল আসেনি। এলে দেখা যাবে কী করা যায়।’ বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ওবায়দুল আজম বলেন, ‘এ নিয়ে কাজ চলছে। চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি এখনো
টিপু মুনশি, বাণিজ্যমন্ত্রী

আট শ্রেণি মিলিয়ে অস্ত্রের মোট সংখ্যা ২৭ হাজার ৬৬২। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৪ হাজার ৪৫৪টি হচ্ছে ০.৩০৩ রাইফেল নম্বর-৪ এমকে-১। আর সবচেয়ে কম ১১৫টি হচ্ছে ৪৪ এমএম হ্যান্ড লঞ্চার এম-৫৭।

বিদ্যমান রপ্তানি নীতি ২০১৮-২১ অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে নতুন, পুরোনো বা অচল—কোনো ধরনের অস্ত্র রপ্তানিরই সুযোগ নেই। পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সব সময় ‘অস্ত্র ছাড়া সবকিছু’ (এভরিথিং বাট আর্মস) নীতি অনুসরণ করে আসছে।

তারপরও এগুলো রপ্তানির একটি পথ বের করার চেষ্টা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা (বিওএফ) ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মিলে এ নিয়ে কাজ করছে কয়েক বছর ধরেই।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র রপ্তানির বিষয়ে আমার কাছে কোনো ফাইল আসেনি। এলে দেখা যাবে কী করা যায়।’ বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ওবায়দুল আজম বলেন, ‘এ নিয়ে কাজ চলছে। চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি এখনো।’

আগ্নেয়াস্ত্রগুলো প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে বিদেশি কোম্পানির কাছে সরকার বেচতে চায়। পাশাপাশি আলোচনা আছে নতুন অস্ত্র রপ্তানিরও।

উদ্যোগ সমরাস্ত্র কারখানার

এ অস্ত্রগুলো রপ্তানির মূল উদ্যোগ বিওএফের। গাজীপুরের জয়দেবপুরে অবস্থিত বিওএফের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু ১৯৭০ সালে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ পরিচালিত বিওএফ মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ১৯৮২ সালে আধুনিকায়ন হয় এর। বর্তমানে পাঁচটি কারখানা পরিচালনা করছে বিওএফ এবং চীন, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, জার্মানি ও ইতালির প্রযুক্তি সহায়তায় এটি এখন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সংস্থা।

কাগজপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিওএফ পুরোনো আগ্নেয়াস্ত্র রপ্তানির দিকে এগোয় ২০১৬ সাল থেকে। একই সঙ্গে নতুন অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানির চেষ্টাও চলতে থাকে। রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হলে কী পরিমাণ রপ্তানি আয় হবে, তার উল্লেখ নেই কোনো প্রস্তাবে। পুরো বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটু রক্ষণশীল বলে জানা গেছে।

অপ্রচলিত পুরোনো আগ্নেয়াস্ত্র রপ্তানি নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সর্বশেষ গত ২২ জুলাই পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য একটি চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। চিঠিতে বলা হয়, অস্ত্রগুলো বাংলাদেশের কেনা নয়। এগুলো মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা ও বিভিন্ন বাহিনীর ফেলে যাওয়া, যা বিভিন্ন জায়গা থেকে পরিত্যক্ত হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। এসব আগ্নেয়াস্ত্র বর্তমানে কার্যকর নয়, এমনকি যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করারও উপযুক্ত নয়। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ জানিয়েছে, আট প্রকার অস্ত্রের মধ্যে দুই প্রকার অর্থাৎ এলএমজি এইচকে ১১ এ১ সিএএল ৭.৬২ * ৫১ এবং রাইফেল জি-৩ রপ্তানি করা যাবে না।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এর আগে ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর ‘বিওএফে উৎপাদিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং মজুত অপ্রচলিত পুরোনো আগ্নেয়াস্ত্র রপ্তানিকরণ’ শীর্ষক একটি চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। এ চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারকেও (পিএসও)।

এ নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পুরোনো আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর ঐতিহাসিক মূল্য আছে। সুতরাং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে গভীর বিচার-বিশ্লেষণের দরকার। তবে নতুন অস্ত্র রপ্তানির চিন্তা করাই যায়। এতে বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়বে।

প্রাচীন নিদর্শন রপ্তানির উদ্যোগ

মজুত অপ্রচলিত আগ্নেয়াস্ত্র রপ্তানির অনুমোদন চেয়ে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে চিঠি দিয়েছিল সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। এ চিঠির পটভূমি হিসেবে কাজ করে একই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা সেনানিবাসে প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিশ্বের অন্য দেশ পুরোনো আগ্নেয়াস্ত্র রপ্তানি করে কি না, তা অনুসন্ধান করে দেখবে বিওএফ।

চিঠিতে বলা হয়, বিওএফ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে জানিয়েছে, পুরোনো অস্ত্র রপ্তানির প্রক্রিয়া বিশ্বে প্রচলিত রয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আই ও ইনকরপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কোম্পানিটি জানায়, রোমানিয়া ও পোল্যান্ড থেকে পুরোনো আগ্নেয়াস্ত্র আমদানি করে তারা। বাংলাদেশ সরকার যদি এগুলো ধ্বংস না করে রপ্তানি করতে চায়, তাহলে আই ও ইনকরপোরেশন তা কিনতে আগ্রহী।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ভিন্ন এক চিঠিতে পুরোনো অস্ত্রের বিষয়ে বিওএফ আবার জানায়, পুরোনো আগ্নেয়াস্ত্রগুলো প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে রপ্তানি করা যেতে পারে।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদেশি কোম্পানিগুলো পুরোনো আগ্নেয়াস্ত্র স্মারক হিসেবে কিনে নিতে চায়, কিন্তু এগুলো তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক। স্মারক হিসেবে তো এগুলো আমরাই রাখব। দেশে যতগুলো জাদুঘর আছে এবং ভবিষ্যতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আরও যত জাদুঘর হবে, সবগুলোতেই পুরোনো আগ্নেয়াস্ত্রগুলো রাখার কথা চিন্তা করতে হবে। এরপরও যদি বাকি থেকে যায়, তখন সেগুলো রপ্তানি করা যেতে পারে।’

তবে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নতুন অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানির চিন্তা করা যেতে পারে শুধু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, কোম্পানি পর্যায়ে নয়। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হবে।

রপ্তানি নীতি সংশোধন দরকার

যেকোনো অস্ত্র রপ্তানি করতে গেলেই বিদ্যমান রপ্তানি নীতি আদেশ সংশোধন করতে হবে। এই সংশোধনের জন্য দরকার পড়বে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির নীতিগত অনুমোদনের।

রপ্তানি নীতির তৃতীয় অধ্যায়ে ‘রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার ক্ষমতা’ শিরোনামের ধারায় বলা হয়েছে, ‘উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে সরকার পরিশিষ্ট-১-এ বর্ণিত কোনো নিষিদ্ধ পণ্য রপ্তানির অনুমতি দিতে পারবে। এ ছাড়া সরকার বিশেষ বিবেচনায় কোনো পণ্য রপ্তানি, রপ্তানি-কাম-আমদানি অথবা পুনঃ রপ্তানির অনুমতিপত্র জারি করতে পারবে।’

বিদ্যমান রপ্তানি নীতি আদেশের পরিশিষ্ট-১-এ রপ্তানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকা দেওয়া রয়েছে, তাতে ‘আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও সংশ্লিষ্ট উপকরণ’ রপ্তানি নিষিদ্ধ। পরিশিষ্ট ২-এ শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানি পণ্যের যে তালিকা দেওয়া রয়েছে, সেখানেও নেই অস্ত্র ও গোলাবারুদ।

সূত্রগুলো জানায়, এ দফায় রপ্তানি নীতি সংশোধনের উদ্যোগ এখনো নেয়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল এ নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখেছে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কোনো চুক্তিতে অস্ত্র রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা নেই।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পুরোনো অস্ত্রের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে একটি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হবে। তাতে উল্লেখ থাকবে যে অস্ত্রগুলো ঐতিহাসিক ও পুরাতাত্ত্বিক দুর্লভ বস্তু এবং এগুলোর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জড়িত।

তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুরোনো আগ্নেয়াস্ত্র রপ্তানি প্রসঙ্গে একটি চিঠি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ‘পুরোনো আগ্নেয়াস্ত্রগুলো যুদ্ধের জন্য অযোগ্য হলেও প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে এগুলোর যথেষ্ট মূল্য আছে।’

মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রগুলো রপ্তানি করার উদ্যোগের তথ্যটি জেনে ভালো লাগল না। কারণ, এগুলো জাতীয় সম্পদ। তবে নতুন অস্ত্র বন্ধুরাষ্ট্র নেপাল, ভুটান—এসব দেশে রপ্তানি করা যেতে পারে। যদিও অস্ত্র ও গোলাবারুদ উৎপাদনে আমরা কতটা আধুনিক হতে পেরেছি, তার ওপর পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে
মাহবুবুর রহমান, সাবেক সেনাপ্রধান

নতুন অস্ত্র রপ্তানির চিন্তা

পুরোনোর পাশাপাশি নতুন অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানির উদ্যোগ বিষয়ে কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ২০০৪ সালের ১৭ আগস্ট জাতীয় সংসদের তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির একাদশ বৈঠকে বিওএফ উৎপাদিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানির পক্ষে মত দেওয়া হয়।

এরপর ৯ বছর বিষয়টি নিয়ে কোনো নড়াচড়া হয়নি। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ নতুন করে ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানির ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়। এরপর ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি রপ্তানির বিষয়ে মতামত জানতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বিওএফ। একই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি সেনা সদর নতুন অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানির অনুমোদন দেয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বিওএফ জানায়, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সমরাস্ত্র উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে বিওএফ তার উৎপাদন পরিসর অনেক সম্প্রসারিত করেছে। ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক মান সংস্থার (আইএসও) সনদ পেয়েছে বিওএফ। অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া গেলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে, এ বিষয়ে পরনির্ভরশীলতা কমবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

রপ্তানি নীতি সংশোধনের জন্য ২০১৪ সালে একটি খসড়াও তৈরি করেছিল তখনকার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ জানতে চাইলে তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গত ২৪ সেপ্টেম্বর মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, ওই সময়ের ঘটনা নিয়ে এখন তিনি মন্তব্য করতে চান না।

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান অস্ত্র-গোলাবারুদ রপ্তানি করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানির অনুমোদন দিলে বাংলাদেশ হবে সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে তৃতীয় অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ।

সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রগুলো রপ্তানি করার উদ্যোগের তথ্যটি জেনে ভালো লাগল না। কারণ, এগুলো জাতীয় সম্পদ। তবে নতুন অস্ত্র বন্ধুরাষ্ট্র নেপাল, ভুটান—এসব দেশে রপ্তানি করা যেতে পারে। যদিও অস্ত্র ও গোলাবারুদ উৎপাদনে আমরা কতটা আধুনিক হতে পেরেছি, তার ওপর পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে।’